ড. কামাল হোসেন বাংলাদেশের একজন প্রবীণ রাজনীতিবীদ। এছাড়াও তিনি একজন আইনজীবী ও মুক্তিযোদ্ধা। ড. কামাল হোসেন আরো একটি পরিচিতি আছে আর সেটা হলো তিনি গনফোরামের সভাপতি। স্বাধীনতার সময় তার অপরিসীম অবদান বাংলার মাটিতে চির অম্লান হয়ে থাকবে। সম্প্রতি তিনি তার এক বক্তব্যে বলেছেন বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন নয় হবে বানানো খেলা।
গণফোরাম সভাপতি দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক মন্দার জন্য কুশাসন, দুর্নীতিবাজদের প্রভাব ও বিদেশে অর্থপাচারকে দায়ী করেছেন। কামাল হোসেন। সংবিধান প্রণেতাদের একজন বলেন, রাজনীতি এখন অসাধু ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতার পরিবর্তন জরুরি বলে মনে করেন তিনি। তবে বিদ্যমান নির্বাচনী ব্যবস্থায় সুষ্ঠু নির্বাচন আশা করা যায় না বলে মন্তব্য করেন খ্যাতিমান এই আইনজীবী। মানব মাটিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ড. কামাল হোসেন এসব কথা বলেন। বর্তমান সরকারের অধীনে আসন্ন নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি মনে করি এবং সবাই মনে করে এটা নির্বাচন হবে না, এটা একটা ভুয়া খেলা হবে। দেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভার একজন সদস্য। তিনি বলেন, সবাইকে নির্ভয়ে ভোট দিতে হবে। এটি সম্পূর্ণরূপে সঠিকভাবে গণনা করা হয়। এখন পর্যন্ত আমরা সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারিনি।
এতে আমাদের গণতন্ত্র পঙ্গু হয়ে গেছে। রাজনীতিতে তার ব্যর্থতা-সফলতা নিয়ে ড. কামাল বলেন, এটাকে আমি ব্যর্থতা বলব না, এটা সফলতা।
আমরা নীতি অনুসরণ করে চলমান রাজনীতি করতে পারিনি। কালো টাকা ব্যবহার করে, পেশিশক্তি ব্যবহার করে, জোর করে ভোট দিয়ে ক্ষমতা দখল, আমরা তা করিনি। যারা এসব করছেন তারা বর্তমান রাজনীতিতে আছেন। রাজনীতিতে ভালো মানুষের অভাব আছে। ভালো মানুষ পেশিশক্তি, কালো টাকার আশ্রয় নেবে না। যারা এসবের আশ্রয় নেয় তারাই মাঠ দখল করে। পেশিশক্তির কারণে রাজনীতি থেকে মানুষের আস্থা নষ্ট হচ্ছে। ছাত্র সমাজ ছিল ভালোর জন্য একটি শক্তি যারা সুস্থ রাজনীতির চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করেছিল। কিন্তু ছাত্ররা এখন রাজনীতি থেকে দূরে সরে গেছে। রাজনীতি এখন অসাধু ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। কালো টাকা উপার্জনের জন্য ব্যবসায়ীরা সরাসরি রাজনীতিকে ব্যবহার করে। দেশের বাইরে পাচার হয়ে যাওয়া টাকা ফেরত আনা সম্ভব হবে কি না জানতে চাইলে কামাল হোসেন বলেন, বলা যায় তা ফেরত আনা সম্ভব। কিন্তু এটা কখনই হয় না। কারণ যারা টাকা নিয়েছে তারা তা রক্ষায় বেশ তৎপর। পাচারকৃত অর্থ উদ্ধার করা প্রায় অসম্ভব। গত জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রসঙ্গে কামাল হোসেন বলেন, আমি মনে করি, এটলিস্ট নির্বাচন না করে নির্বাচন করলে জনগণ মাঠে থাকে।
তারা রাজনীতি থেকে নির্বাসিত নয়। যদি তারাও সরে যায়, তাহলে মাঠটি সম্পূর্ণভাবে দুই নম্বরে ভরে যাবে। যতটা সম্ভব নির্বাচনে আসা উচিত। তবে আমি এটাও মনে করি যে, এই নির্বাচন দিয়ে তথাকথিত নির্বাচন করা খুব একটা সম্ভব নয়। বিএনপি ও সমমনা দলগুলো বলছে, নির্দলীয় সরকার না হলে তারা নির্বাচনে যাবে না। কামাল বলেন, তিক্ত অভিজ্ঞতার আলোকে তারা এসব কথা বলছেন। আমি মনে করি পরিস্থিতি বোঝা যাবে। পরিস্থিতি যদি এমন হয় যে মানুষে মানুষ করা যায় তাহলে হয়তো সবাই মিলে চেষ্টা করা উচিত। বর্তমান নির্বাচন কমিশন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই কমিশন নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে পারে না। এ ধরনের ভূমিকা রাখার মতো শক্তি ও মানসিকতা নেই এমন লোকদের কমিশনে নিয়োগ দেওয়া হয়। এই ধরনের ব্যক্তিরা দায়িত্বে আসার পরে খুব কার্যকর, নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করবেন বলে আশা করাও অবাস্তব। তিনি বলেন, বর্তমান অর্থনৈতিক মন্দার এক নম্বর কারণ হলো দুঃশাসন, দুর্নীতিবাজদের শাসন। দেশে সুশাসন না থাকলে, সত্যিকারের গণতন্ত্র না থাকলে, জনগণের নিয়ন্ত্রণে রাষ্ট্রক্ষমতা না থাকলে যা হয়, আমরা তার শিকার। এ সংকট উত্তরণে জনগণের ঐক্য ও কালো টাকার খেলা বন্ধ করতে হবে। শ্রীলঙ্কার ভাগ্যে যেন আমরা কষ্ট না পাই। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে আন্তর্জাতিক চাপ কতটুকু ভূমিকা রাখে? কামাল বলেন, আন্তর্জাতিক চাপ কিছুটা ভূমিকা রাখতে পারে।
কিন্তু নির্বাচন সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ করতে তারা এগিয়ে আসে না। ড.কামাল হোসেন বলেন, এই বাংলাদেশকে না বদলালে, সুষ্ঠু রাজনীতির মাধ্যমে দেশে সৎ লোকদের নিয়ন্ত্রণ না আনলে আমাদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার। তিনি বলেন, আমাদের দেশের মানুষ উৎপাদন করে দেশকে দিতে চায়, পরিশ্রম করে যারা বিদেশে কাজ করে তারা সবাই টাকা পাঠায়। তারা কোটি কোটি টাকা দেশে পাঠায়। অর্থাৎ দেশের মানুষের দেশপ্রেমের মধ্য দিয়ে আমরা বেঁচে আছি এবং টিকে থাকব, ইনশাআল্লাহ। তিনি বলেন, ওই সৎ মানুষটিকে আরও সংগঠিত করতে। দেশে জনগণের রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করা। সেই রাজনীতির মাধ্যমে দেশে কার্যকর গণতন্ত্র অব্যাহত রাখা। আমি নতুন প্রজন্মকে বলতে চাই যে আমাদের দেশের গৌরবময় অতীত থেকে তাদের অনুপ্রাণিত হওয়া উচিত। আমরা দেখেছি কিভাবে আমরা সবাই সারা জীবন অত্যাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য সফলভাবে যুদ্ধ করেছেন। নতুন প্রজন্মকে সুস্থ ছাত্র রাজনীতির ডাক দেব। ষাটের দশকে যে রাজনীতির মাধ্যমে এত বড় অর্জন হয়েছিল, এদেশের গণতন্ত্র ও সংবিধান সবই ছাত্র সমাজের আন্দোলনের ফসল।
প্রসঙ্গত, একটি দেশ সবদিকে পরিপূর্ণভাবে সমৃদ্ধির জন্য দরকার একজন সৎ ও বিচক্ষণ সরকার। আর তেমন সরকার যদি দেশে না আসতে পারে তাহলে সেই দেশ ধীরে ধীরে ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যায় যেটা বিশ্বের অনেক দেশেই দেখা গিয়েছে।