বন্যায় সিলেট, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনায় ব্যাপক ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। পানি বন্দি হয়েছে পড়েছে লক্ষ লক্ষ মানুষ। খাদ্য, বিশুদ্ধ পানিসহ বিভিন্ন জিনিসের সংকটে পড়েছে বন্যা কবলিত মানুষ। এমন অবস্থায় উদ্ধার অভিযোগ চালিয়ে যাচ্ছে প্রশাসন তবে পানির চাপের কারনে উদ্ধার অভিযান ব্যাহত হচ্ছে বলে জানা গেছে। এবার বন্যা দুর্গতদের সাহায্যের পরিবর্তে বিএনপির পক্ষ থেকে শুধু বক্তব্য দেওয়া হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।
নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ ও সিলেটের বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন শেষে সিলেট সার্কিট হাউসে স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তা ও দলীয় নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার দুপুরে সিলেট সার্কিট হাউসে বন্যা পরিস্থিতি পর্যালোচনা ও বন্যা দুর্গতদের পুনর্বাসনের বিষয়ে ওই মতবিনিময় সভায় বন্যায় বিএনপি নেতাদের কাছ থেকে কী পেয়েছেন- মেয়র আরিফের কাছে তা জানতে চান প্রধানমন্ত্রী।
মতবিনিময়ের সময় সিলেট ও সুনামগঞ্জ আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রতিযোগিতা লেগে যায়। এদিকে সমাবেশে বক্তব্য দিতে সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিএসআইসি) মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য মেয়র আরিফকে উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “তার দলের কেউই (বন্যা দুর্গতদের সাহায্যে) এগিয়ে আসেনি। তার দলের সবাই ঘরে বইস্যা ফাটাইয়া ফেলতেছে। উনিই (মেয়র আরিফ) বলুক তার দলের কাছ থেকে কী পাইছেন, আমরা শুনি।’
বন্যা কবলিত এলাকায় প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতি প্রসঙ্গে সিসিক মেয়র আরিফ বলেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনার উপস্থিতির পর থেকে এখানকার মানুষ আশার আলো দেখেছে। তারা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পেরেছে। খবরটি পাওয়ার পর থেকেই। আপনার আগমনে মানুষ আশা করছে প্রধানমন্ত্রী এখন আসছেন বলে ব্যবস্থা নেবেন।’নগরীর সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি তুলে ধরার পাশাপাশি মেয়র অসাধু ব্যবসায়ীদের শুকনো খাবারের মূল্যবৃদ্ধি ঠেকানো ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা ও বরাদ্দ বৃদ্ধির অনুরোধ জানান।
সিলেট নগরীর ৮০ শতাংশ বন্যাকবলিত এলাকা উল্লেখ করে সিলেটের মেয়র আরিফ প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে আরও বলেন, এ জন্য নগরীকে রক্ষা বাঁধ দরকার। সুরমা নদীর তীরে যেসব এলাকায় উঁচু হাঁটা পথ নির্মাণ করা হয়েছে সেগুলো দিয়ে পানি প্রবেশ করতে পারছে না। তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে ১৫ কিলোমিটার এলাকায় শহর রক্ষা বাঁধ নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেওয়ার দাবি জানান।
চলমান বন্যায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন উল্লেখ করে মেয়র বলেন, আমাদের সিটি করপোরেশনের সকল কাউন্সিলর বন্যার্তদের জন্য প্রতিটি ওয়ার্ডে কাজ করেছেন। আমরা ৮০টি সেন্টার খুলেছি।
তিন জেলার বন্যা পরিস্থিতি দেখতে মঙ্গলবার সকাল ৮টায় হেলিকপ্টারযোগে তেজগাঁওয়ের পুরাতন বিমানবন্দর ত্যাগ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী একটি লো-ফ্লাইং মোড হেলিকপ্টার থেকে বন্যা পরিস্থিতি পরিদর্শন শেষে সকাল ১০টার দিকে সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান। সেখানে তিনি প্রায় আড়াই ঘণ্টা সময় কাটান সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে মতবিনিময় ও বন্যা মোকাবেলায় বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দেন। দুপুর ২টার দিকে হেলিকপ্টারযোগে ঢাকায় ফেরার পথে প্রধানমন্ত্রী হযরত শাহজালালের (রহ.) মাজার জিয়ারত করেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন মন্ত্রিসভার সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতারা।
প্রসঙ্গত, বন্যায় কবলিত মানুষের পাশে না দাড়িয়ে শুধু বক্তব্যের মধ্যে সিমাবদ্ধ রয়েছে বিএনপির নেতার এমনটায় মন্তব্য প্রধানমন্ত্রী। বন্যায় কবলিত এলাকাগুলো পরিদর্শন করে বিভিন্ন নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী।