গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে ব্যাংক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ঘুষ ও হয়’রানির অভিযোগ উঠেছে, তদন্তের জন্য কৃষককে ব্যাংকে ডেকে ২ ঘণ্টা আটকে রাখা হয়েছে।
সোমবার (১৮ সেপ্টেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলার রামদিয়া কৃষি ব্যাংকে এ মারধরের ঘটনা ঘটে। মারধরের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।
৬৪ বছর বয়সী এই কৃষক দেনায়ের সরদার উপজেলার ফুকরা গ্রামের বাসিন্দা। এ সময় তার সঙ্গে থাকা তার ছেলে তকবির সরদার (২৭) ও জামাতা মোতাকাব্বির মুন্সি (২৫)কেও মারধর করা হয়। পরে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ সাদা কাগজে স্বাক্ষর রেখে তাদের ছেড়ে দেয়।
মা”রধরের শিকার কৃষক দেনায়ত সরদার জানান, এক মাস আগে গরু মোটাতাজাকরণ প্রকল্পের জন্য তিন লাখ টাকা ঋণ নিতে রামদিয়া কৃষি ব্যাংকে যান তিনি। এ সময় তিনি জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি ও এক কপি ছবি ব্যাংকে জমা দিয়ে আসেন। গত ২০ আগস্ট ব্যাংকের তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) রফিজুল ইসলাম সরেজমিন তদন্তের জন্য কৃষকের বাড়িতে যান। মিষ্টি খাওয়ার কথা বলে কিছু উটকোচ দাবি করলেন। কিন্তু দেনায়েত সরদার উৎকোচ দিতে রাজি না হওয়ায় ‘দায়দেনার’ কারণ দেখিয়ে ঋণের আবেদন বাতিল করে দেন ওই কর্মকর্তা। এ বিষয়ে গত ৭ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের অভিযোগ সেলে ই-মেইলের মাধ্যমে অভিযোগ করেন কৃষক দেনায়েত সরদার। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে গোপালগঞ্জ আঞ্চলিক শাখার ব্যবস্থাপক আব্দুল আজিজ ও তার সহকারী অভিযোগটি তদন্ত করতে রামদিয়া কৃষি ব্যাংকে যান।
তিনি আরও বলেন, তদন্তকালে দেনায়ত সরদারের জামাতা মোতাকাব্বির মুন্সির সঙ্গে তদন্ত দলের বাকবিতণ্ডা হয়। তদন্ত উপলক্ষে ব্যাংকটির শাখা ব্যবস্থাপক ইলিয়াস হোসেন পূর্বাঞ্চলের স্থানীয় কয়েকজনকে সংগঠিত করেন। তল্লাশি চলাকালে আচমকাই স্থানীয় লোকজন ব্যাঙ্কে ঢুকে অভিযোগকারী ও তার সঙ্গে থাকা ছেলে ও জামাইয়ের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে তারা ব্যাংকের সব গেট ও দরজা তালা দিয়ে ব্যাংকের সিসিটিভি ক্যামেরা বন্ধ করে দেয়, তদন্ত কর্মকর্তার সামনে অভিযোগকারী ও তার লোকজনকে মেঝেতে ঘু”ষি, লাথি ও পদদলিত করে। পরে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ রামদিয়া তদন্ত কেন্দ্র পুলিশকে খবর দেয়। এ ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পরিবর্তে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ নিরীহ কৃষক ও তার লোকজনের কাছ থেকে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে তাদের ছেড়ে দেয়।
এ ব্যাপারে কাশিয়ানী থানার রামদিয়া তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংকে এক গ্রাহক ব্যাংক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ঘুষের অভিযোগ করেছেন। বিষয়টি তদন্ত করতে গোপালগঞ্জ থেকে কৃষি ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ব্যাংকে আসেন। তারা অভিযোগকারীর কথা শুনছিলেন। এ সময় অভিযোগকারীর ছেলে, শ্বশুর-শাশুড়ি বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে, ব্যাঙ্ক গ্রাহকরা প্রতিবাদ করে এবং তারা বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের অভিযোগ না থাকায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক মো. ইলিয়াস হোসেন বলেন, “ঋণ না পেয়ে কৃষক আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে। অভিযোগ তদন্ত কমিটি ব্যাংকে গেলে বাদীরা অভদ্র আচরণ করে। পরে গ্রাহকরা এতে আপত্তি জানায়। পরিস্থিতি খারাপ দেখে ব্যাংকের গেট-দরজা লাগিয়ে পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। পুলিশ এসে তাদেরকে উদ্ধার করে।’
গোপালগঞ্জ কৃষি ব্যাংকের আঞ্চলিক শাখার ব্যবস্থাপক ও অভিযোগ তদন্ত কর্মকর্তা মো. আব্দুল আজিজ মারধরের কথা স্বীকার করে বলেন, তদন্তের বিষয়টি ছিল তুচ্ছ ঘটনা। আমি আমার ঊর্ধ্বতনদের নির্দেশে তদন্ত করতে গিয়েছিলাম। অভিযোগকারীর বক্তব্য শুনছিলাম। কিন্তু এত মানুষ ব্যাংকে ঢুকবে বুঝতে পারিনি। এই ধরনের জিনিস ঘটবে. আমি এটা কল্পনাও করিনি। যা সম্পূর্ণ অনাকাঙ্ক্ষিত। ঘটনাটি আমার নিয়ন্ত্রণের বাইরে ছিল। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে।
তবে কৃষককে মারধরের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পর সাধারণ মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করে শাখা ব্যবস্থাপকসহ জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।