বিদেশের মাটিতে মানুষ পাড়ি জামায় বুকে অনেক আশা নিয়ে। পরিবারের মানুষের মুখে হাসি ফুটাতে স্বজনদের ছেড়ে চলে যান দূরের দেশে। প্রত্যেক বছর অসংখ্য মানুষ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পাড়ি জমাচ্ছেন পৃথিবীর অনেক দেশে। সম্প্রতি জানা গেল সাউদর রহমান নামের এক ব্যক্তি যার বাড়ি মানিকগঞ্জ জেলার সিংগাইর উপজেলায়। ঈদের ছুটি কাটাতে কুয়েত থেকে বিমানে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামলেও নিজ বাড়িতে ২৬ দিনেও পৌঁছাননি।
সিংগাইরের সাইদুর রহমান (৪৫) পরিবারের সঙ্গে ঈদের ছুটি কাটাতে কুয়েত থেকে সৌদি এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে গত ২১ জুন ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করলেও ২৬ দিনেও বাড়িতে পৌঁছাননি।
২৬ দিন পেরিয়ে গেলেও তার কোনো সন্ধান না পাওয়ায় পরিবারের সদস্যরা উদ্বিগ্ন ও উৎকণ্ঠায় রয়েছেন। এ ঘটনায় নিখোঁজ ব্যক্তির স্ত্রী রেহেনা বেগম বাদী হয়ে ২৫ জুন বিমানবন্দর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
সাইদুর রহমানের গ্রামের বাড়ি মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার বাইমাইল গ্রামে। তার পিতার নাম সুলতান মাহমুদ। গ্রামের বাড়িতে সাইদুরের স্ত্রী ও তিন সন্তান রয়েছে।
জিডি সূত্রে জানা গেছে, সাইদুর রহমান ২১ জুন সকাল সাড়ে ৮টার দিকে কুয়েত থেকে রিয়াদ হয়ে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান। বিমানবন্দরে যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে বাসায় ফেরার কথা ছিল তার। এ কারণে তাকে বাসায় আনতে সকালে স্ত্রী রেহেনা বেগমসহ পরিবারের সদস্যরা গাড়ি নিয়ে বিমানবন্দরে যান।
দীর্ঘ অপেক্ষার পর বিমানবন্দরের একটি সূত্রে তারা জানতে পারেন, সাইদুর বিমানবন্দরে সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে ইমিগ্রেশন ছেড়েছেন। এরপর থেকে তার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। তিন দিন ধরে পরিবারের সদস্যরা স্বজন, বিদেশে সাইদুরের সহকর্মী, স্থানীয় থানা ও বিমানবন্দরে খোঁজাখুঁজি করেও তার সন্ধান পাননি। ২৫ জুন তার স্ত্রী বিমানবন্দর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন।
নিখোঁজ সাইদুরের ছোট বোন আকলিমার সঙ্গে রোববার বিকেলে কথা হয়। তিনি জানান, তার ভাই সাইদুর রহমান পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে কুয়েত থেকে গ্রামের বাড়িতে ফিরছিলেন। ঢাকার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসার পর ইমিগ্রেশনের সব প্রক্রিয়া শেষ করে বের হয়ে নিখোঁজ হন তার ভাই। ২৬ দিন পেরিয়ে গেলেও তার ভাইকে খুঁজে পাচ্ছে না তার পরিবার।
সাইদুরের স্ত্রী রেহেনা বেগম জানান, কুয়েত বিমানবন্দরে মালামাল বুকিং করে বিমানে ওঠার সময় শেষবার তার স্বামীর সঙ্গে কথা হয়। দেশের বিমানবন্দরের সব কাজ শেষ করে সেখান থেকে চলে যান। এরপর থেকে তার স্বামী নিখোঁজ। এ ঘটনায় তারা দিশেহারা। স্বামীর সন্ধানে পুলিশ প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেছেন তিনি।
নিখোঁজ সাইদুর রহমানের স্ত্রীর দায়ের করা জিডি তদন্ত করছেন বিমানবন্দর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুল লতিফ মিয়া। তিনি বলেন, নিখোঁজ ব্যক্তির মোবাইল ফোন নম্বর নেই। থাকলে তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে তাকে খুঁজে পাওয়া সহজ হতো। তারপরও নানাভাবে তাকে খোঁজার চেষ্টা চলছে।
প্রসঙ্গত, স্বজন হারানোর ব্যাথা কতটা যে কষ্টদায়ক সেটা শুধুমাত্র তারাই জানে যারা স্বজন হারিয়েছেন। কুয়েত ফেরত সাইদুর রহমানের খোঁজ বিমান বন্দরে নামার ২৬ দিনেও এখনো মিলেনি। বিষয়টি আসলেই খুব দুঃখজনক। সাইদুরের পরিবারের মানসিক অবস্থা অনেকটাই ভেঙ্গে পড়েছে বলে জানা যায়।