নির্বাচনে অংশ গ্রহনের শুরু থেকে এই পর্যন্ত সাক্ককে নানা ধরনের বাঁধা বিপত্তি পেরিয়ে এই পর্যন্ত পৌছাতে হয়েছে। তবে সে সকল প্রকার বাঁধা অতিক্রম করে নির্বাচনের ফল প্রকাশের অপেক্ষায়। তবে শেষ পর্যন্তকি তার জয় নিশ্চিত হবে। এমন পরিস্থিতিতে সকল প্রাতিদের মধ্যে একটা টান টান উত্তেজনা। ভোট গননা কেন্দের বাহিরে একটি ডিজিটা বোর্ড টানানো হয়েছে। সবাই বোর্ডের দিকে তাকিয়ে। প্রাতিদের লোকেরা আনন্দ উল্লাসে বিভিন্ন স্লগানে মাতিয়ে রেখেছে ভোট গননা কেন্দের পরিবেশ।
কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রথমবারের মতো বিজয়ী হয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করলেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত। এই বিজয়ের মাধ্যমে তিনি কুমিল্লায় সাক্কু যুগের অবসান ঘটান। এছাড়া সিটি করপোরেশন ঘোষণার পর মেয়র পদে বিজয়ী এটাই প্রথম নৌকার প্রার্থী। নির্বাচন কমিশন কর্তৃক প্রকাশিত অনানুষ্ঠানিক ফলাফল অনুযায়ী, রিফাত তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সাক্কুকে ৩৪৩ ভোটে পরাজিত করেছেন। ইভিএমে নেওয়া ভোট অনুযায়ী রিফাত পেয়েছেন ৫০ হাজার ৩১০ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সাক্কু পেয়েছেন ৪৯,০৯৮ ভোট।
বুধবার (১৫ জুন) রাতে রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. শাহেদুন্নবী চৌধুরী জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে এ ফলাফল ঘোষণা করেন। ফলে মেয়র পদে অপর তিন প্রার্থী মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন কায়সার ঘোড়া প্রতীকে ২৯ হাজার ৯৯ ভোট, হাত পাখায় রাশেদুল ইসলাম পেয়েছেন ৩ হাজার ৪০ ভোট এবং হরিণ প্রতীকে কামরুল আহসান বাবুল পেয়েছেন ২ হাজার ৩২৯ ভোট। রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনে মোট ভোটার ছিলেন ২ লাখ ২৯ হাজার ৯২০ জন। এর মধ্যে ভোট পড়েছে এক লাখ ৩৫ হাজার ৮৪টি। তবে ৩১৯টি ভোট বাতিল হয়েছে। ভোট পড়েছে ৫৬.৬৪ শতাংশ। ১০৫টি ভোট কেন্দ্রের ৬৪০টি কক্ষে ভোটগ্রহণ হয়। নির্বাচনে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১০৬ জন এবং সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ৩৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
বুধবার (১৫ জুন) সকাল ৮টা থেকে নগরীর ২৬টি ওয়ার্ডের ১০৫টি কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) চালু হয়। বিকাল ৪টায় ভোটগ্রহণ শেষ হয়। সকাল ৯টার পর ১১ নম্বর ওয়ার্ডের ভিক্টোরিয়া কলেজিয়েট স্কুল কেন্দ্রে ভোট দেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত। পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেছিলেন যে তিনি জয়ের বিষয়ে 100% আশাবাদী। তবে জয় বন্দরে পৌঁছাতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে রিফাতকে। স্থানীয় সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারও দলীয় কর্মী ও নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করে নির্বাচনে জয়ী হতে সহায়তা করেছেন বলে নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন।
স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বলছেন, গত দুই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতা আফজাল খান ও তার মেয়ে ও মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আঞ্জুম সুলতানা সীমা মনোনয়ন পেয়েছিলেন। ওই দুই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের একটি বড় অংশের হস্তক্ষেপের কারণে বাবা-মেয়ে পরাজিত হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে গত দুই নির্বাচনে এই গ্রুপিং কোন্দল প্রকাশ্যে আসেনি।
তবে এবার নগর আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিয়ে স্থানীয় খান পরিবারের সঙ্গে স্থানীয় সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের দীর্ঘদিনের বিরোধ প্রকাশ্যে আসে। আওয়ামী লীগ নেতা মাসুদ পারভেজ খান ইমরান, মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য আঞ্জুম সুলতানা সীমার ভাই একিউএম বাহাউদ্দিন বাহারের আস্থাভাজন আরফানুল হক রিফাতের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। মাসুদ পারভেজ খান একজন মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা এবং কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের তথ্য ও যোগাযোগ বিষয়ক উপকমিটির সদস্য। তবে কেন্দ্রের হস্তক্ষেপে শেষ মুহূর্তে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন মাসুদ।
এর ভালো প্রভাব পড়েছে ভোটকেন্দ্রে। নৌকার প্রার্থী রিফাতকে বিজয়ী করতে দলীয় কোন্দল কমাতে একযোগে কাজ করেছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। আরফানুল হক রিফাত কুমিল্লা জেলা যুবলীগের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি ও কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য। তিনি কুমিল্লা জেলা ক্রীড়া সংস্থার সহ-সভাপতি ও জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ছিলেন।
কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের (কুসিক) নতুন মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত ৩৪৩ ভোটের ব্যবধানে মনিরুল হক সাক্কুকে হারিয়ে।
উল্লেখ্য, রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে পাওয়া বেসরকারি ফলাফলে বলা হয়, রিফাত নৌকা প্রতীকে ১০৫টি কেন্দ্রে ৫০ হাজার ৩১০ ভোট পেয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মনিরুল হক টেবিল ঘড়ি প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৪৯,০৯৮ ভোট। তৃতীয় স্থানে থাকা নিজাম উদ্দিন কায়সার পেয়েছেন ২৯ হাজার ৯৯ ভোট।