Thursday , November 14 2024
Breaking News
Home / Countrywide / কুসিক নির্বাচনের মাধ্যমে ভিন্ন এক ইঙ্গিত পেল আ.লীগ

কুসিক নির্বাচনের মাধ্যমে ভিন্ন এক ইঙ্গিত পেল আ.লীগ

সম্প্রতি কুসিক নির্বাচন নিয়ে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয় রাজনৈতিক দলগুলোসহ বিভিন্ন মহলে। এই নির্বাচন নিয়ে অনেকের মন্তব্য ছিল নির্বাচন কমিশন আদৌও সুষ্ঠু ও নিরেপক্ষ নির্বাচন করতে পারবে কিনা। তবে নির্বাচনটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু দাবি করেন তার বিজয় ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে এবং তিনি ফলাফল প্রত্যাখান করেন। বিজয়ী হন আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী আহসানুল হক রিফাত। অল্প কিছু ভোটের ব্যবধানে তিনি বিজয়ী হন। কুসিক নির্বাচনের মাধ্যমে যে বার্তা পেল আওয়ামীলীগ।

গত ১৫ জুন অনুষ্ঠিত হয়েছে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন। বাংলাদেশের রাজনীতির প্রেক্ষাপটে এটা যে গুরুত্বপূর্ণ তাতে কোনো সন্দেহ নেই। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান আহসানুল হক রিফাত। অপর দুই শক্তিশালী প্রার্থী হলেন মনিরুল হক সাক্কু ও নিজাম উদ্দিন কায়সার। এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করায় বিএনপি তাদের নেতাদের বহিষ্কার করলেও বিএনপি সমর্থকরা তাদের প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার অধিকার প্রয়োগ করেছে- এটা দিবালোকের মতো পরিষ্কার।

নির্বাচনটি অত্যন্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এবং সম্প্রতি বিদায়ী বিএনপি মেয়র মনিরুল হক সাক্কুর সঙ্গে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর তুমুল লড়াই চলছে। তবে শেষ হাসি হাসলেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী আহসানুল হক রিফাত। তিনি মনিরুল হক সাক্কুকে মাত্র ৩৪৩ ভোটে পরাজিত করেন।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জয়ী হলেও প্রশ্ন উঠেছে: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিরলস প্রচেষ্টায় গত সাড়ে ১৩ বছরে দেশে যে ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড হয়েছে; আওয়ামী লীগের প্রাপ্ত ভোট কতটা ধারাবাহিক ছিল? বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের খবর প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে কোন্দলের বিষয়টি নির্বাচনে প্রভাব ফেলেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে আহসানুল হক রিফাতকে এ নিয়ে গণমাধ্যমে প্রশ্ন করা হলে তিনি কোনো সুস্পষ্ট উত্তর না দিয়ে পাশ কাটিয়ে চলে যান।

কুমিল্লার সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার রিফাতকে নিয়ে ব্যাপক আলোচনায় রয়েছেন। রিফাত বাহারের খুব কাছের। এর আগে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে বাহাউদ্দিন বাহারের সংঘর্ষ হয়েছে।২০১২ সালের নির্বাচনে আফজাল খান এবং ২০১৭ সালে আফজাল খানের মেয়ে আঞ্জুম সুলতানা সীমা মনোনয়ন পেয়েছিলেন। বাহার ওই দুই নির্বাচনে তাদের সমর্থন দিতে অস্বীকৃতি জানায়। ফলে নির্বাচনে হেরে যান আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী। ওই দ্বন্দ্ব কি এবারও কাজ করেছে?

সাম্প্রতিক ইউনিয়ন পরিষদসহ অন্যান্য নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে অনেক ক্ষেত্রেই সমালোচনা হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়ন বঞ্চিত বিদ্রোহী প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কড়া বার্তার পরও নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীর সংখ্যা অনেক ক্ষেত্রেই কমেনি। গোপালগঞ্জ পৌরসভায় আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পরাজয় স্পষ্টতই সাংগঠনিক কোন্দলের দিকে ইঙ্গিত করে।

আমরা সবাই জানি ২০২৩ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। তবে বিএনপি দৃঢ়ভাবে বলেছে যে তারা নির্বাচনে অংশ নেবে না; সবার বিশ্বাস, নির্বাচনের আগে বিএনপিসহ অন্যান্য বিরোধী দল তাদের মত পরিবর্তন করবে। প্রধানমন্ত্রী বারবার বলেছেন আগামী নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে। সেই প্রেক্ষাপটে বিচার করলে আওয়ামী লীগকে এখন থেকে অনেক শক্ত সাংগঠনিক অবস্থান নিতে হবে। তবে দলের বিভিন্ন স্তরে কোন্দল এবং দলাদলি যেভাবে সামনে এসেছে তা আওয়ামী লীগকেসামনে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে।

একসময় যারা বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি বলে আখ্যায়িত করত তারাই আজ বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোল মডেল বলে প্রশংসা করছে। বঙ্গবন্ধুর মতো তার কন্যাও দরিদ্র মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়ে দেশের সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে ইতোমধ্যে বদ্ধপরিকর। সরকার দারুণ সাফল্যের সঙ্গে কাভিড-১৯ মহামারী মোকাবেলা করেছে। এই দুর্যোগ থেকে মানুষকে রক্ষা করতে সরকার বিনামূল্যে টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে। এ কারণে প্রধানমন্ত্রীর জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে, যা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার করা গবেষণায় উঠে এসেছে। তবে কুমিল্লা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর ভোটার তুলনামূলক কম হওয়া এবং প্রধানমন্ত্রীর জনপ্রিয়তাকে পুঁজি করে দল হিসেবে আওয়ামী লীগ কতটা সক্ষম হবে তা নিয়ে অনেকেই শঙ্কিত। তাই আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে অবিলম্বে অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও কোন্দল মিটিয়ে আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে দলকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করতে হবে। আমরা সবাই জানি সুসংগঠিত ও ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগ খুবই শক্তিশালী।
ড. প্রণব কুমার পান্ডে: অধ্যাপক, লোক প্রশাসন বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

প্রসঙ্গত, কুসিক নির্বাচনে দলীয় কন্দোলনের কারনে বিগত দুটি নির্বাচনে আওয়ামীলীগের প্রার্থীরা বিজয়ী হয়নি বলে মন্তব্য করা হয়েছে। কিন্তু এবার দলীয় নেতাকর্মীরা পক্ষে কাজ করায় দলীয় প্রার্থী আহসানুল হক রিফাত বিজয়ী হয়েছেন। আগামী সংসদ নির্বাচনে দলীয় কন্দোল থাকলে আওয়ামীলীর পরিস্থিতি কেমন হবে।

About Babu

Check Also

উপদেষ্টা পরিষদেই বৈষম্য

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে আঞ্চলিক বৈষম্যের অভিযোগ উঠেছে। ২৪ সদস্যের এই পরিষদে ১৩ জনই চট্টগ্রাম …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *