Thursday , November 14 2024
Breaking News
Home / Countrywide / কুষ্টিয়ায় এসে এক সাধুকে বিয়ে করলেন ফ্রান্সের তরুণী, জানা গেল কারণ

কুষ্টিয়ায় এসে এক সাধুকে বিয়ে করলেন ফ্রান্সের তরুণী, জানা গেল কারণ

প্রেমের টানে বাংলাদেশে তরুন তরুনীর ছুটে আসার ঘটনা কম নয়। কিন্তু বাংলাদেশের সংস্কৃতি বা দর্শনকে ভালোবেসে এদেশে চিরদিনের মত বিদেশি তরুন-তরুনীর স্থায়ীভাবে বসবাসের ঘটনা খুব কমই রয়েছে। কুষ্টিয়ার সাধক লালন শাহ এর বিষয়ে গবেষণা করতে এসে ফ্রান্সের এক তরুণী কুষ্টিয়াতেই বিয়ে করে বসবাস শুরু করেছেন। কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে ফ্রান্সের ঐ তরুণীর নাম দেবোরা কিউকারম্যান। লালন শাহের দর্শন এর গবেষণা করতে গিয়ে তিনি সেই দর্শনের প্রেমে পড়ে যান। এরপর আর তিনি দেশে ফিরে যাননি।

বর্তমানে তিনি কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে বসবাস করেছেন। মাঝে মাঝে ফ্রান্সে গিয়ে তিনি ঘুরে আসেন। নাম বদল করে হয়েছেন দেবোরা জান্নাত।

তিনি তার প্রথম গবেষণা কাজে ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে ফ্রান্স থেকে বাংলাদেশে আসেন। এরপর তিনি বিখ্যাত বাউল ফকির নাহির শাহের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। অবিবাহিত দেবোরা গুরুর আস্তানায় বসবাসকারী নাহির শাহের আরেক শিষ্য রাজনকে বিয়ে করেন। এখনও গুরুর কাছ থেকে আধ্যাত্মিক শান্তি ও সৃষ্টির রহস্য খোঁজার জন্য দীক্ষা নেন। ফকির লালন শাহকে তিনি যতই চিনতেন, ততই তার প্রেমে পড়েন। শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা বেড়েছে।

দেবোরা জান্নাত প্যারিসের মেয়ে। দুই বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে বড়। মা ডাক্তার আর বাবা একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। শৈশব থেকেই প্রতিভাবান দেবোরা ছিলেন অত্যন্ত পরিশ্রমী, মানবিক, স্পষ্টভাষী এবং প্রতিবাদী। তিনি একজন ভালো অনুবাদক। দেশে থাকাকালীন ফরাসি থেকে ইংরেজিতে অনুবাদের কাজ করেছেন। বাংলাদেশে এসেও তিনি অনুবাদকের কাজ করেছেন। তিনি দর্শনে এমএ এবং ও ইয়োগার শিক্ষক ছিলেন।

দেবোরা জান্নাত বলেন, আমি যখন গুরুর হেম আশ্রমে প্রথম প্রবেশ করি তখন গুরু স্বাগতম জানালেন। তিনি তাকে তার পাশে একটি আসন দিয়েছিলেন। তাদের আচার-আচরণ, অকৃত্রিম ভালোবাসায় মুগ্ধ হলাম। তখন আমার কাঁধ থেকে অনেক বড় একটা বোঝা নেমে গেলো। আমিও আমার গন্তব্য খুঁজে পাই। গুরুর সঙ্গে ভালো সম্পর্ক স্থাপন করতে পেরেছি। গুরু সমাজের সবাই আমাকে খুব ভালোবাসে।

তিনি বলেন, লালন দর্শনে শান্তি পেয়েছি। তাই আমি ফ্রান্সে ফিরে যাব না। লালনের দেশে গুরুজী নহির শাহের শিষ্য হয়ে বেঁচে থাকতে চাই চিরকাল। দেহ কেবলমাত্র সবকিছু বয়, ম’রে গেলে লা’/শ মাত্র। আমি আমার প্রয়াত দেহটি হেম আশ্রম, প্রাগপুর, দৌলতপুর, কুষ্টিয়াতে জমা দিতে বলছি।

দেবোরা জান্নাত বলেন, আমি বিশ্বের ৫৪টি দেশে গিয়েছি। পারিবারিক ভ্রমণ, অধ্যয়ন, কাজ, গবেষণার জন্য সেসব দেশে ভ্রমণ করেছেন। আমি বাংলাদেশকে সবচেয়ে বেশি পছন্দ করি। তখন লালন দর্শন আমার খুব ভালো লাগত। গুরু পেয়েছি, সাধু সমাজের মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি। আমার গুরু খুব জ্ঞানী মানুষ। হেম আশ্রমকে আমি আমার আবাস হিসেবে নিয়েছি।

সংসার ও বিয়ে নিয়ে দেবোরা জান্নাত বলেন, আমরা স্বামী-স্ত্রী দুজনেই অর্জনমুখী এবং আত্মকেন্দ্রিক মানুষ। তাছাড়া দুজনের মধ্যে ভালোবাসা ও স্বপ্ন আছে। পরে গুরুর আশীর্বাদে ও সাধু সমাজের আশীর্বাদে প্রয়োজনের তাগিদে আমাদের বিয়ে হয়।

ভাষা সম্পর্কে তিনি বলেন, প্রেমের বাণী জানতে হলে বা সাধু সমাজে চলতে চাইলে বাংলা ভাষা শিখতে হবে। তাই সবার সাথে কথা বলার ভাষা শিখতে শুরু করলাম। দুই সপ্তাহের মধ্যে আমি নিজেই বর্ণমালা শিখেছি। তারপর বাংলা ভাষা শেখার জন্য ক্লাস করলাম। অনুশীলন করার পরে, আমি ছয় মাসের মধ্যে ভাষা শিখেছি। এখন বাংলা বলতে বা বুঝতে কোনো সমস্যা নেই। শেখার পেছনে গুরু, স্বামী ও শিশুদের অবদান সবচেয়ে বেশি।

দেবোরা জান্নাতের গুরু ফকির নাহির শাহ বলেছেন, জল শূন্য মোহনা আর প্রেম শূন্য হৃদয় সমান। তাই আমাদের তার প্রেমিক হতে হবে। সুদূর ফ্রান্স থেকে দেবোরা জান্নাত আমাদের সাথে যোগ দিলে, সাধক বুঝতে পারলেন যে গুরু মহলে প্রবেশ করার পরে আমাদের মধ্যে অকৃত্রিম ভালবাসা রয়েছে। যেখানে সবাই মানুষ, সবাই সমান, সেখানে কোনো ভেদাভেদ নেই।

আমাদের অভ্যাস, আচার-আচরণ, খাদ্যাভ্যাসসহ সবকিছুই তাঁর পছন্দের বলেই তিনি এদেশে রয়েছেন। ধীরে ধীরে পরস্পরের প্রতি ভ্রাতৃত্ব ও ভালোবাসা বৃদ্ধি পায়। সে এখন লালনের দেখানো পথ অনুসরণ করে। সে আমার আরেক শিষ্য রাজনকে বিয়ে করেছে।

রাজন ফকির যিনি দেবোরা জান্নাতের স্বামী তিনি বলেন, আমি একজন সুন্দর মনের বিদেশিনী তরুণীকে বিয়ে করেছি। কিন্তু তার আচার-আচরণ, কথাবার্তা, চালচলন, ব্যবহার, সবকিছুই এদেশের মাটির মানুষের মত। তার ভিতরে বিদেশীদের মত কোন কিছুই দেখা যায় না। তিনি এদেশকে এবং এদেশের মানুষকে অনেক ভালোবাসেন। এই অঞ্চলের মানুষ তার সান্নিধ্য পেয়ে অনেক খুশি হয়।

About bisso Jit

Check Also

উপদেষ্টা পরিষদেই বৈষম্য

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে আঞ্চলিক বৈষম্যের অভিযোগ উঠেছে। ২৪ সদস্যের এই পরিষদে ১৩ জনই চট্টগ্রাম …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *