বর্তমান সময়ে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে প্রতারণার নতুন নতুন পথ আবিষ্কার করছে বহু প্রতারক চক্র। সাধারণত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে তারা এ ধরনের প্রতারণা করে থাকে। সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল বেশ কয়েকজন যুবককে আটক করেছে, যারা বিভিন্নভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে প্রতারণার ফাঁদ পেতে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিতেন তাদের টার্গেট করা ব্যক্তিদের কাছ থেকে।
একটি চক্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মার্কিন সেনা, নৌবাহিনীসহ বিভিন্ন পরিচয় ব্যবহার করে সাধারণ মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্ব করে যাচ্ছিলো। একপর্যায়ে দামি উপহার পাঠিয়ে ফাঁদ পাততেন চক্রের সদস্যরা। এরপর তারা বিপুল পরিমাণ অর্থ কৌশলে হাতিয়ে নিত। গত সোমবার রাতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে পার্সেল প্রতারক চক্রের মূল হোতাসহ ১১ জনকে আটক করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)।
এদের মধ্যে আফ্রিকার তিনটি দেশের নাগরিক রয়েছে।
গতকাল ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ বলেন, এই চক্রের প্রধান বিপ্লব লস্কর (৩৪) কয়েক বছর আগে কুলি ছিলেন। পার্সেল জালিয়াতির মাধ্যমে তিনি এখন কোটিপতি হয়েছেন। রাজধানীতে তার বেশ কিছু ফ্ল্যাট ও প্লট রয়েছে। গ্রে”ফতার এড়াতে তিনি সবসময় নেটওয়ার্ক জ্যামার ব্যবহার করতেন। তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, মানি লন্ডারিংসহ দেশের বিভিন্ন থানায় শতাধিক মামলা রয়েছে। এসব মামলায় বিপ্লবকে একাধিকবার গ্রেফতার করা হয়েছে।
গ্রে”ফতারকৃত বাংলাদেশিরা হলেন- সুমন হোসেন ওরফে ইমরান (৩১), মহসিন হোসেন ওরফে শাওন (৩০), ইমরান হাসান ওরফে ইকবাল (৩০), নাজমুল হক রনি (৩০) ও মোসা। নুসরাত জাহান (২৪)। গ্যাংয়ের বিদেশী সদস্যরা হলেন চিদি (৪০), ইমানুয়েল (২৬) এবং জন (৩১) নাইজেরিয়ার, উইলসন ডি কনসিকো (৩৫) অ্যাঙ্গোলার এবং ক্যামেরুনের গুলগনি পাপিনিক (৩২)। একটি বিদেশি পিস্তল, দুটি গুলি, একটি ম্যাগাজিন, ২৮টি মোবাইল ফোন, একটি কম্পিউটার, ৪৯১টি এটিএম কার্ড, ২৬টি চেকবুক, তিনটি ওয়্যারলেস পকেট রাউটার, একটি প্রাইভেট কার, সাড়ে তিন লাখ জাল টাকা, ১১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা ও ২৬৩টি সিম ছিল। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার। কার্ড বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
প্রতারণার কৌশল সম্পর্কে ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ বলেন, টার্গেট করা ব্যক্তিদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে তারা সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করত। এক পর্যায়ে দামি উপহার, সোনা, মূল্যবান পাথর, হীরা, বৈদেশিক মুদ্রা, ডলার, ইউরো পাঠিয়ে ফাঁ”দে ফেলতেন।
সাম্প্রতিক সময়ে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে প্রতারণা করছে এমন বেশ কয়েকটি গ্রুপকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ। তবে গোয়েন্দা পুলিশের চোখের আড়ালে অনেকেই এই ধরনের প্রতারণার মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে এই ধরনের প্রতারণা দিন দিন বেড়েই চলেছে। যেটা করতে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে।