গত ১৫ জুন শেষ হয়ে গেল কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। আর এই নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী রিফাত এবং তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু স্বল্প ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছেন। নির্বাচনে স্বচ্ছ এবং সুষ্ঠু হলেও পরাজিত হওয়ার পর সাক্কুর সমর্থকরা দাবি করেছেন, নির্বাচনী ফলাফল প্রকাশের ক্ষেত্রে কারচুপি ঘটেছে। এ বিষয়টি নিয়ে সেখানে ঝামেলার সৃষ্টি হয় এবং বিভ্রান্তি ছড়ানোর অভিযোগ ওঠে। এবার নির্বাচনে বিভ্রান্তি ছড়ানোর বিষয় নিয়ে ব্যাখ্যা দিলেন ইসি।
কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচন নিয়ে ‘নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে জনমনে বিভ্রান্তি’ এড়াতে ব্যাখ্যা দিয়েছে ইসি। রোববার কমিশনের জনসংযোগ বিভাগের পরিচালক এসএম আসাদুজ্জামান স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনটি গণমাধ্যমে পাঠানো হয়।
গত ১৫ জুন কুসিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। কোনো উল্লেখযোগ্য স”হিং/’সতা ছাড়াই এ সিটিতে ভোট অনুষ্ঠিত হয়। দিনশেষে তিন মেয়র প্রার্থীই সন্তোষ প্রকাশ করেন। তারা গণমাধ্যমকে বলেছেন, ভোট সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হয়েছে। এ জন্য তারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও নির্বাচনের সঙ্গে জড়িত সবাইকে ধন্যবাদ জানান।
কিন্তু বাদসাধে ফল নিয়ে। নির্বাচনের ফলাফলের শেষ দিকে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কুর সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক হা”তাহা’তির ঘটনা ঘটে। ফলাফল ঘোষণার আগেই গুন্জন ছড়িয়ে পড়ে যে উভয় প্রার্থীই জয়ী হয়েছেন। এ কারণে প্রায় এক ঘণ্টা কুমিল্লা জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তন থেকে নির্বাচনী ফলাফল ঘোষণা বন্ধ থাকে। ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রিফাত মাত্র ৩৪৩ ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়ে মেয়র পদে নির্বাচিত হয়েছেন।
ফলাফল ঘোষণায় বিলম্ব ও শেষ মুহূর্তের পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। পরাজিত প্রার্থী সাক্কু ‘ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের’ অভিযোগ করেছেন। প্রসঙ্গত, ভোটের পরদিন বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশনার ড. আলমগীর বলেন, রেজাল্ট ম্যানিপুলেট করার সুযোগ রিটার্নিং অফিসারের নেই। প্রার্থীর এজেন্টদের কাছে কপি আছে। এরপরও কারো সন্দেহ থাকলে ট্রাইব্যুনালে যেতে পারেন।
চার দিন পর ভোটগ্রহণের পর ফলাফল ঘোষণার সময় সৃষ্টি হওয়া উত্তেজনা, শেষ মুহূর্তে ফলাফল দিতে দেরি হওয়ার বিতর্ক, ফলাফল পালটে দেওয়ার অভিযোগ, পরাজিত প্রার্থী সাক্কুর সমর্থকের বক্তব্যের বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
গণমাধ্যমে ইসির বিবৃতিতে বলা হয়, বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা, নিবন্ধ ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরিবেশিত কিছু তথ্য ও সংবাদে নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে জনমনে কিছুটা বিভ্রান্তি থাকতে পারে। তাই কমিশনের পক্ষ থেকে ব্যাখ্যা ও বক্তব্য দেওয়া প্রয়োজন বলে মনে হয়। ‘
ব্যাখ্যায় বলা হয়, ‘১৫ জুন কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পর রিটার্নিং অফিসারের পক্ষ থেকে বেসরকারি ফলাফল প্রকাশের শেষ পর্যায়ে দুই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে হঠাৎ করে উত্তেজনা, পাল্টাপাল্টি স্লোগান ও হাতাহাতি হলে বিশৃঙ্খল অবস্থার সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করা হয়। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার দ্রুত হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে মুক্তি দেওয়া হয়। কিছু (সকল নয়) সংবাদপত্রের নিবন্ধ এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় বক্তারা এই সময়টিকে এক বা দেড় ঘন্টা দেরি বলে উল্লেখ করার চেষ্টা করেছেন। বিলম্ব বলে রহস্য, অঘটন ইত্যাদি ইঙ্গিত করার চেষ্টা করেছেন যেটা মোটেই ছিল না। উল্লেখিত কারণে চূড়ান্ত ফলাফল আসতে প্রায় ১৫ থেকে ২০ মিনিট দেরি হয়েছিল।
এক বিবৃতিতে ইসি বলেছে, “মাত্র ৩৪৩ ভোটে হেরে যাওয়া জনাব মনিরুল হক সাক্কুর পক্ষে জনৈক ব্যক্তি ফলাফল ঘোষণার চূড়ান্ত পর্যায়ে এক টেলিফোন কলে ফলাফল পালটে দেওয়া হয়েছে মর্মে বক্তব্য দিয়েছেন। জনগণের মনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে অনাকাঙ্ক্ষিত বিতর্ক সৃষ্টির চেষ্টা করা হয়েছে। ফলাফল প্রকাশের শেষ পর্যায়ে ইভিএমে থাকা ফলাফল পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের ১০৫টি কেন্দ্রে ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে এবং কেন্দ্রভিত্তিক ইভিএম থেকে ছাপানো ফলাফলের সব কপি এবং প্রার্থীদের এজেন্ট ও প্রিজাইডিং অফিসারদের স্বাক্ষরিত ফলাফলের এজেন্টদের সরবরাহ করা হয়েছে। পরে প্রিজাইডিং অফিসার নিজেই রিটার্নিং অফিসারের কাছে এসে অনুলিপি দেন। রিটার্নিং অফিসার একত্রিত হয়ে ফলাফল ঘোষণা করেন।’
কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে মেয়র প্রার্থীদের ইভিএম থেকে মুদ্রিত ফলাফল এবং প্রার্থীর এজেন্ট ও প্রিজাইডিং অফিসারের স্বাক্ষরিত ফলাফলের অনুলিপি (ফর্ম 6N) কমিশনের ওয়েবসাইটে (www.ecs.gov) আপলোড করা হয়েছে। bd)।
ইসি এক বিবৃতিতে বলেছে, নির্বাচন সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ করতে প্রথমবারের মতো প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে সিসিটিভি ব্যবহার করা হয়েছে। নির্বাচনকে আরও নিরপেক্ষ করতে সিটি করপোরেশন এলাকায় কর্মরত নির্বাচন কর্মকর্তাদের নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব না দিয়ে সাময়িকভাবে বাইরে থেকে কর্মকর্তাদের এনে নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন পর্যবেক্ষক ও গণমাধ্যমের সংবাদকর্মীদের তথ্য ধারণ ও পরিবেশনের জন্য অবাধ সুযোগ দেওয়া হয়েছে। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। কোনো স”হিং/”সতার খবর পাওয়া যায়নি।
ব্যাখ্যায় যোগ করা হয়েছে, “ভোটারের উপস্থিতি নজর কাড়া ছিল। ৫৯ শতাংশ ভোটার উপস্থিতি কম বলে মিডিয়ায় কেউ কেউ সমালোচনা করেছেন। ইভিএমে কারো পক্ষে দুবার বা অপরের ভোট দেওয়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়, বিধায় ব্যালটে ভোটের চেয়ে কম হতে পারে।’
ইসি তার আন্তরিক ও গঠনমূলক পরামর্শ দিয়ে কমিশনকে তার দায়িত্ব আরো দক্ষতার সাথে ও নিষ্ঠার সাথে পালনে সহযোগিতা করার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
উল্লেখ্য, সেখানকার বিশিষ্টজনেরা জানিয়েছে অন্যান্য সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের থেকে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন হয়েছে। যেখানে কোনো অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি। তবে স্বতন্ত্রপ্রার্থীর সাক্কু দাবি করছেন, ভোটের ফলাফল প্রকাশের সময় কোন একটা ইঞ্জিনিয়ারিং কৌশল ঘটেছে। সাক্কুর খুব কম ভোটের ব্যবধানে নির্বাচনে পরাজয়ের পেছনে স্পষ্ট কারণ রয়েছে বলেও কয়েকজন ব্যাখ্যা করেন।