আসিফ আকবর বাংলাদেশের সংগীতাঙ্গনের একটি বড় নাম। দীর্ঘ দিন ধরেই বাংলাদেশের মানুষের কাছে নিজের গানের কথা আর কণ্ঠ পৌঁছে দিয়েছে সগৌরবে।এ ছাড়াও দেশের সমসাময়িক অনেক বিষয় নিয়েই কথা বলে থাকেন আসিফ।আর সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি কথা বলেছেন দেশের দুই গুণীজনের মৃত নিয়ে। পাঠকদের উদ্দেশে তারই সেই লেখনী তুলে ধরা হলো হুবহু:-
ভোরে স্টুডিও থেকে বাসায় যাবো, গাড়ী স্টার্ট করে গ্যারেজ থেকে বের হওয়ার আগে তীক্ষ্ন চীৎকার কানে আসলো। একটা বিপন্ন বিড়ালছানা আমার গাড়ীর নীচে আশ্রয় নিয়েছে। একেবারেই ছোট বাচ্চা, সেদিন ওর আশ্রয় হলো অফিসে। নাম রেখেছি এমিলি লেন্দুপ, ইথুন বাবু আদর করে ডাকেন পুন্টি, এমিলি এখন পুন্টি নামেই আমার অফিসের সর্বোচ্চ ডেকোরাম হয়ে আছে। বড় ছেলে শাফকাতে পথে ঘাটে ঘুরে জীবন বিপন্ন অবস্থায় আছে এমন বিড়ালছানা গুলো রেসকিউ করে বাসায় নিয়ে আসে। তিন চার মাস যত্ন নিয়ে বড় করে, পি পটি আর ফুডিং কালচার শেখায়। তারপর মাইগ্রেশন করে দেয় এদিক সেদিক। ওর এই মানবিক কাজটা আমরা সানন্দে মেনে নিয়েছি হাজারো ঝামেলা সত্ত্বেও।
গাজী মাজহারুল আনোয়ার এই বাংলাদেশের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ গীতিকবি। স্বাধীনতা স্বার্বভৌমত্ব মানচিত্রের মধ্যমনি গাজী চাচা, প্রয়াত হয়েছেন নিভৃতে। ড. আকবর আলী খান স্যার উনার জীবনের শেষ নিঃশ্বাস থাকা পর্যন্ত এই দেশটাকে গার্ডিয়ানশীপ দিয়ে গেছেন। জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে দুজন মহামানবের প্রস্থান অত্যন্ত বেদনাদায়ক, দেশের স্বাধীনতা অর্জনে দুজন’ই ছিলেন শ্রদ্ধাভাজন অগ্রসেনা। মারা গেলেন বৃটিশ রানী কুইন এলিজাবেথ, দেশের সোশ্যাল আনসোশ্যাল মিডিয়ার সবাই খুব ব্যথিত। মৃত্যু অবশ্যই বেদনার, রানীর ঔপনিবেশিক গোলামীও তো ভুলতে পারিনা। রাষ্ট্র তিনদিনের শোক ঘোষনা করলো, রাষ্ট্রীয় কূটনৈতিক শিষ্টাচারের ব্যাপারে সরকারের সিদ্ধান্তই আসল। সদ্য মরহুম শ্রদ্ধেয় গাজী মাজহারুল আনোয়ার এবং ড. আকবর আলী খান স্যারের মত পরীক্ষিত দেশপ্রেমিকদের জন্য রাষ্ট্রীয় শোক পালন করা হয়না, এটা আমাদের গোলামী মানসিকতার ব্যর্থতা।
এদিকে আমার বিড়ালছানাটার বয়স হয়ে গেছে পাঁচমাস। ছেলে অফিস থেকে ছুটি পাওয়া মাত্রই ওকে ভ্যাটেরনারি হসপিটালে নিয়ে ভ্যাকসিন দিয়েছে। পুন্টির আজ কোন উচ্ছ্বলতা ছিলনা, মেয়েটা ব্যথায় আজ ঠিকভাবে খায়নি। সাতদিন পরে অপারেশন, লিভার কেটে তার মাতৃত্বের অধিকার কেড়ে নেয়া হবে। অত্যন্ত নিষ্ঠুর একটা কাজ, পুন্টির অনেকগুলা বাচ্চা হয়ে গেলে আমি আবার বিপদে পরে যাবো, ওকে একাই বাকী জীবন কাটাতে হবে আমার সাথে। পোস্টের এটুকু পর্যন্ত পড়ার পর আমার বিরুদ্ধে দয়াহীনতার অভিযোগ আসবে, অথচ অভিযোগকারী নিজে বিড়াল দেখলেই অত্যাচার করে, অসহায় বোবা প্রানীটির দায়িত্ব নেয়ার মানসিকতা রাখেনা। বাংলাদেশে আসলে আমার কোন কাজই নেই কিছু রেকর্ডিং ছাড়া। অফিসে আমার যে চেয়ারম্যানের চেয়ারটা ওখানে পুন্টি ঘুমাতে আরাম বোধ করে। ওর বস আমি, যেহেতু বসেরই কাজ নাই সেক্ষেত্রে বসের চেয়ারে বিড়ালটারই ঘুমানো উচিত, ওরা ঘুমপ্রিয়। তারা গোলামী দালালী নিয়ে ভাবিত নয়। আরাম দরকার আরাম, যতদিন বাঁচে। এদেশে মানুষও পছন্দ করে গোলামীর জিঞ্জির, আমি না হয় এমিলিকেই দাস বানালাম ভালবেসে !
ভালবাসা অবিরাম…
প্রসঙ্গত, গেল কয়েক দিন আগে মারা গেছেন কুইন রানী এলিজাবেথ। আর এই বিষয় টা এখন সারারা বিশ্বের আলোচিত একটি খবর। এই কারণেই বাংলাদেশে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে।