আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্দলীয় সরকারের দাবিতে আন্দোলন করছে বিএনপি। দলটি দৃষ্টিভঙ্গিতে নানা কর্মসূচি দিচ্ছে। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে ইতিবাচক সাড়া না পাওয়ায় আওয়ামী লীগ সরকারকে বাধ্য করতে ‘পরিস্থিতির ভিত্তিতে কঠোর কর্মসূচি’র কথা ভাবছে বিএনপি।
এদিকে প্রথম দফায় তিন দিনের অবরোধ কর্মসূচি নিয়ে বেশ সন্তুষ্ট দলটির নেতারা। কারণ তারা মনে করেন, ইউনিয়ন থেকে কেন্দ্রীয় পর্যায় পর্যন্ত নেতা-সংগঠকদের ব্যাপক গ্রেপ্তারের পরও সড়ক-মহাসড়ক কার্যত অচল ছিল, এমনকি রাজধানী ঢাকা শহরেও সড়কে যানবাহন ছিল ‘তুলনামূলকভাবে খুবই কম’।
দলটির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, সারাদেশে সাঁড়াশি আক্রমণ চলছে। এতদসত্ত্বেও এই তিনদিন খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া মানুষ বের হয়নি। এর মানে জনগণ অবরোধকে সমর্থন করেছে। এটা আমাদের অর্জন।
এদিকে অবরোধ চলাকালে গত ২৪ ঘণ্টায় কেন্দ্রীয় নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, জহির উদ্দিন স্বপন ও ঢাকা মহানগরের সদস্য সচিব আমিনুল হকসহ অন্তত ২৭২ জনকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আটক করেছে বলে জানিয়েছে বিএনপি।
দলের আইন বিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল বলেন, পুলিশের আগ্রাসী ভূমিকার পরও আমরা আমাদের কর্মসূচিতে জনগণের জোরালো অংশগ্রহণ দেখতে পাই। পরিস্থিতির আলোকে আমরা দাবির রাজনৈতিক ও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি সফল করব।
২৮ অক্টোবর নয়াপল্টনে সমাবেশ প্রত্যাহারের পরদিন হরতাল পালন করে তিনদিনের সর্বাত্মক অবরোধের পরিকল্পনা করেছিল বিএনপি।
তিনদিনের অবরোধ কর্মসূচির পর বৃহস্পতিবার আরও ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে, যা রোববার সকাল ৬টা থেকে শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।
তফসিল ঘোষণার সময় যত ঘনিয়ে আসছে বিএনপির কর্মসূচি তত বাড়বে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন দলের বিভিন্ন স্তরের একাধিক নেতা।
যদিও প্রাথমিকভাবে নির্বাচন কমিশন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও সচিবালয় ঘেরাও করে ১০-১২ নভেম্বর সম্পূর্ণ অবরোধের দিকে যাওয়ার কথা ভেবেছিলেন দলটির নীতিনির্ধারকরা।
কিন্তু ২৮ অক্টোবরের সাধারণ সভা বাতিলের পর বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও মির্জা আব্বাসকে গ্রেপ্তারের পর পরিকল্পনা পরিবর্তন করে সরাসরি অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করে।
রোববার ও সোমবার অবরোধের পর আগামী ৭ নভেম্বর দলটির নিজস্ব কর্মসূচি পালনের কথা রয়েছে।এর পর আবারও হরতাল করে আগামী সপ্তাহ পার করবে দলটি।
চলতি সপ্তাহে দলের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, সরকারের অবস্থান ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে পরবর্তী কৌশল নির্ধারণ করবেন তারা।
আগামী সপ্তাহের শেষের দিকে বা আগামী সপ্তাহের শুরুতে নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করলে ওই দিনকে ঘিরে এবং তার আগে-পরে কী ধরনের কর্মসূচি পালন করা যেতে পারে তা নিয়ে নীতিনির্ধারকদের মধ্যে চলছে নানা আলোচনা।
সেলিমা রহমান বলেন, খুন-গুম করে সরকার ক্ষমতায় থাকতে পারে, কিন্তু আমাদের লক্ষ্য অর্জনে এগিয়ে যেতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি বাধাগ্রস্ত হলে তারা কীভাবে দাবি আদায় করবে তা জনগণের ওপর নির্ভর করবে।
তফসিল ঘোষণাকে কেন্দ্র করে তারা তাদের প্রতিবাদ আরও জোরদার করতে পারে বলে বিভিন্ন পর্যায়ের দলের নেতারা ইঙ্গিত দিচ্ছেন এবং এর ফলে সরকার অনেকটাই চাপে পড়বে বলে মনে করছেন দলের নেতারা।