Friday , September 20 2024
Breaking News
Home / opinion / কী হতে পারে বাংলাদেশেকে নিয়ে আমেরিকার পরবর্তী পদক্ষেপ

কী হতে পারে বাংলাদেশেকে নিয়ে আমেরিকার পরবর্তী পদক্ষেপ

বাংলাদেশের তিন প্রধান রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টিকে চিঠি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু। আনুষ্ঠানিকভাবে এমন একটি চিঠি পাঠিয়ে যুক্তরাষ্ট্র তাদের চলমান রাজনৈতিক বিরোধ সম্পর্কে জনসমক্ষে চূড়ান্ত বার্তা দিয়েছে। ১৩ নভেম্বর সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত চিঠিতে নতুন কিছু বলা হয়নি। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে দেয়া এমন চিঠির মধ্যে নতুন বার্তা রয়েছে। কেউ কেউ মনে করেন, বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিরসনে এটাই আমেরিকার শেষ প্রকাশ্য বার্তা। নেপথ্যের অনেক কাজ শুরু হয়ে গেছে। যদিও এসব নিয়ে বিস্তারিত জানার বা জানানোর সুযোগও খুবই সীমিত বলে মনে করা হচ্ছে।

আমেরিকা বেশ কিছুদিন ধরেই বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রকাশ্যে সক্রিয়। গোপন, কূটনৈতিক চাল-চলনের মাধ্যমে রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তারের সময় ইতিমধ্যেই পেরিয়ে গেছে। ভারত বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রভাব পড়বে ফেলবে নাকি আমেরিকা আধিপত্য বিস্তার করবে তা নিয়ে চলছে বিতর্ক।

আমাদের মধ্যে বেশিরভাগই এখন একমত যে আমাদের নিজেদের স্বার্থে হলেও রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব থেকে নিজেদের বের করে নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। বাংলাদেশের মানুষের ভবিষ্যৎ নির্ধারিত হবে বাইরের শক্তির হস্তক্ষেপে! দেশকে আমরা ঠেলে দিয়েছি এমন বাস্তবতায়!

বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিয়ে আমেরিকার দৌড়ঝাঁপকে দেশের সরকারপক্ষ বৈরী আচরণ হিসেবেই দেখছে। নেপথ্যে আমেরিকা কী বলছে, কোন চাপ দিচ্ছে? তা এখনও প্রকাশ্য নয়। মার্কিন কূটনীতি সম্পর্কে যাদের জ্ঞান আছে, তারা মনে করেন নেপথ্যের অনেক বিষয় সহজে জানার কোনো উপায় নেই। আমেরিকা সামনে যা বলে , নেপথ্যের কর্মকৌশল দিয়ে তা বাস্তবায়িত করে থাকে।

মার্কিন কূটনীতির মৌলিক নীতির মধ্যে রয়েছে বিদেশে মার্কিন স্বার্থ রক্ষা এবং নাগরিকদের সুরক্ষা। গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং অন্যান্য বৈশ্বিক বিষয়ে আমেরিকার স্বার্থের অগ্রগতি সমৃদ্ধ ও উন্নত বিশ্ব তৈরি করা এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে সক্রিয় ভূমিকা রাখা।

এ লক্ষ্য অর্জন করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের মূল্যবোধ ধারণ করে কাজ করে থাকে। বাংলাদেশকে নিয়ে আমেরিকার স্বার্থ ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণেই এখন গুরুত্বের। একই সময়ে বাংলাদেশও তার স্বার্থের অগ্রাধিকার ঠিক করতে পারলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে সর্বোচ্চ স্বার্থ আদায় করে নেয়ার সুযোগ রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র তাদের নাগরিকদের নিরাপত্তাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে থাকে। কোথাও কোনো মার্কিন নাগরিকের ওপর হামলা হলে বা জীবন বিপন্ন হওয়ার মতো অবস্থার সৃষ্টি হলে আমেরিকা কখনো ছাড় দেয় না।

সম্প্রতি বাংলাদেশে কাজ করতে গিয়ে বেশ কয়েকজন মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে তিক্ত অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনা থেকে বর্তমান রাষ্ট্রদূত পিটার হাস পর্যন্ত আমরা দেখেছি, দেখছি। এগুলো কোনো দেশের কূটনীতিকদের নিত্যনৈমিত্তিক কাজ নয়।

বাংলাদেশের জনগণের পাশে নিজেদের মূল্যবোধ নিয়ে দাঁড়াতে গিয়ে রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনাকে অপদস্ত হতে হয়েছে। ‘কাজের মেয়ে মর্জিনা’ বলে দেশের দায়িত্বশীল লোকজনও তাকে হেয় করেছেন। বাংলাদেশের সব জেলা ঘুরে মজিনা বাংলাদেশ সম্পর্কে জানার চেষ্টা করেছেন। একটি দেশের সমাজ সংস্কৃতির ভেতরে প্রবেশের এমন চেষ্টা করে মার্কিন একজন রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসা পেয়েছেন। এখন অবসরে থাকা ড্যান মজিনা ব্যক্তিগত আলাপকালে কখনো সরকারের প্রতি কোনো উচ্ছ্বাস দেখাতে দেখা যায় না।

এমনকি পাশ্চাত্য সৌজন্যবোধ সম্পন্ন সাধারণ মানুষও প্রকাশ্যে কাউকে অপমানজনক কিছু বলতে অভ্যস্ত নয়। আপনি একজন কূটনীতিক হলে, এই ভদ্রতা, অন্যের উপর রাগ দমন করার চর্চা শৈল্পিক পর্যায়ে। তারপরও ড্যান মজিনার সভা সমিতিতে বাংলাদেশে তার সময়ের কথা বলেন। সরকারের আসল চেহারাই হোক, কূটনৈতিক কুটিল হাসিই হোক- তিনি তার মনোভাব ব্যাখ্যা করেন।

বাংলাদেশে রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটের ওপর হাম”লা হয়েছে। বর্তমান রাষ্ট্রদূত পিটার হাস তার নিজের এবং সহকর্মীদের নিরাপত্তার জন্য উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। সরকারি দলের কয়েকজন নেতাও তাকে হুমকি দিয়ে বক্তব্য দিচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্র তার নাগরিকদের নিরাপত্তার জন্য যেকোনো কিছু করতে প্রস্তুত। যুক্তরাষ্ট্র বিদেশে অবস্থানরত কূটনীতিকদের নিরাপত্তার সঙ্গে আপস করতে পারে না।

দিন দিন ঋণ বেড়েছে। মানবাধিকার, গণতন্ত্র, অর্থনৈতিক উন্নয়ন সহযোগিতা সহ তার লক্ষ্য অর্জনের জন্য বিভিন্ন কৌশল ব্যবহার করার ক্ষমতা যুক্তরাষ্ট্রের রয়েছে। বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে তারা সমঝোতার চিঠি নিয়ে বসবে এমনটা ভাবার কোনো কারণ নেই। আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ক্রমাগত দ্বন্দ্বের কারণে পরিস্থিতি বর্তমান পর্যায়ে এসেছে। এ অবস্থায় আমেরিকার পিছু হটার কোনো সুযোগ নেই।

বর্তমান বিশ্বের রাজনৈতিক ও বাণিজ্যিক বাস্তবতায় আমেরিকাসহ পশ্চিমা শক্তিগুলোর বিরোধিতা করে কোনো দলের পক্ষে টিকে থাকা কি সম্ভব? যদি সম্ভব না হয়, এজন্য কাদের মূল্য দিতে হবে? যারা গোঁ ধরেছেন তারা , না দেশের জনগণ?-সবাইকেই মূল্য দিতে হবে।

ভিসা নীতির কথা স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়েছে। ওয়াশিংটন বিশ্বাস করে যে, ভিসা নিষেধাজ্ঞা কিছুটা কাজ করেছে। পরবর্তী পদক্ষেপ কি হতে পারে? আরো নিষেধাজ্ঞা? বাণিজ্য অবরোধ? – এসব প্রকাশ্য কর্মকাণ্ড ছাড়াও আমেরিকার হাতে দেশে অনেক ঘটনা ঘটেছে।

এই ঘটনার অনেক পরে হলিউডের সিনেমাও আছে এই নিয়ে। হায়! আমরা অনেকেই হয়তো সেই সিনেমাগুলো দেখার জন্য বেঁচে থাকব না।

প্রতিবেদনটির লেখক ইব্রাহীম চৌধুরী খোকন.

 

About bisso Jit

Check Also

বাঁধন নৌকার লোক বলে কঠিন পরিণতি ভোগ করতে হইতো: পিনাকি

ছাত্র আন্দোলনে তারকাদের মধ্যে প্রথম সারিতে ছিলেন অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন। তিনি আওয়ামী সরকারের বিরুদ্ধে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *