‘আমি এক হতভাগ্য বাবা। আমার দুর্ভাগ্য, আমার একমাত্র ছেলে ধর্ষণের মতো অপরাধে অভিযুক্ত একজনকে পালাতে সহায়তা করেছে। ছেলের এ ধরনের কাজের জন্য বাবা হিসেবে আমি অনুতপ্ত।’ এ কথাগুলো জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নারীকে ধর্ষণে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতাকে পালাতে সহায়তার অভিযোগে গ্রেপ্তার ছাত্রলীগ কর্মী সাগর সিদ্দিকীর বাবা মফিজুল হক সিদ্দিকীর।
মঙ্গলবার দুপুরে এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। এ সময় তার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছেলেকে আটকের ঘটনায় অভিভাবক হিসেবে পারিবারিক অবস্থান নিয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন।
গ্রেফতারকৃত সাগর সিদ্দিকী জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের স্নাতকোত্তর ছাত্র। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের আবাসিক ছাত্র এবং একই হলের ছাত্রলীগ শাখার সভাপতি পদের প্রার্থী ছিলেন। তার বাড়ি কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বরী উপজেলার নেওয়াশী ইউনিয়নের নেওয়াশী গ্রামে। সে ওই গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মফিজুল হক সিদ্দিকীর ছেলে। বাবা-মায়ের দুই ছেলে মেয়ের মধ্যে সাগর সবার ছোট এবং একমাত্র ছেলে।
সাগর সিদ্দিকীর বাবা বলেন, তিনি (সাগর) এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন। একজন অপরাধীকে আইনের কাছে আত্মসমর্পণ না করে তাকে পালাতে সহায়তা করা অপরাধ। সে ভুল করেছে। পরিবার হিসেবে আমরা এবং আমি ব্যক্তিগতভাবে তার ভুলের জন্য অনুতপ্ত। আমরা কষ্ট পাচ্ছি।’
অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক এই বাবা তার ভাঙ্গা স্বপ্ন নিয়ে বলেন, আমি চাইনি সে ছাত্র রাজনীতি করুক। আমি তাকে আমার আদর্শে ঢেলে সাজানোর চেষ্টা করেছি। কী স্বপ্ন দেখলাম, আর কী হল! আমার এখন ফোনে কারো সাথে কথা বলা কঠিন। আমার বাইরে যাওয়া কঠিন, লজ্জা লাগে। আমি খুবই হতাশ।
বর্তমান ছাত্র রাজনীতির প্রভাবে শিক্ষার্থীরা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে উল্লেখ করে শিক্ষক এ বাবা বলেন, বর্তমান ছাত্র রাজনীতি আগের বা আশির দশকের ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে যায় না। কোনো অভিভাবকই চান না তাদের সন্তান ছাত্র রাজনীতি করুক। আমি আমার ছেলের সাথে হাজার বার কথা বলেছি। বারবার তাকে ছাত্র রাজনীতি করতে নিষেধ করেছি। তিনি রাজনীতিতে জড়াতে চাননি। আমি তাকে বললাম, বাবা আমরা গরিব মানুষ। তুমি পড়ালেখা শেষ করে চাকরি পাবে, এটাই আমার স্বপ্ন। কিন্তু তারপরও তিনি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।
আমি দুঃখিত. সন্তানের কিছু ভুল হলে বাবা-মা অনুতপ্ত হন। এটা স্বাভাবিক. এর কোন ব্যাখ্যা নেই,” তিনি যোগ করেছেন।
উল্লেখ্য, গত শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মোশাররফ হোসেন আবাসিক হলের ৩১৭ নম্বর কক্ষে স্ত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্ত মোস্তাফিজুর রহমান ও মামুনুর রশিদ মামুন। ঘটনার পর আসামি মোস্তাফিজুর রহমানকে পালাতে সহায়তা করার অভিযোগ ওঠে বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ছাত্র মোস্তফা মনোয়ার সিদ্দিকী ওরফে সাগর সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে। পরে পুলিশ তাকেসহ চারজনকে আটক করে। এ ঘটনায় ছয় শিক্ষার্থীর সনদ স্থগিত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সাগর সিদ্দিকীসহ তিনজনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। বাকি তিনজনের ছাত্রত্ব শেষ হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় তাদের অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে এবং তাদের সার্টিফিকেট স্থগিত করে।