সম্প্রতি ২১ বছর আগে লেখা একটি চিঠি হঠাৎ ভাইরাল হয়ে যায়। ২০০১ সালে টুইন টাওয়ারে হামলার বার্ষিকীতে, ওসামা বিন লাদেন আমেরিকান সরকার এবং জনগণকে একটি লিখিত এবং ভিডিও বার্তা পাঠিয়েছিলেন। তিনি ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের মোস্ট ওয়ান্টেড সন্ত্রা”সী এবং টুইন টাওয়ারে হামলার প্রধান সন্দেহভাজন। তিনি ২০১১ সালে পাকিস্তানে একটি অভিযানে মার্কিন নেভি সিল সডস্যদের হাতে নিহত হন।
দ্য গার্ডিয়ান, একটি নেতৃস্থানীয় ব্রিটিশ মিডিয়া আউটলেট, ২০০২ সালে বিন লাদেনের সঠিক লিখিত বার্তাটি প্রকাশ করে। যদিও এই বার্তাটি সম্বলিত সংবাদটি তাদের ওয়েবসাইটে দীর্ঘদিন ধরে ছিল, তবে সম্প্রতি এটি ভাইরাল হওয়ার পরে এটি সরিয়ে ফেলা হয়েছে।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লিনেট অ্যাডকিন্স নামে একজন ব্যক্তি সম্প্রতি টিকটকে ‘লেটার টু আমেরিকা’ হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে লাদেনের একটি ভিডিও বার্তা শেয়ার করেছেন। এরপরই ভিডিওটি দেখা হয়েছে প্রায় দেড় লাখ বার।
অন্যরাও শেয়ার করায় ভিডিওটি দ্রুত ভাইরাল হয়ে যায়। দীর্ঘদিন ধরে ফিলিস্তিন দখলে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে আমেরিকার বিরুদ্ধে বিরূপ কথা শুরু হয়। আমেরিকান নেটিজেনরা নিজেরাই আমেরিকার নীতির সমালোচনা শুরু করে। এই পরিস্থিতিতে ভিডিওটি সরিয়ে দিল টিক টক কর্তৃপক্ষ।
বার্তাটি ভাইরাল হওয়ার সবচেয়ে বড় কারণ হল ‘ফি”লিস্তিন’ ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান।
চলমান ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাতের প্রেক্ষাপটে, এই সমস্যা বা হ্যাশট্যাগটি এক মাস ধরে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে শীর্ষ প্রবণতা বা ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়েছে। এই অবস্থায় ২১ বছরের পুরনো এই চিঠিতে ফিলিস্তিনে ইসরাইলের আগ্রাসনে আমেরিকার ভূমিকার বিষয়টি উঠে আসায় আলোচনা নতুন মাত্রা পেয়েছে।
সেই খোলা চিঠিতে, বিন লাদেন ব্যাখ্যা করেছিলেন কেন তারা আমেরিকা এবং এর জনগণকে টার্গেট করেছিল। বার্তায় মুসলমানদের বিরুদ্ধে অবস্থান না নেওয়ার পাশাপাশি ইসলাম গ্রহণেরও আহ্বান জানানো হয়।
তিনি অভিযোগ করেন, ‘তোমরাই (আমেরিকা) আমাদের ওপর প্রথমে আক্রমণ করেছো, আর এখনো তা চালিয়ে যাচ্ছো।’
ফিলিস্তিন ইস্যুতে তিনি বলেন, ‘তোমাদের (আমেরিকা) সাহায্য আর সমর্থনেই ব্রিটিশরা ফিলিস্তিনকে ইহুদিদের হাতে তুলে দিয়েছে। তোমাদের সাহায্যেই ইসরাইলিরা ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ফিলিস্তিনে সামরিক দখল অব্যাহত রেখেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমেরিকার দীর্ঘ অবরোধ ও নিষেধাজ্ঞার কারণে এ পর্যন্ত দেড় লাখেরও বেশি ইরাকি শিশু মা”রা গেছে। কিন্তু আপনি এখন পর্যন্ত মনোযোগ দেননি। কিন্তু যখনই আপনার দেশে (টুইন টাওয়ারে) তিন হাজার মানুষ মারা গেছে, তখনই পুরো বিশ্ব পাগল হয়ে গেছে।’
বিভিন্ন দেশে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, বিভিন্ন মুসলিম দেশের সরকার আপনার এজেন্ট হিসেবে কাজ করছে এবং আপনার নির্দেশ, পরামর্শ ও সম্মতিতে নিরীহ মানুষের ওপর হা”মলা করছে।
জাপানের হিরোশিমা-নাগাসাকি পারমা”ণবিক হা”মলা, আফগানিস্তানের গণহ”ত্যা, ইরাকের দীর্ঘ অবরোধ, আলজেরিয়ার নির্বাচিত ইসলামী সরকারের উৎখাত, বন্দিদের নির্বিচারে হ”ত্যা, গুয়ানতানামো নির্যাতন ইত্যাদির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আপনারা মানবাধিকারের কথা বলেন, ‘তোমরা মানবাধিকার, গণতন্ত্র, শান্তির কথা বলো, অথচ নিজেরাই এসব ভঙ্গ করো।’