বিশ্বমানের সুবিধা ও যাত্রীসেবার প্রতিশ্রুতি নিয়ে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল উদ্বোধন করা হয়েছে। আজ (শনিবার) সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর উদ্বোধন করেন।
প্রধানমন্ত্রী ২৮ ডিসেম্বর ২০১৯ তারিখে এই টার্মিনাল নির্মাণের উদ্বোধন করেন। আজকের উদ্বোধনকে ‘সফট ওপেনিং’ বলা হচ্ছে। আগামী বছরের শেষ নাগাদ টার্মিনালটির পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হবে।
এ টার্মিনাল নির্মাণে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২১ হাজার ৩৯৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ দিচ্ছে ৫ হাজার কোটি টাকা। বাকি তহবিল জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) প্রদান করে।
বিশ্বের অনেক বিমানবন্দর রয়েছে যার টার্মিনাল বাংলাদেশের একটি সম্পূর্ণ বিমানবন্দরের সমতুল্য। এসব বিমানবন্দরে সব ধরনের আধুনিক সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। যেখানে একজন যাত্রী সহজেই বিমানবন্দরের সব ধাপ অতিক্রম করে উড়োজাহাজে চড়তে পারেন। এশিয়াতেও এমন অনেক বিমানবন্দর রয়েছে। তৃতীয় টার্মিনাল দিয়ে বাংলাদেশেও এমন সুবিধা পেতে যাচ্ছেন উড়োজাহাজের যাত্রীরা
চলুন দেখি এই টার্মিনালে কি কি সুবিধা আছে
৫ লাখ ৪২ হাজার বর্গমিটার আয়তনের এই টার্মিনালে ৩৭টি প্লেন একসাথে রাখার জায়গা করা হয়েছে । তবে এই টার্মিনালের সবচেয়ে সুন্দর জিনিস হল আধুনিক টার্মিনাল বিল্ডিং। ২৩০,০০০ বর্গ মিটারের বিল্ডিংয়ের ভিতরে, বিশ্বের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য এবং উন্নত প্রযুক্তির ছোঁয়া রয়েছে।
স্ট্রেইট এসকেলেটর
নির্মাণাধীন তৃতীয় টার্মিনালটিতে বেশ কয়েকটি সোজা এসকেলেটর রয়েছে। যারা দীর্ঘ পথ হেঁটে বিমানবন্দরে যেতে পারেন না তাদের জন্যই এই ব্যবস্থা। সিঙ্গাপুর, ব্যাংকক সহ বিশ্বের আধুনিক বিমানবন্দরগুলিতে বেশি যাত্রী প্রবাহের জায়গাগুলোতে এ এসকেলেটরগুলো ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।
অতিরিক্ত ১ কোটি ২০ লাখ যাত্রী সেবা পাবেন
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বর্তমানে দুটি চালু টার্মিনাল রয়েছে। এই দুটি টার্মিনাল দ্বারা বছরে প্রায় 8 মিলিয়ন যাত্রী পরিষেবা দেওয়া হয়। বেবিচাকের মতে, তৃতীয় টার্মিনালটি চালু হলে বার্ষিক অতিরিক্ত ১২ মিলিয়ন যাত্রী পরিষেবা দেওয়া সম্ভব হবে। পরে অবশ্য তা বেড়ে দাঁড়াবে ১ কোটি ৬০ লাখ। ফলে আগামীতে এ বিমানবন্দর দিয়ে ২ কোটি ৪০ লাখ যাত্রী যাতায়াত করতে পারবে।
অত্যাধুনিক ব্যাগেজ বেল্ট
নতুন টার্মিনালে যাত্রী ব্যাগের জন্য তিনটি আলাদা স্টোরেজ এরিয়া রয়েছে। রেগুলার ব্যাগেজ স্টোরেজ, লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড এবং অড সাইজ (অতিরিক্ত ওজনের) ব্যাগেজ স্টোরেজ।
টার্মিনালে ১৬টি ব্যাগেজ বেল্ট রয়েছে, যা সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি এবং ব্যাংককের সুবর্ণভূমি বিমানবন্দরের মতো। অতিরিক্ত ওজনের (বিজোড় আকারের) লাগেজের জন্য আরও চারটি পৃথক বেল্ট স্থাপন করা হবে। এছাড়া ব্যাগেজ এলাকাসহ বিমানবন্দরের বিভিন্ন স্থানে রেখে যাওয়া লাগেজের জন্য আলাদা লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড ব্যাগেজ এরিয়া থাকবে।
১০০০ গাড়ির ধারণক্ষমতা সহ বহুতল গাড়ি পার্কিং
এই বিশ্বমানের টার্মিনালটিতে ১,৪৪৪টি গাড়ির ধারণক্ষমতা সহ একটি বহুতল গাড়ি পার্কিং সুবিধা রয়েছে। নতুন টার্মিনালটি একটি করিডোরের মাধ্যমে পুরানো দুটি টার্মিনালের সাথে যুক্ত হবে। ঢাকার ব্যস্ত সড়কে যানজট এড়াতে অবকাঠামোও তৈরি করা হচ্ছে। মেট্রোরেল এবং এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সমস্ত রুট টার্মিনাল III এ শেষ হবে।
শিশুর যত্ন-শিশুদের খেলার এরিয়া
নতুন টার্মিনালে প্রতিটি ওয়াশরুমের সামনে একটি বেবি কেয়ার লাউঞ্জ থাকবে। লাউঞ্জে মায়েদের বুকের দুধ খাওয়ানোর বুথ, ডায়াপার পরিবর্তন করার জায়গা এবং একটি বড় পারিবারিক বাথরুম থাকবে। এ ছাড়া শিশুদের খেলার জায়গা থাকবে স্লিপার-সুইংসহ।
নতুন টার্মিনালে ২৩ ঘন্টা ডাক্তারের সাথে স্বাস্থ্য পরিদর্শন সুবিধা, প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য প্রাথমিক চিকিৎসা কক্ষ, বিভিন্ন রোগের পরীক্ষা কেন্দ্র এবং আইসোলেশন এলাকা রয়েছে।
১০টি স্বয়ংক্রিয় ই-গেট
অন্যান্য দেশ থেকে বাংলাদেশে আসা যাত্রীদের জন্য পাঁচটি ই-গেট থাকবে। এছাড়াও ১৭৭টি চেক-ইন কাউন্টার, ৬৪টি ডিপার্চার ইমিগ্রেশন ডেস্ক এবং ৬৪টি আগমন ইমিগ্রেশন ডেস্ক থাকবে। যাত্রী স্ক্রিনিং সিস্টেমেও পরিবর্তন আসছে। বডি স্ক্যানার স্বয়ংক্রিয়ভাবে ডিভাইসটি স্ক্যান করবে।
মুভি লাউঞ্জ, ফুড কোর্ট, ওয়াই-ফাই সুবিধা
নতুন টার্মিনালে বিমানবন্দরে সময় কাটানোর জন্য মুভি লাউঞ্জ, এয়ারলাইন্স লাউঞ্জ, ডে-রুম থাকবে। এছাড়াও, ঘোরাঘুরি এবং কেনাকাটার জন্য ১৪টি স্পটে ডিউটি ফ্রি শপ প্রস্তুত করা হচ্ছে। টার্মিনালের বাইরে ও ভেতরে ফুড কোর্ট, ফুড গ্যালারি, ওয়াই-ফাই ও মোবাইল চার্জিং সুবিধা থাকবে।
এছাড়া নারী ও পুরুষের জন্য আলাদা নামাজের ব্যবস্থা থাকবে। টার্মিনাল-৩-এ একটি মিটার এবং গ্রিটার্স প্লাজাও থাকবে দর্শনার্থীদের যাত্রী তোলার জন্য।
অত্যাধুনিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা
নতুন টার্মিনালে নিরাপত্তার জন্য ২৭টি ব্যাগেজ স্ক্যানিং মেশিন, ১১টি বডি স্ক্যানার থাকবে। টার্মিনালে প্রবেশকারী একজন যাত্রীকে বিমানে ওঠা পর্যন্ত হাতের স্পর্শ ছাড়াই স্বয়ংক্রিয়ভাবে অনুসন্ধান করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে যাত্রীকে বডি স্ক্যানার মেশিনের ভেতরে দুই হাত তুলতে হবে। এতে যাত্রী ও বিমানবন্দরের নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের সময় বাঁচবে। স্ক্যানিংও হবে নির্ভুল ও স্বচ্ছ।
বর্তমানে ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট বিমানবন্দরের অভ্যন্তরে একটি স্থানে সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রয়েছে। তবে নতুন টার্মিনাল ভবন এলাকায় একটি পূর্ণাঙ্গ ফায়ার স্টেশন নির্মাণ করা হচ্ছে। আলাদা ফায়ার স্টেশন ম্যানেজার থাকবে। অগ্নিনির্বাপণ ও জরুরি উদ্ধারের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা থাকবে।