সমগ্র দেশ জুড়ে বর্তমান সময়ে আলোচনা-সমালোচনার শীর্ষে রয়েছেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান। সম্প্রতি অশালীন ও কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দিয়ে বির্তকের মুখে পড়েছেন তিনি। এরই সূত্র ধরে তিনি হারিয়েছেন তার মন্ত্রীত্ব পদ। এমনকি তিনি নিজ দলীয় পদও হারিয়েছেন। পদ হারিয়ে কানাডায় পাড়ি দেওয়ার উদ্দেশ্যে দেশ ত্যাগ করেছিলেন। তবে নানা জটিলতার সম্মুখীন হয়ে কানাডায় প্রবেশ করতে পারননি তিনি। এমনকি তাকে দেশে ফিরতে হয়েছে। কী কারনে কানাডায় ঢুকতে পারেননি তিনি। এই বিষয়ে বিস্তারিত উঠে এলো প্রকাশ্যে।
অশালীন ও কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দিয়ে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগে বাধ্য হওয়া ডা. মুরাদ হাসান গত শুক্রবার দুপুরে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে কানাডার টরন্টো পিয়ারসন্স আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। কানাডা ইমিগ্রেশন ও বর্ডার সার্ভিস এজেন্সির কর্মকর্তারা দীর্ঘসময় জিজ্ঞাসাবাদের পর তাকে বিমানবন্দর থেকেই ফেরত পাঠান। এর আগে গত সেপ্টেম্বরেই ডা. মুরাদ হাসান কানাডায় গিয়েছিলেন। অথচ তিন মাসের ব্যবধানে পরিস্থিতি পুরোপুরি পাল্টে গেল, দেশটিতে তিনি ঢুকতেই পারলেন না। কানাডায় যাতে মুরাদকে ঢুকতে দেওয়া না হয়, সে জন্য প্রবাসীদের একটি অংশ সক্রিয় ছিল আগে থেকেই। প্রবাসীদের বেশ কয়েকটি সংগঠন এ নিয়ে কাজ করছিল। এসব সংগঠনের মধ্যে অন্যতম ‘লুটেরা বিরোধী মঞ্চ’। সংগঠনটির সংগঠক ও ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডির গবেষক মঞ্জুরে খোদা টরিক এ বিষয়ে গণমাধ্যমকে বলেন, কানাডায় সব কিছুই খুব নিয়মতান্ত্রিক। অনিয়মের দেখা মিলবে না এ দেশে। মুরাদ হাসানের কানাডা আসার খবরে আমরা এখানে কানাডার বর্ডার সার্ভিসেস এজেন্সির ওয়েবসাইটে গিয়ে ইমেইল করি। বাংলাদেশে মুরাদ হাসানের অপকীর্তির কথা বিস্তারিত লিখি। এর সঙ্গে বিভিন্ন সংবাদ ও মুরাদের ভিডিও ক্লিপ জুড়ে দিই। শুনেছি আমাদের মতো এমন ১৭১ ইমেইল নাকি গেছে এজেন্সিতে। এখানে কর্মরত দুই বাংলাদেশি সাংবাদিক এ তথ্য জানিয়েছে আমাদের। কানাডা প্রশাসন এসব আবেদনকে গুরুত্বের সঙ্গেই নিয়েছে, যার কারণে মুরাদকে দেশটিতে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।
অবশ্য ঢাকায় কানাডীয় হাইকমিশন থেকে বলা হয়েছে— করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে যেসব কাগজপত্র থাকা প্রয়োজন ছিল, তা না থাকায় মুরাদ হাসানকে বিমানবন্দরে আটকে দেওয়া হয়। তবে মুরাদকে টরেন্টো বিমানবন্দরে আটকে দেওয়ার বিষয়ে কানাডার বর্ডার সার্ভিসেস এখনও কিছুই জানায়নি বলে তথ্য দিয়েছেন কানাডায় অবস্থিত বাংলাদেশের হাইকমিশনার খলিলুর রহমান। তিনি বলেন, কানাডার বর্ডার সার্ভিসেস এজেন্সির সঙ্গে আমাদের নিয়মিত যোগাযোগ থাকে। যদি বাংলাদেশের কোনো নাগরিককে কানাডায় প্রবেশে তারা বাধা দেয়, এমপি হোক বা সাধারণ নাগরিক হোক অর্থাৎ যে কোনো ব্যাপারে কোনো ঝামেলা হলে তারা জানায় আমাদের। কিন্তু মুরাদ হাসানের ব্যাপারে আমাদের কিছু জানায়নি তারা। কানাডায় ঢুকতে না পেরে বর্তমানে সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) দুবাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বসে আছেন তথ্য প্রতিমন্ত্রীর পদ হারানো জামালপুর-৪ আসনের এই সংসদ সদস্য।
ডা. মুরাদ হাসানের বক্তব্যকে ঘিরে বিএনপি দলও তার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। এমনকি প্রধানমন্ত্রীর কাছে জোড়ালো ভাবে তার পদত্যাগের দাবি জানিয়েছে। এখন তার এমপি পদ নিয়েও নানা প্রশ্ন উঠেছে। তবে এই বিষয়ে হাইকোর্ট বিস্তারিত জানিয়েছে।