Monday , November 18 2024
Breaking News
Home / National / কী আছে আলোচিত শরীফার গল্পে?

কী আছে আলোচিত শরীফার গল্পে?

নতুন পাঠ্যক্রমের আলোকে সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সমাজ বিজ্ঞান বইয়ের একটি অধ্যায়ে ‘শরিফার গল্প’ নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক খণ্ডকালীন শিক্ষক একটি অনুষ্ঠানে এ বিষয়ে একটি বইয়ের পাতা ছিঁড়ে ফেলার পর বিষয়টি সামনে এসেছে। ঘটনার ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।

বিষয়টি নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় চলছে তুমুল আলোচনা। মঙ্গলবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখোমুখি হন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী।

তিনি বলেন, পাঠ্যপুস্তকে হিজড়া সম্প্রদায় সম্পর্কে জনসচেতনতামূলক পাঠ উপস্থাপনে কোনো বিতর্ক বা বিভ্রান্তি থাকলে এবং কিছু পরিবর্তন আনা যেতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। পাঠ্যবইয়ে আসলে কী আছে?

জানা যায়, ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের ‘মানুষের সাদৃশ্য ও পার্থক্য’ অধ্যায়ের একটি অংশে এ বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

সেই অংশে, খুশি আপা (শিক্ষিকা) একজন অতিথিকে ক্লাসে নিয়ে আসে। বললেন, তোমার স্কুলে সে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ে। আজ সে তার স্কুল দেখতে এসেছে। সুমন (ছাত্র) জিজ্ঞেস করল, তোমার নাম কি? তিনি বলেন, আমার নাম শরিফা আক্তার। এরপর শরিফা তার জীবনের গল্প বলা শুরু করেন। শরীফা বলেন, আমি যখন তোমার স্কুলে পড়তাম তখন আমার নাম ছিল শরীফ আহমেদ। আনুচিং (ছাত্র) অবাক হয়ে বলল, তুমি ছেলে থেকে মেয়ে হয়ে গেলে কিভাবে? শরিফা বলেন, তখন যা ছিলাম এখনো তাই আছি। আমি শুধু নাম পরিবর্তন করেছি। তারা শরীফার কথা ঠিকমতো বুঝতে পারেনি।

আনাই (ছাত্র) তাকে জিজ্ঞেস করল, তোমার বাড়ি কোথায়? শরীফা বলল, আমার বাসা বেশ কাছে। কিন্তু আমি এখন দূরে থাকি। আনাই মাথা নেড়ে বলল, বুঝলাম, আমার পরিবার যেমন অন্য জায়গা থেকে এখানে এসেছে, আপনার পরিবারও এখান থেকে অন্য জায়গায় চলে গেছে।
শরিফা বলল, তা নয়। আমার পরিবার এখানে আছে. আমি তাদের ছেড়ে অপরিচিতদের সাথে থাকতে শুরু করি। এখন এটাই আমার পরিবার। তাদের অবাক হতে দেখে শরিফা তার জীবনের কথা বলতে থাকে।

ছোটবেলায় সবাই আমাকে ছেলে বলে ডাকত। কিন্তু একসময় বুঝলাম আমার শরীরটা ছেলের মতো হলেও আমি মনে মনে মেয়ে। আমি মেয়েদের মত সাজতে পছন্দ করতাম। কিন্তু বাড়ির কেউ আমার পছন্দের কাপড় কিনতে রাজি হবে না। আমি লুকিয়ে লুকিয়ে বোনের জামাকাপড় পরতাম। ধরা পড়লে তাকে বকাবকি করা হতো এমনকি মারধরও করা হতো। আমি মেয়েদের সাথে আরও খেলতে চেয়েছিলাম। কিন্তু মেয়েরা আমাকে খেলায় নিতে চায়নি। এমনকি আমি যখন ছেলেদের সাথে খেলতে যেতাম, তারা আমার কথাবার্তা, আচরণে হাসতো। স্কুলে, আশেপাশের সবাই-এমনকি বাড়ির লোকেরাও আমাকে উপেক্ষা করেছিল। আমি এমন কেন?

একদিন এমন একজনের সাথে দেখা হলো যাকে সমাজের সবাই মেয়ে বলে ডাকে; কিন্তু সে নিজেকে ছেলে মনে করে। ভাবলাম, এই মানুষটাও আমার মতো। তিনি আমাকে বললেন, আমরা পুরুষ না নারী, আমরা তৃতীয় লিঙ্গ। সেই লোকটা আমাকে এমন একটা জায়গায় নিয়ে গেল যেখানে নারী-পুরুষ ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের মানুষ আছে।

তাদের বলা হয় ‘হিজড়া’ সম্প্রদায়। তাদের সবাইকে তাদের ‘গুরু মা’ দেখেছেন। আমি যখন সেখানে গিয়েছিলাম তখন আমি একা অনুভব করিনি, আমার মনে হয়নি যে আমি অন্য সবার থেকে আলাদা। সেই মানুষগুলোর সাথেই থাকলাম। এখানকার নিয়ম, ভাষা, রীতিনীতি আমাদের বাড়ির থেকে একেবারেই আলাদা। আমরা সকল সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করি এবং একটি পরিবারের মতো বসবাস করি। বাড়ির লোকজনের জন্যও এটা খুবই দুঃখজনক। তাই মাঝে মাঝে বাসায় যাই।

আজ থেকে 20 বছর আগে বাড়ি ছেড়েছি। তারপর থেকে আমি আমার নতুন বাড়ির সহচরদের সাথে শহরের বিভিন্ন বাড়িতে গিয়ে নতুন বাচ্চাদের এবং নতুন বর-কনেকে আশীর্বাদ করে অর্থ উপার্জন করছি। মাঝে মাঝে আমি লোকদের টাকা সংগ্রহ করতে বলি। আমরাও সমাজের আর দশজন সাধারণ মানুষের মতো বাঁচতে চাই, পড়াশোনা করতে চাই, কাজ করতে চাই এবং ব্যবসা করতে চাই। এখনো অধিকাংশ মানুষ আমাদের সাথে মিশতে চায় না, যোগ্যতা থাকলেও কাজ করতে চায় না। কিন্তু আজকাল অনেকেই আমাদের প্রতি বেশ সহানুভূতিশীল।

ইদানীং আমাদের মতো অনেকেই বাড়ি থেকে লেখাপড়া করছেন। পৃথিবীর সব দেশেই আমাদের মতো মানুষ আছে। অনেক দেশেই তারা সমাজের অন্যদের মতো বাস করে। কিন্তু আমাদের দেশের অবস্থাও বদলে যাচ্ছে।

2013 সালে আমরা সরকার কর্তৃক স্বীকৃত হয়েছিলাম। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা আমাদের জন্য কাজ করছে। শিক্ষার ব্যবস্থা করা, কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা। সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের চেষ্টা চলছে। বাংলাদেশের হিজড়া সম্প্রদায়ের অনেকেই যেমন নজরুল ইসলাম রিতু, শাম্মী রানী চৌধুরী, বিপুল বর্মণ সামাজিক জীবন ও পেশাগত জীবনে সাফল্য অর্জন করেছেন।

তারপর কর্মক্ষেত্রে কিছু সফল ট্রান্সজেন্ডারের ছবি দেওয়া হয়।

তারপর নতুন প্রশ্নের শিরোনামে আরও বলা হয়েছে,

“তারা এতদিন ধরে জানে যে মানুষ হয় ছেলে না মেয়ে। এখানে যে বৈচিত্র্য থাকতে পারে তা তারা কখনো শোনেনি বা চিন্তাও করেনি। কিন্তু সবাই আলাদা হওয়ার জন্য শরিফাকে পরিহার করেছে, এমনকি তার পরিবারও! শরিফার জীবনের গল্প শুনে সবার মন জুড়িয়ে যায়। এমন দুঃখে পরিপূর্ণ ছিল যে তারা তাকে আরও প্রশ্ন করতে চায়নি।

তারপর নিজেদের মধ্যে আলোচনা এবং প্রশ্নের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের শেখার অংশ রয়েছে।

সেদিন বাড়ি ফেরার পথে গণেশ, রনি, আয়েশা, ওমেরা ও নীলা কথা বলছিল:

গণেশ: তাহলে ছেলে-মেয়ে ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের মানুষ আছে।

রনি: আমার মা বলে ছোট বাচ্চাদের বাচ্চা হয় না। তারা বড় হয়ে ছেলে বা মেয়ে হয়।

আয়েশা:গেম রোকেয়ার লেখা একটা গল্প পড়ে শুনছিলাম। গল্পটার নাম ‘সুলতানার স্বপ্ন’। সেখানে এমন একটি জায়গা যেখানে কল্পনা করা হয়েছে যেখানে আমি আমার ভূমিকায় উল্টেছি।

চলো, আমরাও নারী-পুরুষের ভাবনা, সমাজে তাদের ভূমিকা আর ভাবনা সম্পর্কে বন্ধুদের সঙ্গে গল্প করি।

About Zahid Hasan

Check Also

যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সেন্টমার্টিন লিজ দেওয়ার বিষয়ে যা জানালেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি গুজব ছড়িয়েছে যে অন্তর্বর্তী সরকার সেন্টমার্টিন দ্বীপকে লিজ দিচ্ছে। তবে প্রধান …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *