ঈগল পরিবহনের একটি বাসে প্রায় তিন ঘন্টা ডাকাতের নিয়ন্ত্রনে নিয়ে বাসটিতে ডাকাতি করে কিছু ডাকাত দলের সদস্য। বাসটি কুষ্টিয়া থেকে যাত্রী নিয়ে ঢাকা যাচ্ছিল। বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম পাশে পৌঁছালে ১০-১২ জন যাত্রী তাতে ওঠেন। এই যাত্রীরা বাসে উঠে বাকি যাত্রীদের জিম্মি করে। যাত্রীদের হাত, মুখ ও চোখ বেঁধে তিন ঘণ্টা অ// স্ত্রের মুখে জিম্মি করে রাখা হয়।
টাঙ্গাইলের মধুপুরে মধ্যরাতে ৩ ঘণ্টা চলন্ত বাস নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এক নারী যাত্রীকে ছিনতাই ও খারাপ কাজের শিকারের ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন এক যাত্রী। যাত্রী কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের সলিমপুর এলাকার ফল ব্যবসায়ী। গত মঙ্গলবার রাতে স্ত্রী, দুই সন্তান ও শাশুড়িকে নিয়ে ওই বাসে ঢাকায় যান তিনি। ওই যাত্রী জানান, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে তিনি স্ত্রী, চার বছরের ছেলে ও দুই বছরের মেয়ে ও শাশুড়িকে নিয়ে দৌলতপুরের তারাগুনিয়া এলাকা থেকে ঈগল পরিবহনের বাসে ওঠেন। এ সময় বাসে ১০-১৫ জন যাত্রী ছিল। রাত সাড়ে এগারোটার দিকে সিরাজগঞ্জের একটি হোটেলের সামনে বাসটি থামে। বিরতির পর বাস চলতে থাকলে রাত ১২টার দিকে মহাসড়কে বাসের সামনে থেকে হাত তোলেন চা তরুন। এ সময় বাসচালকের সহকারী রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে তরুণদের সঙ্গে কথা বলেন। পরে তারা বাসে উঠে সুপারভাইজারের সঙ্গে কথা বলে বাসের পেছনে বসে। তবে তাদের মুখে মাস্ক ছিল। একজনের পিঠে ব্যাগ ছিল।
তারা বসার সাথে সাথেই মোবাইল ফোন বেজে উঠলো। বাসের ১৫ মিনিট পর রাস্তা থেকে আরো পাঁচজন বাসে উঠে। কয়েক মিনিট পর আরো দুইজন উঠে চালককে বাস থামাতে বলেন। এতে চালক রাজি না হওয়ায় তাকে বেদম প্রহার করা হয়। একপর্যায়ে চালকের আসনে বসে বাসের নিয়ন্ত্রণ নেয় এক ব্যক্তি। কিছু বোঝার আগেই তারা পুরুষ যাত্রীদের গলায় ছু// রি ও কাঁচি ধরে। এ সময় চার যুবক বাসের পর্দা কেটে পুরুষ যাত্রীদের মুখ, হাত-পা বেঁধে রাখে। বাসের ১০-১২ জন মহিলা যাত্রীর মধ্যে একজনের চোখ বেঁধে, মুখ বাঁধা এবং হাত বাঁধা ছিল। বাকিদের চোখ, মুখ ও হাত খোলা ছিল। ওই এক মহিলা যাত্রী তার শাশুড়ি। বাস তখনও চলছিল স্বাভাবিক গতিতে। বাসের আলো নিভিয়ে দেওয়া হয়েছে। পরে সকলের দেহ তল্লাশি করে নারী যাত্রীদের কাছ থেকে টাকা, মোবাইল ফোন ও স্বর্ণালঙ্কার লুট করে নিয়ে যায়। ওই যাত্রী আরো জানান, তিনি বাসের পেছনের সামনে তিনটি আসনে বসেছিলেন। তার হাত বাঁধা। তার থেকে দুই হাত দূরে একজন মহিলাকে তল্লাশি করার সময়, মহিলাটি প্রতিবাদ করেন। মহিলা ডাকাতদের বললেন, তোমরা যা করছ তা ঠিক না। আমার এলাকা পাবনায় হলে তোমায় দেখতাম। এ কথা শোনার পর ওই দুই যুবক ওই নারীকে বেদম প্রহার ও শারীরিক নির্যাতন করে।
যাত্রীর স্ত্রী জানান, তিনি তার এক সন্তানকে সিটে ধরে মাথা নিচু করে ভগবানের নাম উচ্চারণ করছেন। তার মা সামনের সিটে আরেক সন্তানের সাথে বসে ছিলেন। তার হাত, চোখ ও মুখ বাঁধা ছিল। তাদের এক সন্তান কাঁদলে এক যুবক এসে বললো, কাঁদো না, আমাদের মতো ডাকাত হয়ো না! ডাকাত দল সব কাজ শেষ করে একে অপরকে ডাকে। তারা ডাকাত দলের নেতাকে ‘চাচা’ বলে সম্বোধন করছিলেন। কখনো তাকে নুরু, সাব্বির, রকি নামে ডাকা হতো। ভোর ৩টার দিকে ডাকাতরা নিজেদের মধ্যে টাকা, মোবাইল ফোন ও স্বর্ণালঙ্কার ভাগাভাগি করতে থাকে। বাসের ভেতরে ভাগাভাগি নিয়ে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে তারা রাস্তার একপাশে গাড়ি থামিয়ে দ্রুত নেমে যায়। বাসের ভেতরে কোনো যাত্রী মাথা তুলে কথা বলার চেষ্টা করলে তাদেরও বেদম প্রহার করা হয়। ওই যাত্রী জানান, সকালে পুলিশ এলে কয়েকজন যাত্রীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কয়েকজনকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। পুলিশ স্টেশনে তাদের দুটি ছবি দেখায়। যাত্রীরা নিশ্চিত করেছেন যে ছবির দুই ব্যক্তি বাসে ছিলেন। বুধবার সারাদিন তারা মধুপুর থানায় ছিলেন। রাত নয়টার দিকে পুলিশ তাদের বিআরটিসির গাড়িতে টিকিট দেয়।
উল্লেখ্য, যতক্ষন ডাকাতি কার্যক্রম চলছিল ততক্ষণ বাসও চলছিল। ছিনতাই আর ধর্ষ// ণের মধ্যেই চলছিল বাসটি। মধুপুরের কাছে বাসটি দুর্ঘটনার কবলে পড়লে স্থানীয়রা এসে যাত্রীদের উদ্ধার করে। বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম দিক থেকে বাসের যাত্রীদের ছিনতাই করার পর এক নারী যাত্রীকে পালাক্রমে খারাপ কাজের ঘটনা ঘটানো হয়। কুষ্টিয়া ও ঢাকার মধ্যে চলাচলকারী ঈগল পরিবহনের যাত্রীরা আঁটজেলা ডাকাত দলের সদস্যদের এ ভয়াবহ ঘটনার শিকার হয়েছেন।