Wednesday , October 16 2024
Breaking News
Home / Countrywide / কালো পতাকা নিয়ে মাঠে এরা কারা?, যে আশঙ্কা গোয়েন্দাদের

কালো পতাকা নিয়ে মাঠে এরা কারা?, যে আশঙ্কা গোয়েন্দাদের

সম্প্রতি ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে কালেমা লেখা কালো ও সাদা পতাকা নিয়ে বেশ কিছু মিছিলের ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এসব মিছিলের মধ্যে প্রধান দাবি ছিল ফিলিস্তিনে চলমান গণহত্যা বন্ধ করা এবং ইসলামী খেলাফত কায়েম করা। পাশাপাশি মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর বিরুদ্ধে কটূক্তির প্রতিবাদও করা হয়েছে। তবে প্রশ্ন হলো, এই মিছিলের পেছনে কারা? কারা এই কর্মসূচি পালন করছে, এবং তাদের উদ্দেশ্য কী?

সরকারের বিভিন্ন সংস্থা ও গোয়েন্দা বাহিনী মনে করছে, এই মিছিলের পেছনে কোনো স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী থাকতে পারে, যারা দেশের স্থিতিশীলতা নষ্ট করতে চাইছে। বিশেষ করে, সরকার পরিবর্তনের পর যখন সবকিছু স্থিতিশীল করার চেষ্টা চলছে, ঠিক সেই মুহূর্তে এই ধরনের কর্মসূচি মাঠে নামানোর পেছনে কোনো ষড়যন্ত্র থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে জানা গেছে, নিষিদ্ধ একটি সংগঠন এই কর্মসূচির নেপথ্যে রয়েছে এবং তারা আইএস (ইসলামিক স্টেট)-এর ধাঁচে একটি আন্দোলন শুরু করতে চাইছে।

গোয়েন্দা সূত্র জানায়, হিযবুত তাহরির নামক একটি নিষিদ্ধ সংগঠনের সদস্যরা এসব মিছিলের পেছনে ভূমিকা রাখছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই সংগঠনটি তাদের কর্মসূচির ছবি এবং ভিডিও ছড়িয়ে দিচ্ছে, যা দেশের স্থিতিশীলতাকে বিঘ্নিত করার জন্য পরিকল্পিতভাবে করা হচ্ছে। তাদের লক্ষ্য হলো সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করা এবং দেশের অভ্যন্তরে অস্থিরতা সৃষ্টি করা।

ঢাকার নটর ডেম কলেজ, ঢাকা কলেজ এবং উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের শিক্ষার্থীদের দ্বারা বিভিন্ন মিছিল দেখা গেছে। বিশেষ করে ৬ই অক্টোবর ঢাকার জাতীয় সংসদ ভবনের সামনেও শিক্ষার্থীরা কালেমা লেখা কালো পতাকা এবং ফিলিস্তিনের পতাকা নিয়ে মিছিল করেছে। কিশোরগঞ্জের একটি মিছিলের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর বিষয়টি আরও আলোচনায় আসে।

এদিকে, ৭ই অক্টোবর গাজায় হামলার বার্ষিকী উপলক্ষে হিযবুত তাহরির বড় ধরনের একটি জমায়েতের প্রস্তুতি নিচ্ছিল, তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সতর্কতার কারণে তা প্রতিহত করা সম্ভব হয়েছে। তারপরও, তারা দেশের বিভিন্ন স্থানে মিছিল করে যাচ্ছেন এবং তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করছে।

গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক এবং রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান এডভোকেট হাসনাত কাইয়ূম বলেন, বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার পরিকল্পনা একটি সুস্পষ্ট লক্ষ্য নিয়ে কেউ মাঠে নেমেছে। পরাজিত শক্তিগুলো এ ধরনের কর্মসূচির পেছনে রয়েছে বলে মনে করছেন তিনি। তিনি আরও বলেন, দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকারকে বিব্রত করার জন্য কেউ এ ধরনের মিছিলের মাধ্যমে ফায়দা লুটতে চাইছে।

অন্যদিকে, খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব অধ্যাপক আবদুল জলিল বলেন, এই ধরনের কালো পতাকা নিয়ে মিছিল করার কোনো যৌক্তিকতা নেই। এটি আমাদের দেশের জন্য একটি অশনিসংকেত হতে পারে। তার মতে, এই কর্মসূচি বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে আন্তর্জাতিকভাবে ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা করছে। তিনি আরও বলেন, দেশের বাইরের কোনো শক্তি হয়তো এই কর্মসূচির পেছনে কাজ করছে, যারা বাংলাদেশকে বিশ্বদরবারে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করতে চায়।

ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া বিভাগের ডিসি মুহাম্মদ তালেবুর রহমান জানান, এই মিছিলগুলো নিয়ে তদন্ত চলছে। এর সঙ্গে কারা জড়িত তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং তদন্তে আরও কারো সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।

মিছিলে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের বিষয়ে সরকারি সংস্থা এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে সতর্ক করা হয়েছে। তবে দেশের বিভিন্ন স্থানে এই ধরনের মিছিল নিয়ন্ত্রণ করা সবসময় সম্ভব হচ্ছে না। তবুও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সক্রিয় রয়েছে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করছে।

এই কালো পতাকা নিয়ে মিছিলের ঘটনাগুলো দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। দেশের অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতাকে ক্ষুণ্ন করার জন্য কোনো একটি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী এই ধরনের কর্মসূচি পালন করছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সরকার এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছে, তবে এর নেপথ্যে থাকা শক্তিকে চিহ্নিত করা এবং তাদের কার্যকলাপ বন্ধ করা এখন সময়ের দাবি।

About Nasimul Islam

Check Also

মারা গেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং সাবেক মন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী আর নেই। আজ (বুধবার) দুপুরে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *