কিছুদিন আগে দেশের কয়েকটি ব্যাংকের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে, ঐ সকল ব্যাংক বিপুল পরিমান অর্থ কয়েকজনকে বেনামে ঋণ দিয়েছে। এরপর থেকে কিছু দিন ঐ সকল ব্যাংকের আর্থিক বিষয়ে ধস নামে। তবে এই বিষয়টি নিছক গু”জব বলে ওড়ানোর চেষ্টা করে ব্যাংকগুলোর মালিক পক্ষ। এদিকে এই ঘটনার পর ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের আর্থিক খাতের অনিয়ম হয়েছে কিনা সেটা খতিয়ে দেখতে তদন্তে নামে দুদক।
এদিকে গু”জব ছড়ানোর অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া ইসলামী ব্যাংক ও সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের (এসআইবিএল) চার কর্মকর্তাকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের একটি মামলায় কা”রাগারে পাঠানো হয়েছে। গুলশান থানায় মামলাটি করেন এস আলম গ্রুপের ডেপুটি ম্যানেজার মো. আবদুল কুদ্দুছ।
ইসলামী ব্যাংকসহ কয়েকটি শরিয়া ব্যাংকের মালিক এস আলম গ্রুপের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের অভিযোগে করা মামলায় এই চার উচ্চপদস্থ ব্যাংক কর্মকর্তার কেউই এজাহারভুক্ত আসামি নন।
এসব কর্মকর্তা ইসলামী ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের শিকার বলে ব্যাংক সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে। সম্প্রতি ইসলামী ব্যাংকের ঋণ অনিয়ম নিয়ে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শুরু হওয়া আলোচনার ভিত্তিতে ব্যাংকটির একটি শক্তিশালী পক্ষও এই চার কর্মকর্তাকে সন্দেহের তালিকায় রেখেছে।
গত বুধবার গ্রেপ্তার হওয়া চার কর্মকর্তা হলেন ইসলামী ব্যাংক ঢাকা নর্থ জোনের প্রধান ও সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. সাইদ উল্লা। ব্যাংকের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ও কুমিল্লা জোনের প্রধান শহীদুল্লাহ মজুমদার এবং নিরাপত্তা বিভাগের কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন (অব.) হাবিবুর রহমান। অপরজন ইসলামী ব্যাংকের সাবেক উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) মো. মোশাররফ হোসেন। তিনি গত বছরের জুন মাসে এসআইবিএলে চিফ রেমিট্যান্স অফিসার হিসেবে যোগদান করেন।
চার শীর্ষ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করা হলেও গত তিন দিনে দুই ব্যাংক কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি। তবে এতে তাদের মধ্যে উদ্বেগ ও অস্বস্তি তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন একাধিক কর্মকর্তা।
ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান আনিস এ খান দেশের একটি জনপ্রিয় সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, শুধু সন্দেহের বশে কোনো ব্যাংক কর্মকর্তাকে আটক করা ঠিক নয়। তার আগে উপযুক্ত প্রমাণ হাজির করতে হবে।
এস আলম গ্রুপের মালিক ও কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে পোস্টার লাগানো ও ফে”সবুকে ভুল তথ্য ছড়ানোর অভিযোগে গত ৫ জানুয়ারি গুলশান থানায় করা মাম”লায় তিনজনকে আসা”মি করা হয়। তাঁরা হলেন ফেনীর মাজহারুল ইসলাম ও লক্ষ্মীপুরের নুরনবী ও গোলাম সারোয়ার। এদের মধ্যে রয়েছেন নূরনবী ব্যবসায়ী ও কয়েকটি ব্যাংকের আলোচিত ঋণখেলাপি। এরপর ৯ জানুয়ারি নূরনবীসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। বাকিরা হলেন আফসার উদ্দিন, আবু সাঈদ, স্বাধীন মিয়া ও আবদুস সালাম।
গত বৃহস্পতিবার ব্যাংকের চার কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার বাদী এস আলম গ্রুপের উপ-ব্যবস্থাপক আবদুল কুদ্দুছ গতকাল রাতে সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, তিনি জবানবন্দিতে তিনজনকে আসামি করেছেন। বাকি আসামিদের বিষয়ে পুলিশ বলতে পারবে।
পুলিশ জানায়, এর আগে গ্রেপ্তারকৃতদের তথ্যের ভিত্তিতে চার ব্যাংক কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। মামলার তদন্ত তদারকি করছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ। তিনি গতকাল সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, গ্রেফতারকৃত ব্যাংক কর্মকর্তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাংক সম্পর্কে গু”জব ও বা”/নোয়াট তথ্য ছড়িয়ে জনগণের মধ্যে ভী”তি ছড়িয়েছেন। তিনি বলেন, এই চারজনকে রি”মান্ডে নেওয়ার জন্য আদালতে আবেদন করা হয়েছে। রি”মান্ড মঞ্জুর হলে তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কারাগার থেকে ডিবি কার্যালয়ে এনে বিস্তারিত জানা যাবে।
নাবিল গ্রেইন ক্রপস লিমিটেডের ভুয়া ঠিকানা ও নাবিল গ্রুপের অফিসের ঠিকানা ব্যবহার করে মার্টস বিজনেস লিমিটেড নামে কাগুজে কোম্পানির নাম দিয়ে বিপুল পরিমান অর্থ তোলা হয়, যার কারনে ব্যাংকটি থেকে আমানতকারীরা ব্যাংক থেকে নগদ টাকা উঠিয়ে নিতে শুরু করে। তারা এই সকল টাকা অন্য ব্যাংকে রাখতে শুরু করে। তাছাড়া ব্যাংকের এই কেলেঙ্কারির বিষয়টিতে আমানতকারীরা ব্যাংকটির ওপর আস্থা হারাতে শুরু করে।