অনেক চতুরতার সাথে পাহারার বেড়া জাল অতিক্রম করে কারাগার থেকে পালিয়ে যায় খাদিজা নামের এক অল্প বয়সী তরুণী। এই ঘটনার পরে হতবাক হয়েছেন দায়িত্ব পুলিশের সকল সদস্যরা। তবে এখন পুলিশের দায়িত্ব যেভাবেই হোক তাকে খুঁজে বের করা তবে সেখানেও অপারোক হয়ে পড়েছে পুলিশ কোনভাবেই খাদিজার অবস্থান সনাক্ত করতে পারছেনা তারা।
চারদিন পেরিয়ে গেলেও থানা থেকে পালিয়ে যাওয়া খাদিজা আক্তারের হদিস শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ। তাকে ধরতে পুলিশের একাধিক দল কাজ করছে। তবে ধূর্ত খাদিজা রাজধানীতে আছে নাকি জেলা শহরে পালিয়েছে তা নিশ্চিত হতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পুলিশ এই রহস্যময় মহিলার নিকটাত্মীয়, এলাকার অনেক লোকের সাথে যোগাযোগ করে। তবে তিনি কোথায় অবস্থান করছেন তা জানা যায়নি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তাৎক্ষণিকভাবে তাকে ধরা সম্ভব নয়।
গত ২৭ আগস্ট রাজধানীর গুলশান থানা হেফাজত থেকে পালিয়ে যায় খাদিজা আক্তার। তাকে একটি চুরির মামলায় গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ঘটনার দিন রাত সাড়ে ৮টার দিকে খাদিজা থানার বাথরুমে প্রবেশ করে আর বের হননি।
বাথরুমে কোনো সাড়া না দিয়ে দরজা খুলে দিলে খাদিজা সেখানে ছিলেন না। পালিয়ে যাওয়ার চারদিন পরও পুলিশ তাকে খুঁজে পায়নি।
বুধবার রাতে ডিএমপির গুলশান বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) আহাদ এক সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, পলাতক আসামিদের ধরতে পুলিশ সব ধরনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তাকে ধরতে মাঠে নেমেছে একাধিক দল। আশা করি শিগগিরই ধরা পড়বে।
যেভাবে খাদিজাকে অভিযুক্ত ও গ্রেপ্তার করা হয়েছিল:
গুলশান-২ এর ৬৮ নম্বর রোডের ৬ নম্বর বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করতেন খাদিজা আক্তার। গত ১২ আগস্ট ‘আশা মেইড এজেন্সি লিমিটেড’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান থেকে সুজনকে কাজের জন্য নিয়ে আসেন বাড়ির মালিক হুমায়ন কবির। এর তিন দিন পর (১৬ আগস্ট) স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে বাইরে যান হুমায়ন কবির। এ সময় খাদিজার ঘরের আলমারি খুলে একটি স্বর্ণের চেইন, চারটি আংটি, ছয়টি নাকফুল ও নগদ এক লাখ ৭৫ হাজার টাকা চুরি হয়।
হুমায়ুন কবিরের বাসায় ফেরার পর খাদিজা জানান, তিনি অসুস্থ বোধ করছেন। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে জানানো হলে পরদিন (১৭ আগস্ট) সকালে তিনি খাদিজাকে বাড়ি থেকে নিয়ে যাওয়ার জন্য একজনকে পাঠান এবং আরও একজন কাজের মেয়ে দেবেন বলে জানান।
ওই দিন সন্ধ্যায় হুমায়ন কবিরের স্ত্রী আলমারি খুলে দেখেন, স্বর্ণালংকার ও টাকা নেই। পরে বাড়ির সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, খাদিজা আলমারি খুলে 16 আগস্ট বেলা 3:12 থেকে 3:14-এর মধ্যে চুরি করে। বিষয়টি প্রথমে ‘আশা মেইড এজেন্সি লিমিটেড’-এর ব্যবস্থাপক লোকমান হোসেনকে জানানো হলে তিনি। বলেছেন যে তিনি ব্যবস্থা নেবেন। পরে ব্যবস্থাপক (লোকমান) আর কোনো সহযোগিতা করেননি।
এ ঘটনায় গত ২৩ আগস্ট বাসার ম্যানেজার আলমগীর হোসেন বাদী হয়ে খাদিজা আক্তারের নামে একটি চুরির মামলা করেন।
গুলশান থানা সূত্রে জানা গেছে, মামলার পর গত ২৬ আগস্ট শুক্রবার রাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে খাদিজাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তার হেফাজত থেকে একটি চোরাই সোনার চেইন উদ্ধার করা হয়েছে। পরদিন তাকে গুলশান থানায় নিয়ে আসা হয়। রাত সাড়ে ৮টার দিকে খাদিজা বাথরুমে যেতে চায়। একজন সদস্য তাকে থানা ভবনের বাইরে একটি বাথরুমে নিয়ে গেলে সে বাথরুমের ভেন্টিলেটর ব্যবহার করে পালিয়ে যায়। খাদিজার মা ও খালা জানান, অন্যান্য স্বর্ণালংকার ও টাকা তার কাছে রয়েছে এবং শনিবার সারাদিন তাকে থানায় রাখা হয়েছে। কারণ তাকে নিয়ে অভিযানে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল।
কিভাবে পুলিশের কবল থেকে নিজেকে আত্মগোপন করতে সক্ষম হলো খাদিজা এমনি প্রশ্ন ঘুরছে অনেকের মনে। সে কিভাবে বুঝতে পরলো এভাবে বাথরুম থেকে পালানো সম্ভব। তবে সে যেভাবেই পালাক তাকে খুব দূরুত্ব আটক করে থানায় নিয়ে আসার জন্য ওপর মহল থেকে এই মামলার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের চাপ সৃষ্টি করা হয়েছে। তারা খাদিজাকে খুঁজে বের করার সকল কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।