Thursday , November 14 2024
Breaking News
Home / Countrywide / কানাডায় যাওয়ার সময় আটকে দেওয়া হলো ৪২ যাত্রীকে, যে দাবি করছে বিমান

কানাডায় যাওয়ার সময় আটকে দেওয়া হলো ৪২ যাত্রীকে, যে দাবি করছে বিমান

পাসপোর্টে কানাডার ভিসা ছিল। রাউন্ড ট্রিপ বা আসা-যাওয়ার এয়ার টিকেটও ছিল। ইমিগ্রেশন পুলিশও তাদের পাসপোর্টে স্ট্যাম্প লাগিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু তারপরও সিলেট থেকে ৪২ যাত্রী কানাডা যেতে পারেননি। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বাংলাদেশ বিমানের কর্মকর্তারা তাদের আটক করেন। বিমানের অভিযোগ, জাল কাগজপত্র দিয়ে ভিসা নিয়েছেন যাত্রীরা। বিমান চেক আউট করেছে। নিশ্চিত হওয়ার পরই তাদের আটক করা হয়। এয়ারলাইন্সের প্রয়োজনীয়তা, নিয়ম ও আইন অনুযায়ী ওই যাত্রীদের যেতে বাধা দেওয়া হয়েছে। যদিও যাত্রীদের অভিযোগ, তারা যথাযথ কাগজপত্র দিয়ে ভিসা নিয়েছেন।

রিটার্ন টিকিট কেটেছেন। কিন্তু এয়ারলাইন্সের কর্মকর্তারা উদ্দেশ্যমূলকভাবে তাদের যেতে দেননি। ফলে তারা রিটার্ন টিকিটের টাকাসহ বিভিন্নভাবে সামাজিক ও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাদের মতে, কাগজপত্র সঠিক হওয়ায় কানাডা ভিসা দিয়েছে। কারণ কানাডা ভিসা দেওয়ার আগে তা যাচাই করে নিয়েছে। যদি আটকাতে হয় তবে কানাডা ইমিগ্রেশন তাদের আটকাবে। ১০ই নভেম্বরের এই ঘটনা চাউর হওয়ার পর থেকে গোটা সিলেট অঞ্চলে তোলপাড় চলছে। বিভিন্ন দেশে থাকা সিলেটি প্রবাসীরাও চটেছেন। ফেসবুকে বিভিন্নজন বিমানের এমন কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানিয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, যাত্রীরা বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণপত্র এনে ভিসার জন্য আবেদন করেন। কানাডাও তাদের ভিসা দেয়। নিয়মানুযায়ী তিনি ফিরতি টিকিট কিনে নির্ধারিত দিনে সিলেট বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন শেষ করে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান। সেখান থেকে কানাডায় কানেক্টিং ফ্লাইটে যাওয়ার কথা ছিল তাদের। বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পরে, বিমান সংস্থার কর্মকর্তারা তাদের বোর্ডিং পাস দিতে অস্বীকার করে তাদের আটক করে।

একটি সূত্র জানায়, যে আমন্ত্রণপত্র দিয়ে তারা বিয়েতে অংশ নিতে ভিসা পেয়েছিলেন তা জাল। আসলে কানাডায় এমন কোনো বিয়ের অনুষ্ঠান নেই। আর বিয়েতে অংশ নিতে যাওয়া ৪২ জনকে কনের ভুয়া আত্মীয় বলে নিমন্ত্রণ করা হয়। মিথ্যা স্বজন হিসেবে আমন্ত্রণপত্র তৈরি করা হয়েছে। মূলত কানাডা ও সিলেটের একটি সিন্ডিকেট এসব ভুয়া আমন্ত্রণপত্র দিয়ে ভিসা করিয়ে মানুষকে কানাডা পাঠানোর কাজ করছিল। বিনিময়ে তাদের কাছ থেকে অন্তত ১৫ লাখ টাকা করে হাতিয়ে নিয়েছে। সিন্ডিকেট এভাবে আরও অনেককে কানাডায় পাঠিয়েছে। তবে এই প্রথম একই ফ্লাইটে এত মানুষকে পাঠানো হলো। বিচ্ছিন্নভাবে যাওয়ার কারণে অনেকেই ধরা পড়েনি। কয়েক মাসে অর্ধশত জনকে কানাডায় পাঠিয়ে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়েছে। আর যারা পৌঁছেছে তারা সেখানে গিয়ে শরণার্থী হিসেবে কানাডা সরকারের কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করেছে।

বিমানবন্দর সূত্র জানায়, সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে ওই যাত্রীরা সিলেট থেকে একটি ফ্লাইটে শাহজালাল বিমানবন্দরে আসেন। কারণ এয়ারলাইন কর্মকর্তারা ফ্লাইট কানেক্ট করার আগে তাদের পাসপোর্ট পরীক্ষা করে দেখেন যে প্রায় প্রত্যেকেরই কোনো দেশে ভ্রমণের পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই। অনেকের খালি পাসপোর্টে কানাডার ভিসা আছে। তখন তাদের সবারই একই আমন্ত্রণপত্র ভিন্ন ভিন্ন নামে এবং কোনো হোটেল বুকিং দেখাতে পারেননি। তখন বিমানের কর্মকর্তারা চূড়ান্ত সন্দেহের তালিকায় রেখে তাদেরকে জানিয়ে দেন ভিসা ও কাগজপত্রের সত্যতা যাচাই করে তাদেরকে ফ্লাইটে ওঠানো হবে। পরে বিমানের কর্মকর্তারা খোঁজখবর ও যাচাইবাছাই করে নিশ্চিত হন সেটি ভুয়া। তারপর ওই যাত্রীদের বোর্ডিং লক করে বাড়িতে ফেরত পাঠান। তাদের ইমিগ্রেশন সিলও বাতিল করা হয়।

এয়ারলাইন্সের কর্মকর্তারা বলছেন, বিমানটি যদি যাত্রীদের ভুয়া ভিসা দিয়ে কানাডায় পৌঁছে দিত তাহলে তাদের অনেক ক্ষতি হতো। কারণ এটি কানাডিয়ান ইমিগ্রেশনে যাওয়ার পর ধরা পড়তো। আর ধরা পড়লে তাদেরকে কমপক্ষে দেড় হাজার ডলার জরিমানা করা হবে। এমনকি কানাডাগামী রোডে বিমানের ফ্লাইট বন্ধ করে দেয়ার সম্ভাবনা ছিল। ঘটনার পর বিমানের একটি প্রতিনিধি দল সিলেটে গিয়ে কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন। যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি। তবে যাত্রীরা নিজেদের ভুক্তভোগী দাবি করে বাংলাদেশ বিমানের দিকে তীর নিক্ষেপ করছেন। তারা বলছে তারা নির্দোষ। তাদের ভিসা এবং নথি সব বৈধ. এয়ারলাইন্সের কর্মকর্তারা তাদের সাথে অন্যায়ভাবে এটি করেছেন। এ জন্য তাদের এয়ারলাইন্সকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও শফিউল আজম বলেন, বিমানে ওঠার সময় যাত্রীদের কাগজপত্র পরীক্ষা করা বিমানের দায়িত্ব। কাগজপত্রে সমস্যা থাকলে ভ্রমণের সুযোগ নেই। কানাডা ইমিগ্রেশন পর্যন্ত চলে গেলে তাদেরকে গেইট লক করা হবে। তাহলে বিমান কেন এই দায়িত্ব নেবে। ভুয়া কাগজপত্র থাকলে কেন আমি তাকে বিমানে তুলবো। যখনই এসব বিষয় আমাদের চোখে পড়বে তখনই আমরা ধরবো। ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে যদি তারা যেতে চায় তবে আমাদের ছেড়ে দেয়ার কোনো সুযোগ নাই। তিনি বলেন, বোর্ডিং পাস দেয়া পর্যন্ত আমাদের কাজ। এই মুহূর্তে কাউকে অপরাধ হিসেবে কিছু করলে তাকে আটকানোই মূল কাজ। আমরা যদি তাদের ছেড়ে দিতাম, কানাডা এয়ারলাইনটিকে ভারী জরিমানা করত। এছাড়া আমাদের নিয়মিত সব ফ্লাইট বন্ধ করে দেওয়া যেত।

 

About bisso Jit

Check Also

উপদেষ্টা পরিষদেই বৈষম্য

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে আঞ্চলিক বৈষম্যের অভিযোগ উঠেছে। ২৪ সদস্যের এই পরিষদে ১৩ জনই চট্টগ্রাম …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *