কানাডা প্রবাসী সুন্দরী নারীর পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রায় ১৪ লাখ টাকা চুরির অভিযোগে শামীমা রহমান খান ওরফে সোনিয়া পারভীন ওরফে সীমা (২৯) নামে এক তরুণীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
রোববার (২৭ আগস্ট) বিকেলে উত্তরার রাজলক্ষ্মীর একটি রেস্তোরাঁ থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। আজ (২৮ আগস্ট) সকালে তাকে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে রিমান্ডে নেওয়া হয়। শুনানি শেষে শামীমা রহমানের একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
গ্রেফতারকৃত প্রতারক চুয়াডাঙ্গা সদরের খরপিতল চক্ষু হাসপাতাল সংলগ্ন ৯ নম্বর রোড এলাকার মৃত হাবিবুর রহমাম খান ওরফে ইব্রাহিম আলীর মেয়ে।
প্রতারণার বিষয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা ও উত্তরা পশ্চিম থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ফারুক মিয়া বলেন, গ্রেফতারকৃত শামীমা রহমান একটি দৈনিক পত্রিকায় পাত্রের বিজ্ঞাপন দেন। বিজ্ঞাপনে তিনি উল্লেখ করেছেন, কানাডায় একজন ধনী প্রবাসী নারীর জন্য একজন বয়স্ক পুরুষকে খোঁজা হচ্ছে। স্বামী বিবাহিত এবং সন্তান থাকলেও কোন সমস্যা নেই। ওই বিজ্ঞাপন দেখে উত্তরার ১৪ নম্বর সেক্টরের ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী আবদুল আজিজ নিচে দেওয়া ফোন নম্বরে যোগাযোগ করেন।
পরে স্ক্যামাররা একটি ই-মেইল ঠিকানা দিয়ে সিভি পাঠাতে বলে। ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী সিভি পাঠালে কখনো প্রতারক শামীমা রহমান, কখনো তার সহযোগী নুরুল আলম সিভিতে দেওয়া ফোন নম্বরে কথা বলেন। একপর্যায়ে তারা গুলশানের ওয়েস্টিন হোটেলে দেখা করে আলোচনা করেন।
পরে উত্তরার ১৪ নম্বর সেক্টরে ভিকটিমের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বিয়ের কথা হয়। ওই দিনই তাদের বিয়ের তারিখ ঠিক করা হয়। স্ক্যামাররা তখন বলেছিল যে তারা তাকে কানাডায় নিয়ে যাবে এবং ভিকটিমকে তার পাসপোর্ট চাইবে। সেই সঙ্গে তারা জানান, কানাডা যেতে ভিসা প্রসেসিং, টিকিট, বিয়ের খরচ ও গয়না খরচ দিতে হয়। কথায় কথায় ভিকটিম তার আগের স্ত্রীর মোট ১৩ লাখ ৯২ হাজার টাকা ও দেড় ভরি স্বর্ণালঙ্কার দেন।
এরপর ২০ মে ভিকটিমের বাড়িতে শাড়ি ও গয়না পরিয়ে প্রতারককে বিয়ে করে প্রতারক। কিন্তু নির্যাতিতা তার শারীরিক সমস্যার কথা বলে কৌশলে রাত কাটায়নি। এরপর প্রতারক শামীমা রহমান তাকে বলেন, কানাডা যাওয়ার পর তারা একসঙ্গে থাকবেন।
এসময় প্রতারক ওই নারী তাকে কানাডা যাওয়ার কাগজপত্র দিয়ে ২৯ মে ফ্লাইটের কথা জানায়। কিন্তু তার দুই দিন আগে (২৭ মে) প্রতারক শামীমা তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি বন্ধ করে দেয়। সেই সঙ্গে আজিজের সঙ্গে যোগাযোগও বন্ধ করে দেন ওই ব্যবসায়ী। ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী তার চাচাতো ভাইকে বিষয়টি জানান।
তার চাচাতো ভাই ২৮ মে একটি পত্রিকায় একই রকম আরেকটি বিজ্ঞাপন দেখেন। তারপর তিনি নিজেই পাত্র তৈরি করে তাদের সাথে যোগাযোগ করেন। পরে প্রতারক নুরুল আলম তার সঙ্গে ভিন্ন নামে কথা বলেন। কিন্তু মামাতো ভাই বুঝতে পেরেছিল যে তারা আসলে প্রতারক। তখন প্রতারকরা তাকে জানায়, কনের বাবা নেই। মা ও এক ভাই কানাডায় থাকেন। চাচা অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল। এরপর ব্যবসায়ীর চাচাতো ভাই তাকে ধরতে টাকা খরচ করতে থাকে। পুলিশের সহযোগিতাও চান তারা।
অপরদিকে ওই নারীর মোবাইল নম্বর ব্লক হওয়ার পর তার দেওয়া ঠিকানায় যোগাযোগ করেন ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী। কিন্তু ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী জানতে পারেন তিনি সেখানে থাকেন না।
এসআই ফারুক মিয়া জানান, ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীর অভিযোগের ভিত্তিতে প্রতারক শামীমা রহমানকে রোববার (২৭ আগস্ট) রাতে উত্তরার রাজলক্ষ্মীর একটি রেস্তোরাঁ থেকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসা হয়। ঘটনার রহস্য উদঘাটন হলে ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী থানায় একটি মামলা দায়ের করলে আমাকে মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
পরে মঙ্গলবার (২৮ আগস্ট) আসামিকে রিমান্ডের আবেদন করে আদালতে পাঠানো হলে আদালত একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। অন্যদিকে পলাতক নুরুল আলম ওরফে তানভীরকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।