সম্প্রতি বিদ্যুৎ উৎপাদনে সমস্যাসহ বিভিন্ন কারনে সরকার বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহন করেছে। তার আওতায় এলাকায় ভিত্তিক লোডশেডিংয়ের সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়েছে। এ বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন উঠেছে অকেনে অভিযোগ করেন শহরের তুলনায় গ্রামে বেশি লোডশেডিং হচ্ছে। তবে এবার মন্ত্রীদের বাসভবনেও লোডশেডিং দাবি জানিয়েছে আওয়ামীলীগ সাধারন সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।কাদের চাইলেও মন্ত্রিপাড়ায় লোডশেডিং সম্ভব কি এমন প্রশ্ন যা জানাগেল।
‘রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন, প্রধান বিচারপতির বাসভবন, পুলিশ কন্ট্রোলরুম, হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালসহ বেশ কয়েকটি কেপিআইভুক্ত স্থাপনার সঙ্গে মন্ত্রিপাড়ার বিদ্যুৎ সংযোগ কানেক্টেড। যেখানে কেপিআই আছে, সেখানে তো আমরা লোডশেডিং করতে পারি না।’
‘
মমন্ত্রিসভার সদস্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের চাইলেও মন্ত্রিপাড়ায় থাকা মন্ত্রীদের বাড়িতে লোডশেডিং সম্ভব কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। তবে যাঁরা মন্ত্রিপাড়ার বাইরে থাকেন, তাদের বাড়ি বিদ্যুতের যাওয়া-আসার বাইরে নয়।
মিন্টো রোডের মন্ত্রিপাড়ার সঙ্গে যে ফিডার লাইন যুক্ত, সেখান থেকে একই ফিডার লাইন বঙ্গভবন, রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবনসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ভবনে যায়। ফলে সেখানে বিদ্যুৎ বন্ধ করতে হলে একই সঙ্গে রাষ্ট্রীয় সব গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করতে হবে, যা রাষ্ট্রের জন্য অসম্মানজনক এবং আইনের লঙ্ঘনও বটে।
আইন অনুসারে, এই জটিল স্থাপনা বা কেপিআইগুলিতে চব্বিশ ঘন্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ থাকতে হবে। কোনো কারণে এক লাইনে সমস্যা হলে বিকল্প লাইনে বিদ্যুৎ দিতে হয়।
জ্বালানি সাশ্রয়ের জন্য এই তীব্র গরমে দেশবাসীকে লোডশেডিংয়ে ভোগান্তিতে ফেলে মন্ত্রিসভা কেন স্বস্তি পাবে এমন প্রশ্ন তোলেন ওবায়দুল কাদের।তিনি চান মন্ত্রীদের বাড়িতেও লোডশেডিং হোক।
মঙ্গলবার সচিবালয়ে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘আমি বলি মন্ত্রীদের বাড়িতেও লোডশেডিং করা হোক। প্রধানমন্ত্রী এটা করলে আমি ব্যক্তিগতভাবে সমর্থন করব। জনগণের ঘরে লোডশেডিং থাকলে মন্ত্রী-এমপিদের বাড়িতে কেন হতে পারে না? আমাদের যা যুক্তিসঙ্গত তা করা উচিত।’
মিন্টো রোড মন্ত্রিসভার সদস্যদের প্রধান আবাসিক এলাকা। এটি মন্ত্রীপাড়া নামেও পরিচিত। সেখানে কেন লোডশেডিং করা হচ্ছে না জানতে চাইলে রাজধানীর ডিপিডিসির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দেশের একটি জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যমেকে বলেন, মিন্টো রোডের বিদ্যুৎ সংযোগ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি স্থাপনার (কি পয়েন্ট ইনস্টলেশন-কেপিআই) সংযোগের সঙ্গে অভিন্ন হওয়ায়। সেখানে লোডশেডিং দেওয়া সম্ভব নয়।”
তিনি বলেন, মিন্টো রোডে লোডশেডিং দিতে হলে কেপিআইভুক্ত কয়েকটি স্থাপনারও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে হবে। তবে কেপিআই নিরাপত্তা নীতিমালা, ২০১৩-এর অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তায় বলা হয়েছে, ‘কেপিআইসমূহে সার্বক্ষণিক অভ্যন্তরীণ ও বহিঃযোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে যথাযথভাবে সুরক্ষিত ও নিরাপত্তায় আধুনিক প্রযুক্তিসংবলিত ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে। এ ছাড়াও বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হলে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পর্যাপ্ত বিকল্প ব্যবস্থা রাখতে হবে।’
নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে ডিপিডিসি কর্মকর্তা দেশের একটি জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যমেকে বলেন, “রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন, প্রধান বিচারপতির বাসভবন, পুলিশ কন্ট্রোল রুম, হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল সহ বেশ কয়েকটি কেপিআই প্রতিষ্ঠানের সাথে মন্ত্রীপাড়ার বিদ্যুৎ সংযোগ রয়েছে।” যেখানে কেপিআই আছে সেখানে আমরা লোডশেডিং করতে পারি না।’
অর্থাৎ এসব এলাকায় কেবল মন্ত্রিপাড়ায় বিদ্যুৎ বন্ধ রাখা সম্ভব নয়। একই ফিডারে হওয়ায় এটি বন্ধ রাখা হলে অন্য গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাতেও বিদ্যুৎ বন্ধ হয়ে যাবে।
মন্ত্রিপাড়ায় বিদ্যুৎ সংযোগ কীভাবে অভিন্ন হয়েছে, তা স্পষ্ট করতে পারেননি ওই কর্মকর্তা। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বাই অ্যানি হাউ বিদ্যুৎ লাইনটি অভিন্ন হয়ে গেছে। আরেকটা ফিডার (ভিন্ন বিদ্যুৎ সংযোগ) থাকলে তা পড়ে যেত (লোডশেডিং)হত।’
কেপিআই প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত লোডশেডিংয়ের সুযোগ না থাকলেও অনিয়মিত লোডশেডিং হচ্ছে বলেও নিশ্চিত করেছেন ওই কর্মকর্তা।
কেপিআইভুক্ত স্থাপনায় নিয়মমাফিক লোডশেডিং করার সুযোগ না থাকলেও অনিয়মিত লোডশেডিং হচ্ছে বলেও নিশ্চিত করেছেন ওই কর্মকর্তা।
এমতাবস্থায় ডিপিডিসি কর্মকর্তা আরও বলেন, যত দ্রুত সম্ভব কেপিআই সুবিধায় বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার বিষয়ে বিশেষ নজর দেওয়া হয়।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ অবশ্য দাবি করেছেন, মন্ত্রীরাও লোডশেডিংয়ের বাইরে নন। মন্ত্রীদের ঘরে লোডশেডিং নিয়ে ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, সবার ঘরে লোডশেডিং চলছে। কেউ বাদ নেই।’
প্রসঙ্গত, সাধারন জনগণের মত দেশের মন্ত্রী পাড়ায়ও লোডশেডিং দেওয়ার যে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে সেটি কি আদৌ সম্ভব কিনা প্রশ্ন অনেকের। তবে সেটির বিষয়ে ভিন্ন এক তথ্য দিয়েছে ডিপিডিসির এক কর্মকর্তা।