বিভিন্ন সময় দেখা যায় এয়ারওয়েজের নানা জটিলতায় পড়তে হয় অনেক প্রবাসীদের এবং সেই সাথে তাদের এই ভোগান্তির কারনে অনেক বড় মাশুল গুনতে হয়। এমনই একজন হলেন নওগাঁর সাপাহার উপজেলার তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা সোহেল রানা।
২০২১ সালে, তিনি একজন সফল কৃষি উদ্যোক্তা হিসাবে মহামান্য রাষ্ট্রপতি কর্তৃক জাতীয় যুব পুরস্কারে ভূষিত হন। ইউরোপের নেদারল্যান্ডসে আম মেলায় যাওয়ার কথা ছিল সোহেলের। কিন্তু কাতার এয়ার কর্মকর্তাদের আপত্তিকর ও অন্যায্য অভিযোগের কারণে বৃহস্পতিবার (৫ আগস্ট) সোহেলকে নেদারল্যান্ডে যেতে দেওয়া হয়নি।
সোহেল রানা নওগাঁর সাপাহার উপজেলার গোডাউনপাড়া গ্রামের তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা। তার ১০৫ বিঘা বাগানে দেশি-বিদেশি নানা জাতের আম রয়েছে। আরও জানা যায়, পত্নীতলা উপজেলার রূপগ্রাম এলাকায় ৪০ বিঘা আয়তনের সোহেল রানার আরেকটি আখ বাগান রয়েছে।
সোহেল রানা জানান, তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়েছেন। কিছুদিন চাকরিও করেন। চাকরি ছাড়ার পর ২০১৫ সালে তিনি “বরেন্দ্র এগ্রোপার্ক” নামে একটি কৃষি খামার শুরু করেন। সেখানে তিনি বিভিন্ন ধরনের দেশি-বিদেশি কৃষিপণ্য উৎপাদন শুরু করেন। যার মধ্যে আম চাষ ছিল উল্লেখযোগ্য। ২০২১ সালে তিনি একজন সফল কৃষি উদ্যোক্তা হিসেবে মহামান্য রাষ্ট্রপতি কর্তৃক জাতীয় যুব পুরস্কারে ভূষিত হন। গত ২ বছর থেকে বিশ্বব্যাপী জিপিএ মেনে আম উৎপাদন করা হচ্ছে। আর সেসব আম ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যে রপ্তানি করে দেশে আনছে বৈদেশিক মুদ্রা।
নেদারল্যান্ডের মেলায় কী হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “এয়ারপোর্ট ইমিগ্রেশন পুলিশ কৃষি মন্ত্রণালয়ের ভিসা ও জিআরসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র বাছাই করে ভ্রমণের অনুমতি দেয়। বিমানে ওঠার আগে সেখানকার লোকজন কাতার এয়ারওয়েজ অভিযোগ করেছে যে আমার ভিসা জাল।ভিসা জালিয়াতির কথা শুনে আমি ইমিগ্রেশন পুলিশের কাছে ছুটে যাই।তারা আবার সাজায়।পরে কাতার এয়ারওয়েজকে অনুরোধ করে ভিসা ঠিক থাকায় আমাকে ভ্রমণের অনুমতি দেওয়ার জন্য।কিন্তু তারা শোনেনি। আমাকে ফেরত পাঠিয়েছে।”
ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে প্রতিশ্রুতিশীল তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা সোহেল রানা আরও বলেন, আমি কাতার এয়ারওয়েজে ৫ আগস্ট ঢাকা-আমস্টারডামের টিকিট বুক করেছিলাম। ফ্লাইট ছিল ভোর সাড়ে চারটায়। আমি ৪ আগস্ট দুপুর ১২টা ১৫ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ১ নং টার্মিনাল দিয়ে প্রবেশ করি। এরপর বোর্ডিং পাস শুরু হলে পাসপোর্ট, টিকিট, ভ্যাকসিন কার্ডসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখান এবং বোর্ডিং পাস সংগ্রহ করে লাগেজ জমা দিয়ে যান। অভিবাসন ইমিগ্রেশনে পাসপোর্ট, বোর্ডিং পাস, জিও কপি সহ সমস্ত নথি জমা দিয়ে ইমিগ্রেশন সম্পূর্ণ করুন।
তারপর আমি বিমানে ওঠার জন্য ৫ নং গেটে অপেক্ষা করলাম। নির্দিষ্ট সময়ে গেট পার হওয়ার সময় কাতার এয়ারওয়েজের দায়িত্বরত কর্মীরা আমার পাসপোর্ট দেখে ভিসা জালিয়াতির অভিযোগ করেন। এ সময় আমি আমার পাসপোর্ট ও বোর্ডিং পাস রেখে পাশে দাঁড়াতে বলি। আমি তাকে বলি জিও, এলওআই, রাষ্ট্রপতির জাতীয় পুরস্কার। তাকেও বলুন আমি হাতে ভিসা পাসপোর্ট সংগ্রহ করেছি। প্রতারণার কোনো সুযোগ নেই।
এরপর ওই কর্মকর্তা কয়েকশ যাত্রীর সামনে আমাকে গালিগালাজ করেন। আমি দ্রুত ইমিগ্রেশন পুলিশকে গিয়ে ঘটনাটি জানাই। আমার ইমিগ্রেশন অফিসার এসআই দেলোয়ার আমাকে কাতার এয়ারের কর্মকর্তার কাছে নিয়ে গেলেন। পরে আমার পাসপোর্ট ও আমার সব কাগজপত্র সঙ্গে নিয়ে বিমানবন্দরে ভিসা বিশেষজ্ঞ দল পুনরায় পরীক্ষা করে ভিসা সঠিক বলে মতামত দেন। তারপর প্রস্থানের আগে এসআই আমাকে ভিসা সঠিক ছিল তা নিশ্চিত করার জন্য গেট ৫-এ কাতার এয়ার স্টাফের কাছে নিয়ে যান এবং আমাকে বিমানে উঠতে অনুরোধ করেন।
স্টেট জিও, এলওআই, জাতীয় পুরষ্কার, কাতার এয়ার কর্মকর্তার কাছে বিভিন্ন মিডিয়া রিপোর্ট। এটি দেখে কাতার এয়ার ফ্লাইটটি প্রত্যাখ্যান করে এবং যাত্রী নামানোর জন্য বিমানবন্দর ইমিগ্রেশন ইনচার্জের কাছে আবেদন করে। এর মধ্যে আমার ফ্লাইট পাশ দিয়ে উড়ে গেল। ইমিগ্রেশন পুলিশ অনেক চেষ্টা করে ব্যর্থ হওয়ার পর কাতার এয়ারের আবেদনে জিডি করে আমার পাসপোর্টে ইমিগ্রেশন সিল বাতিল করে। কাতার এয়ারের কর্মকর্তারা আমাকে ফ্লাইটে উঠতে দেয়নি এবং অযৌক্তিক অভিযোগ করে। কিন্তু বোর্ডিং কার্ড ও ইমিগ্রেশন ক্লিয়ারেন্সের পর একজন আন্তর্জাতিক যাত্রীর সঙ্গে এমন ঘৃণ্য আচরণ আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন।
আমি অভিবাসন আইন, আমার রাষ্ট্রীয় পুরস্কার, মন্ত্রণালয়ের জিও, এলওআই মিডিয়া রিপোর্টকে উপেক্ষা করে কাতার এয়ারওয়েজের জঘন্য ও নিন্দনীয় আচরণের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানাই। বোর্ডিংয়ের আগে ফ্লাইট বাতিল করে, কাতার এয়ারওয়েজ বিশাল আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি সুনাম নষ্ট করেছে, ইউরোপের অনেক ক্রেতার সাথে পূর্বনির্ধারিত মিটিং বাতিল করেছে। যা আম রপ্তানির সাথে সম্পর্কিত ছিল। ভিসা জালিয়াতির অভিযোগ আমাদের জাতীয় সুনামকে কলঙ্কিত করেছে। আমি কাতার এয়ারওয়েজের কাছে এমন একটি কলঙ্কজনক ঘটনার জন্য ক্ষতিপূরণসহ ন্যায্য বিচার চাই। এ ব্যাপারে আমি আইনগত ব্যবস্থা নেব।” এ ব্যাপারে নেদারল্যান্ডস দূতাবাসে অভিযোগ করবেন বলেও জানান তিনি।
সোহেল রানার সাথে কাতার এয়ারওয়েজের ঘটে যাওয়া ঘটনা নিয়ে এখন বেশ আলোচনা সমালোচনা তৈরি হয়েছে এবং এই বিষয়টিকে অনেকে নিন্দার চোখে দেখছেন, এমন লজ্জাজনক, নিন্দনীয় কর্মকাণ্ডে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এলাকার সচেতন মহল। একই সঙ্গে এ ধরনের জঘন্য কাজের জন্য রাষ্ট্রপ্রধানের কাছে বিচার চেয়েছেন এলাকার প্রবীণরা।