বাংলাদেশে ( Bangladesh ) বিভিন্ন প্রকল্পে অপ্রয়োজনীয় ব্যয়ের একটা কালচার গড়ে উঠেছে অনেক দিন ধরে। তার মধ্যে বিদেশে যাওয়ার মাধ্যমে সরকার ( Government )ী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রশিক্ষন, পরামর্শক নিয়োগ সহ বিভিন্ন খাতে বিপুল পরিমান অর্থ ব্যয় হয়ে থাকে প্রতি বছর। প্রকল্প শুরু করার পূর্ব থেকেই অনেক অর্থ ব্যয় করা হয়। যে বিষয়টি নিয়ে মাঝে মাঝে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রতিবেদন উঠে আসে।
এই সব খাতের মধ্যে রয়েছে গ্রামীন অবকাঠামো উন্নয়ন, যার মধ্যে সড়কে সেতু নির্মান করার প্রকল্প রয়েছে। সেতু নির্মানের পাশিপাশি রাস্তাঘাট সংস্কার ও হাট বাজার উন্নয়ন করা হবে। এ সব কাজের জন্য স্থাপনার আগে ও পরে দৃশ্য ধারন করে তথ্যচিএ তৈরি করা হবে। তার জন্য ৬ কোটি টাকা দাবি করা হয়েছে। এ সময় স্থানীয় সরকার ( Government ) প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) বিভিন্ন খাতে (পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির)পরমার্শক ব্যয় ধরা হয় ৮৮ কোটি ৫১ লাখ টাকা। গ্রামীন সড়ক নির্মান প্রকল্প (দ্বিতিয় পর্যায় )শীর্ষক এক বৈঠকে এই ব্যয় প্রস্তাব করা হয়। এ ধরনের অপ্রয়োজনীয় ব্যয়ের যৌক্তিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেন বিশেষজ্ঞরা। বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া রোগের প্রারদূর্ভাবের সময়ে এসব অপ্রয়োজনীয় ব্যয়ের বিরুদ্ধে সরকার ( Government ) সোচ্চারতা অনেক কমে যায়। মহামা”রি কমায় সাথে সাথে আবার অপ্রয়োজনীয় ব্যয়ের প্রবনতা বাড়ছে এটাই তার প্রমান।
প্রকল্পটির মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৫০ কোটি টাকা। মূল কাজ হল ১৬ হাজার কিলোমিটার গ্রামীণ সড়ককে দুর্যোগ প্রতিরোধী ২ লেনের সড়কে উন্নীত করা। এছাড়া ৩৩ হাজার কিলোমিটার গ্রামীণ সড়কের উন্নয়ন এবং ১ লাখ ৬৫ হাজার মিটার সেতু নির্মাণ বা পুনর্বাসন করা হবে। এছাড়াও, ৫০০টি গ্রোথ সেন্টার এবং ১,২০০টি বাজার গড়ে তোলা হবে। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) কর্তৃক অনুমোদিত হলে এটি সম্পূর্ণ সরকার ( Government )ি অর্থায়নে বাস্তবায়ন করা হবে। স্থানীয় সরকার ( Government ) বিভাগের অধীনে এলজিইডি ( LGED ) ২০২৬ সালের ডিসেম্বরের ( December year ) মধ্যে কাজটি সম্পন্ন করবে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রে।
মামুন-আল-রশিদ, সদস্য (সচিব), ভৌত অবকাঠামো বিভাগ, পরিকল্পনা কমিশনের সঙ্গে কথা হয়। শনিবার যুগান্তরকে তিনি বলেন, অডিও-ভিডিও করতে তাদের কিছু কাজ দরকার। তবে এত টাকা খরচ করা উচিত নয়। প্রকল্পটির পিইসি (প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি) সভা হয়েছে অনেক আগে। তাই এই মুহূর্তে বিস্তারিত মনে করতে পারছি না। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সড়ক-মহাসড়কের মতো নকশার ক্ষেত্রে এলজিইডি এখনো তেমন সক্ষমতা গড়ে তুলতে পারেনি। তাদের দক্ষতা থাকা সত্ত্বেও এত বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য কিছু পরামর্শক প্রয়োজন।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন গনমাধ্যমকে বলেন, এ ধরনের প্রজেক্টের সঙ্গে অডিও-ভিডিও বা ফিল্মের কী সম্পর্ক সেটাই বড় প্রশ্ন। কারণ জনসচেতনতার ব্যাপার থাকলে না হয় বোঝা যেত দরকার। মোট ব্যয়ের চেয়ে কম হলেও প্রকল্পের মূল লক্ষ্যের সঙ্গে কতটা এই ধরনের ব্যয় সঙ্গতিপূর্ণ তা দেখা জরুরি। আর এলজিইডি সারাজীবন এটা করে আসছে। কর্মকর্তাদের যদি বেতন-ভাতা ও বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে তাহলে তাদের দক্ষতার বিকাশ ঘটছে না কেন? প্রকল্প হাতে নেওয়ার সাথে সাথে পরামর্শক নিয়োগ করা একটি রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
সূত্র জানায়, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে প্রস্তাব পেয়ে ইতিমধ্যেই অনুমোদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে পরিকল্পনা কমিশন। আগামী একনেক সভায় প্রস্তাবটি উপস্থাপনের প্রস্তুতি চূড়ান্ত করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো বলছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে গ্রামীণ সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হবে। একই সঙ্গে কৃষি উৎপাদন বাড়বে, পরিবহন খরচ ও সময় কমবে এবং কৃষি ও অকৃষি পণ্য পরিবহন সহজ হবে। এছাড়া স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদে কর্মসংস্থানের সুযোগ থাকবে। সে কথা মাথায় রেখেই এ প্রকল্পের প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রকল্পের ব্যয় প্রস্তাব পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে, রুপি। অডিও ভিডিও/ফিল্ম তৈরির জন্য ৬ কোটি টাকা নেওয়া হয়েছে। পাইকারদের কাছে এ বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। যা মোট প্রকল্প ব্যয়ের শূন্য দশমিক ১৪ শতাংশ। এছাড়াও, পৃথক পরামর্শদাতাদের জন্য ৭৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে, যা মোট প্রকল্প ব্যয়ের ১.৮৫ শতাংশ। এছাড়াও, ১০০ মিটার বা তার বেশি সেতুগুলির জন্য সাব-সয়েল তদন্ত, টপো-গ্রাফিকাল জরিপ, কাঠামোগত নকশা, ব্যয় অনুমান এবং টেন্ডার ডকুমেন্টেশন প্রস্তুত করার জন্য ১৩ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। যা মোট প্রকল্প ব্যয়ের শূন্য দশমিক ৩২ শতাংশ।
এছাড়া টপোগ্রাফিক্যাল সার্ভে (১০০ মিটারের কম সেতু) জন্য পরামর্শ খাতে ৫১ লাখ টাকা চাওয়া হয়েছে। একই সময়ে, সম্মানী হিসাবে শুধুমাত্র ১.৫ কোটি টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে (যাদের জন্য এটি উল্লেখ করা হয়নি), যা মোট ব্যয়ের শূন্য দশমিক ০৩ শতাংশ।
স্থানীয় সরকার অধিদপ্তরের পরিকল্পনা, পরিবীক্ষণ, মূল্যায়ন ও পরিদর্শন বিভাগের মহাপরিচালক মো. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ার সাথে। তিনি যুগান্তরকে বলেন, এ মুহূর্তে বিস্তারিত বলতে পারছি না। তবে ধারণা করা হচ্ছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের আগে এবং পরে কেমন ছিল সে সম্পর্কে অনেক সময় ডকুমেন্টেশন তৈরি করা হয়। এটি পরে মূল্যায়ন করা সহজ করে তোলে। সম্ভবত একটি ফ্যাক্টর কেন তারা এত খারাপভাবে করছেন। তবে ৬ কোটি টাকা একসঙ্গে অনেক বেশি মনে হতে পারে। কিন্তু এত বড় প্রকল্পে অনেক কার্যক্রম বাস্তবায়িত হবে। সেক্ষেত্রে এই টাকা খুব বেশি বলা যাবে না।
প্রকল্পের প্রস্তাবে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় বলেছে, বাংলাদেশ একটি দ্রুত অগ্রসরমান দেশ। এদেশের অধিকাংশ মানুষ গ্রামে বাস করে। এ অবস্থায় দেশের সার্বিক উন্নয়ন নির্ভর করছে গ্রামাঞ্চলের উন্নয়নের ওপর। গ্রামীণ উন্নয়নের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল হল গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন। গত তিন দশকের বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা এবং দেশি-বিদেশি গবেষণায় এর প্রমাণ মেলে। গ্রামীণ সড়কে সেতু নির্মাণ বিভিন্নভাবে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও দারিদ্র্য বিমোচনে প্রধান ভূমিকা পালন করেছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের মাধ্যমে, কৃষি-অকৃষি উৎপাদন বাজারজাতকরণ এবং নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এসব বিবেচনায় প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, দেশের সার্বিক উন্নয়নে অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমানোর দিকে সরকারের নজর দেওয়া উচিৎ। এ রকম অপ্রয়োজনীয় ব্যয় উন্নয়ন কার্য ব্যহত করে বলে মন্তব্য করেন অর্থনৈতিক বিশ্নষকেরা। প্রকল্প ব্যয় কমানো এবং সঠিক সময় প্রকল্প শেষ করে দেশকে আরও সামনে এগিয়ে নিয়ে যা্ওয়া সরকার সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য। প্রকল্পে অপ্রয়োজনীয় ব্যয়ের কারনে দেখা যায় অনেক প্রকল্প বন্ধ হয়ে, যেটা কাম্য নয়।