সাম্প্রতিক সময়ে শিক্ষকদের মা”রধরের বিষয়টি প্রায় গণমাধ্যমে উঠে আসছে। সামাজিক অবক্ষয়ের কারণে শিক্ষকদের হেনস্থা ও মা”রপিটের ঘটনা ঘটছে বলে ধারণা করছেন সমাজ বিশ্লেষকেরা। এবার একজন কলেজ অধ্যক্ষকে পিটিয়ে গু”রুতর ভাবে আহ”ত করার অভিযোগ উঠেছে একজন সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে। ওমর ফারুক চৌধুরী নামের এই সংসদ সদস্য রাজশাহী-১ আসনে নির্বাচিত এমপি। তবে এ বিষয়ে এই এমপিকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বিষয়টি অস্বীকার করেন।
গোদাগাড়ীর রাজাবাড়ী ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ সেলিম রেজাকে এমপি ফারুক চৌধুরী ১৫ মিনিট ধরে এলোপাথাড়িভাবে লা”থি, ঘু”ষি ও হকি স্টিক দিয়ে আঘা”ত করে শরীরের বিভিন্ন স্থানে ক্ষ”তচিহ্ন ফেলেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সূত্র জানায়, গত ২৮ জুলাই রাতে নগরীর নিউমার্কেট সংলগ্ন এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীর মালিকানাধীন ওমর থিম প্লাজার চেম্বারে এ ঘটনা ঘটে।
এ সময় গোদাগাড়ী উপজেলার বিভিন্ন কলেজের অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষসহ আরও সাতজন উপস্থিত ছিলেন। অধ্যক্ষ সেলিম রেজাকে সবার সামনে মা”রধ’র করা হলেও এমপি ফারুকের চিৎকারে কেউ বাধা দিতে সাহস পায়নি। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গোদাগাড়ী মাটিকাটা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক আব্দুল আউয়াল রাজু বিভিন্ন কলেজের অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষদের ডেকে ৭ জুলাই থিম ওমর প্লাজায় এমপির চেম্বারে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন। ঘটনা ঘটে রাত ৯টায়। অধ্যক্ষ রাজু এমপির ঘনিষ্ঠ বলে জানা গেছে। তার ফোন পেয়ে রাজাবাড়ী ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ সেলিম রেজাসহ আটজন অধ্যক্ষ-উপাধ্যক্ষ এমপি ফারুকের চেম্বারে হাজির হন।
সংশ্লিষ্টরা আরও জানান, এমপি ফারুক প্রথমে অধ্যক্ষ সেলিম রেজার কাছে জানতে চান তার কলেজের কয়েকজন শিক্ষক একজন অধ্যক্ষ ও দলীয় নেতার স্ত্রীকে নিয়ে অশ্লীল কথাবার্তা বলেছেন। অধ্যক্ষ হিসেবে তিনি কী ব্যবস্থা নিয়েছেন? জবাবে অধ্যক্ষ সেলিম বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। আপনার কাছে প্রমাণ থাকলে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। এর পরপরই এমপি তার ফোনের রেকর্ড অন করে অধ্যক্ষ সেলিমকে বিষয়টি শুনতে বলেন। এসময় এমপি ফারুক বেশ উত্তেজিত হয়ে পড়েন। সেলিম রেজাকে ধরে প্রথমে তার বাম চোখের নিচে জোরে ঘু’ষি মা”রে। এরপর চলতে থাকে কিল ঘু’ষি ও লা’থি। একপর্যায়ে অধ্যক্ষ সেলিম প্রায় অজ্ঞান হয়ে গেলে তিনি চেম্বারে রাখা হকি স্টিক বের করে সেলিমের বাম হাতে, কোমর ও শরীরের নিচের অংশে বেশ কয়েকবার আঘা”ত করেন।
আহ”ত সেলিম রেজাকে সাঈদ আহমেদের চেম্বারে নেওয়া হয়েছে অর্থোপেডিকস বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে কয়েকজন আত্মীয়-স্বজন ও সহকর্মীর সহায়তায় তিনি বাড়ি ফিরে আসেন। অধ্যক্ষ সেলিম রেজা জানান, ৭ জুলাই রাতের ঘটনার পর তিনি বাড়িতেই অবস্থান করছেন। তবে গত সোমবার বিকালে এমপির ঘনিষ্ঠ গোদাগাড়ীর দেওপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান বেলাল উদ্দিন সোহেল আমার বাসায় আসেন। তিনি হোয়াটসঅ্যাপে এমপির সঙ্গে কথা বলেন। পরে আমাকে ফোন ধরিয়ে দেন। হোয়াটসঅ্যাপে সাংসদের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। পরে সে আমাকে ফোন দেয়। এ সময় সাংসদ ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন এবং আমাকে কোনো এক সময় দেখা করতে বলেন।
অধ্যক্ষ সেলিম বলেন, যেহেতু তিনি (এমপি) দুঃখ প্রকাশ করেছেন তাই এর বেশি কিছু বলছি না।
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী জানিয়েছেন, ”যেটা প্রচার হয়েছে সেটা শুধুমাত্র অপপ্রচার। আমি কাউকে হকি স্টিক দিয়ে পিটাইনি। আর যদি কাউকে হকিস্টিক দিয়ে পনেরো মিনিট ধরে পে”টানো হয় তাহলে তিনি বাড়ি যেতে পারেন কি করে। তাকে হাসপাতালে থাকতে হবে। এটি বড় ধরনের মিথ্যা এবং অপপ্রচার। আপনারা অধ্যক্ষের সাথে দেখা করুন এবং তাকে জিজ্ঞাসা করেন আমি তাকে মারধর করেছি কিনা।”