চুরি ঠেকাতে কবরে লোহার গ্রিল!
শেরপুরের বিভিন্ন কবরস্থানে লাশ চুরির ঘটনা বেড়েছে। আর এই চুরি ঠেকাতে স্বজনরা কবরস্থান পাকা করে লোহার গ্রিল দিয়ে রাখছেন। সম্প্রতি এ এলাকার বিভিন্ন কবরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
বাসভবনের পাশে একটি পুরনো কবর পাওয়া গেছে। পাশে একটা বৈদ্যুতিক বাতি জ্বলছে। পাকা সীমানার মধ্যে কবরের উপর লোহার গ্রিল। তার পাশে থাকা ৪৫ বছর বয়সী লালবানু জানালেন কবরে কেন এমন নিরাপত্তা। লালবানুর দ্বাদশ শ্রেণির মেয়ে ছয় বছর আগে মারা যায়। প্রিয় সন্তানের লাশ বা কঙ্কাল চুরি হয়ে যাবে; এমন ভয়ে ঘরের পাশে কবর নিরাপদে রাখা হয়।
স্থানীয়রা জানান, ইসলামিক রীতি অনুযায়ী মৃত্যুর পর লাশ কবরস্থানে দাফন করা হয়। কিন্তু দাফনের কয়েকদিন পর লাশ চুরি হয়ে যায়। শেরপুরের বিভিন্ন এলাকায় কবর থেকে একের পর এক বৃদ্ধা লাশ চুরি হচ্ছে। এ চক্রের কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হলেও স্বজনদের দুশ্চিন্তার শেষ নেই।
পুলিশ ও বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, প্রতিটি কঙ্কাল ১০ হাজার টাকায় বিক্রি করে মাঠপর্যায়ের চোরেরা। এটি মালিকের কাছে হাত পরিবর্তন করে। তারা কেমিক্যাল দিয়ে কঙ্কাল পরিষ্কার করে মেডিকেল কলেজের ছাত্র, ইন্টার্ন চিকিৎসকসহ বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি করে।
সম্প্রতি সদর উপজেলার কামারিয়া ইউনিয়নের সূর্যদী, পশ্চিমপাড়া গ্রামসহ কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, এসব এলাকায় সরকারি কবরস্থান না থাকায় স্বজনদের লাশ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। নিরাপত্তার অভাবে অধিকাংশ পুরনো কবর থেকে লাশ চুরি হচ্ছে। তাই চুরি ঠেকাতে অধিকাংশ কবরে লোহার গ্রিল দেওয়া হয়।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ পর্যন্ত দেড় শতাধিক কবরে লোহার গ্রিল দেওয়া হয়েছে। আর তাদের দাবি, গত দুই বছরে এ ইউনিয়ন থেকে দেড় শতাধিক কঙ্কাল চুরি হয়েছে। তারা আরও জানান, একটি কবরের ওপর গ্রিল করতে খরচ হয় ১০ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকা। অনেকে অতিরিক্ত টাকা খরচ করতে হিমশিম খাচ্ছেন বলেও দাবি তাদের।
শেরপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) সাইফুল্লাহ জানান, গত বছরের সেপ্টেম্বরে পৃথক দুটি মামলা হয়। কঙ্কাল চুরির মামলায় নালিতাবাড়ী উপজেলা থেকে চার চোরকে আটক করেছে জেলা পুলিশ। পরে তাদের জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে ডাকাত দলের দুই প্রধানকে ঢাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতদের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এরপর থেকে চুরি বন্ধ। তবে এখনও কিছু জায়গায় কবরে গ্রিল দেখা যায়। আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দেন এই পুলিশ কর্মকর্তা। জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে এখনো অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান তিনি।