পটুয়াখালী সরকারি কলেজের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ছাত্র নাজমুল আকন (২৩)কে অপহরণের পর জোরপূর্বক বিয়ে করার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় নাজমুল বাদী হয়ে পটুয়াখালী সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন। মামলায় ইশরাত জাহান পাখি (২৫)সহ ছয় থেকে সাতজনকে আসামি করা হয়েছিল। আদালত মামলাটি গ্রহণ করে পটুয়াখালী সদর থানায় মামলাটি নথিভুক্ত করার নির্দেশ দেন।
আমি আমার মামলা প্রত্যাহার করেছি। এটি সমাধান করা হয়েছে। ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে মামলাটি দীর্ঘায়িত না করে প্রত্যাহার করেছি। এটা শেষ. সবাই ভুলে গেছে। আমরাও ভুলে গেছি। আপনারা এ নিয়ে আর কোনো খবর করবেন না। কলেজ ছাত্রকে তুলে নিয়ে জোরপূর্বক বিয়ে দেওয়ার অভিযোগ আদালতে মিথ্যা প্রমাণিত হয়। মামলার আসামি ইসরাত জাহান পাখিকে খালাস দেওয়া হয়েছে। আসামিপক্ষের আইনজীবী আবুল কালাম এ খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। খালাস পাওয়ার বিষয়ে পাখি গনমাধ্যমকে বলেন, ‘মিডিয়ায় আমার বিরুদ্ধে একের পর এক মিথ্যা খবর প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু দুঃখজনক যে মামলার রায়ের কোনো প্রতিবেদন নেই। ২০২১ সালের ৩ অক্টোবর পটুয়াখালী সরকারি কলেজের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী নাজমুল আকন বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। মামলাটি দায়ের করা হয় জেলা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে। মামলায় বলা হয়, পাখি পটুয়াখালী সরকারি কলেজের আবাসিক হোস্টেলে লেখাপড়া করার সুবাদে দীর্ঘদিন ধরে তাকে ফেস// বুকে প্রেম ও বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে আসছিল। তিনি রাজি না হওয়ায় ২৭ সেপ্টেম্বর পটুয়াখালী লঞ্চঘাট এলাকা থেকে সাত-আটজন অপরিচিত ব্যক্তি নাজমুলকে অপহরণ করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়।
সেখানে তাকে নীল কাগজে সই করতে বাধ্য করা হয়। পরে তাকে শহরে ছেড়ে দেওয়া হয় বলেও মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে। এ সময় কেউ একজন এই ঘটনার ভিডিও ধারণ করে। সেই ভিডিও ক্লিপও আদালতে পেশ করা হয়। ভিডিওতে নাজমুল ও পাখিকে দুটি চেয়ারে পাশাপাশি বসে থাকতে দেখা গেছে। পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা এক ব্যক্তি নাজমুলের গলার দুপাশ চেপে ধরে আছে। ওপাশ থেকে এক ব্যক্তি পাখি ও নাজমুলের হাতে মিষ্টি কিছু তুলে দিচ্ছেন। সেখানে নাজমুলকে চুপচাপ দেখা গেলেও পাখি সক্রিয় ছিল। তবে পাখি শুরু থেকেই বলে আসছে পুরো ঘটনাটি মিথ্যা ও বানোয়াট। তিনি দাবি করেন, নাজমুল তার স্বামী। ওই মামলার ১০ দিন পর ১৩ অক্টোবর নাজমুলের বিরুদ্ধে একই আদালতে প্রতারণার মামলা করেন পাখি। সেক্ষেত্রে ২০২১ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর ঢাকায় নাজমুলের সঙ্গে পাখীর বিয়ের কাবিনসহ বেশ কিছু আলামত সংযুক্ত করা হয়। পুলিশ চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের পর গত মার্চে পটুয়াখালীর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট প্রথম আদালতের বিচারক আশিকুর রহমান নাজমুলের করা মামলাটি খারিজ করে দেন। এর আগে নাজমুলের পক্ষ থেকে মামলা প্রত্যাহারের আবেদন করা হয়। এছাড়া পাখির দায়ের করা মামলায় নাজমুল পাখিকে তাদের কেবিনের সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা দেন।
পাখি গনমাধ্যমকে জানান, ২০২০ সালের এপ্রিলে মির্জাগঞ্জ উপজেলার একটি ছাত্র সংগঠনের ফেস// বুক পেজের মাধ্যমে নাজমুলের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। একই এলাকার বাসিন্দা এবং ব্যাচমেট হওয়ায় তিনি প্রস্তাবটি গ্রহণ করেন। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে কাজের জন্য ঢাকায় আসেন নাজমুল। পাখি তখন ঢাকার সংসদ ভবন এলাকায় এসিপিআর নামের একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন। এরপর নাজমুল ও পাখি স্বামী-স্ত্রী হওয়ার ভান করে একই অফিসে চাকরি নেয়। একপর্যায়ে নাজমুল তার জীবনবৃত্তান্ত জমা দিলে এবং তাতে বলা হয় যে তিনি অবিবাহিত, তিনি কর্মকর্তাদের বলেছিলেন যে ‘আমরা সবেমাত্র বিয়ে করেছি। কয়েকদিনের মধ্যেই অনুষ্ঠান হবে। এ ঘটনার পর নাজমুল পাখির সঙ্গে সাত দিন একসঙ্গে থাকে। পাখি বলেন, আমার সঙ্গে সম্পর্কের আগে অন্য একটি মেয়ের সঙ্গে তার গভীর সম্পর্ক ছিল। মেয়েটি গর্ভবতী ছিল। আমার সঙ্গে সম্পর্কের সূত্র ধরে নাজমুল আরেকটি মেয়ের সঙ্গে নতুন করে সম্পর্ক গড়ে তোলে। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরের শুরুতে, যখন আমি প্রমাণ নিয়ে তার কাছে যাই। এসব বিষয়ে তিনি সবকিছু অস্বীকার করে ফোন কেটে দেন।এদিকে, আমরা ২৭ সেপ্টেম্বর ঢাকায় কেবিনের কাজ শেষ করি। নাজমুল নিজেই আমার সাথে কাবিননামায় স্বাক্ষর করেন। তবে ২৭ তারিখের ঘটনা উল্লেখ করে পটুয়াখালী আদালতে আমার বিরুদ্ধে মামলা করে সামাজিকভাবে আমার জীবন দুর্বিষহ করে তোলে।
তিনি বলেন, সবচেয়ে মজার বিষয় হলো ২৭ সেপ্টেম্বর নাজমুল ও আমি ঢাকায় অবস্থানকালে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিষ্কারভাবে মোবাইল ট্রাকিংয়ের সন্ধান পান। এসব নথি দেখে বিচারক মামলাটি খারিজ করে দেন। নাজমুলের বক্তব্য: ঘটনাটি অনেক পুরনো, সবাই ভুলে গেছে, তাই এ নিয়ে আলোড়ন না দেওয়ার অনুরোধ করেন নাজমুল। তিনি বলেন, আমি আমার মামলা প্রত্যাহার করেছি। এটি সমাধান করা হয়েছে। ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে মামলাটি দীর্ঘায়িত না করে প্রত্যাহার করেছি। এটা শেষ. সবাই ভুলে গেছে। আমরাও ভুলে গেছি। তুমি এ নিয়ে আর কোনো খবর করো না। বললেন, ‘ভাই, অনেক সময় অনেক কিছু দেখেও বুঝতে পারেন না। আবার সব কিছু বোঝা যায় না। এটা আমাদের মধ্যে সমাধান করা হয়. সুতরাং, আপনি আর এটি নিয়ে জগাখিচুড়ি করবেন না। তার সঙ্গে আমার কোনো বিরোধ নেই। সে তার মতো, আমি আমার মতো। সব শেষ। নাজমুলের আইনজীবী আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, কিছু সময় মামলা চলার পর বাদী আর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চাননি। সেজন্য মামলা ছেড়ে দিয়েছি।
উল্লেখ্য, উক্ত ঘটনায় মামলা দায়েরের পর ওই নারী নিজেকে নাজমুলের স্ত্রী দাবি করেন। পর্বর্তীতে মির্জাগঞ্জে নাজমুলের বাবার বাড়িতে অবস্থান করছিলেন অভিযুক্ত নারী। এ ঘটনায় মির্জাগঞ্জ এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। নাজমুল মির্জাগঞ্জ উপজেলার মির্জাগঞ্জ ইউনিয়নের জালাল আকনের ছেলে। অভিযুক্ত ইশরাত জাহান পাখি একই উপজেলার গাজীপুর গ্রামের মো. আউয়ালের মেয়ে।