পঁচিশ বিঘা পর্যন্ত ভূমি উন্নয়ন কর মওকুফের বিধান রেখে জাতীয় সংসদে ‘উন্নয়ন কর বিল ২০২৩’ পাস হয়েছে।
রোববার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে এই বিল পাস হয়। নতুন এই আইন অনুযায়ী, কেউ ২৫ বিঘার বেশি জমির মালিক হলে তাকে পুরো জমির ওপর ভূমি উন্নয়ন কর দিতে হবে। বাংলার পরিবর্তে ইংরেজি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী এই কর আদায় করা হবে।
ভূমি উন্নয়ন কর আরোপ, কর ফাঁকি ও আদায়ে কোনো অনিয়ম রোধে এদিন জাতীয় সংসদে বিলটি উত্থাপন করেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী। ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকুর সভাপতিত্বে কণ্ঠভোটে তা পাস হয়। এর আগে বিলের ওপর জনমত যাচাই-বাছাই, কমিটিতে পাঠানো এবং সংশোধনী প্রস্তাবগুলো নিষ্পত্তি করা হয়।
বিলটি পাসের প্রক্রিয়ায় ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী বলেন, নতুন এই আইনে ভূমির মালিকরা অনলাইনে ভূমি উন্নয়ন কর আদায়ের মাধ্যমে উপকৃত হবেন এবং স্মার্ট ভূমি ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করে একটি স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে সহায়তা করবে। এতে সরকারের রাজস্ব বাড়বে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি বলেন, ভূমি উন্নয়ন কর ধার্য ও আদায়ের জন্য এই নতুন আইন করা হয়েছে। ‘ভূমি উন্নয়ন কর আইন-২০২৩’ শীর্ষক প্রস্তাবিত আইনে জনস্বার্থে ২৩টি ধারা সন্নিবেশিত করা হয়েছে।
এছাড়া ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা, উত্তরসূরি, কালেক্টর ইত্যাদির সংজ্ঞা আধুনিকায়ন করা হয়েছে। এই আইনে কৃষি জমির উপর ২৫ বিঘা পর্যন্ত ভূমি উন্নয়ন করের হার অব্যাহতির বিধান করা হয়েছে এবং বিধান করা হয়েছে যে অকৃষি জমির উপর ভূমি উন্নয়ন করের হার সরকার সময়ে সময়ে গেজেট বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে পুনরায় নির্ধারণ করতে পারে।
আইনে জনগণের সুবিধার্থে এবং স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে ভূমি উন্নয়ন কর ইলেকট্রনিকভাবে আদায়ের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ভূমি উন্নয়ন কর আদায়ের জন্য জুলাই-জুন অর্থবছরকে কর বছর হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। আগে পহেলা বৈশাখ থেকে ৩০ চৈত্র পর্যন্ত ভূমি উন্নয়ন কর দিতে হতো। এখন এটি ১ জুলাই থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত হবে।
সংসদে পাস হওয়া বিলে কত ভূমি উন্নয়ন কর দিতে হবে তা আগে থেকেই জমির মালিককে জানানোর বিধান রাখা হয়েছে।
ভূমি উন্নয়ন কর হবে ব্যবহারের উপর ভিত্তি করে। প্রতি বছর ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা কত জমির উন্নয়ন করতে হবে তার একটি তালিকা তৈরি করে সহকারী কমিশনার (ভূমি) এর কাছে পাঠাবেন। সহকারী কমিশনার (ভূমি) নোটিশ বোর্ডে টাঙাবেন। এ ব্যাপারে কারো কোনো আপত্তি থাকলে অভিযোগ করতে পারেন। তিনি Aceland এবং জেলা কালেক্টরের কাছে আবেদন করতে পারেন। জেলা কালেক্টর (ডিসি) এটি ১৫ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করবেন।
এই আইনে প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে মহামারী, দুর্যোগ ইত্যাদির মতো বিশেষ ক্ষেত্রে ভূমি উন্নয়ন কর হ্রাস করার বিধান রয়েছে। এ ছাড়া বিলের বিধান অনুযায়ী কোনো ভূমি মালিক পরপর ৩ বছর ভূমি উন্নয়ন কর না দিলে প্রথম বছর থেকে তৃতীয় বছর পর্যন্ত ছয় শতাংশ জরিমানাসহ কর দিতে হবে। এ ছাড়া জমির মালিক আগ্রহী হলে বকেয়া ও বর্তমান ভূমি উন্নয়ন কর বা পরবর্তীতে সর্বোচ্চ ৩ বছরের জন্য অগ্রিম ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করতে পারবেন।
ভূমি উন্নয়ন বিল পাসের সময় বিরোধী দলের সদস্যরা বিলটি আনার জন্য ভূমিমন্ত্রীর প্রশংসা করেন এবং ভূমি ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা আনার জন্য মন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান।