কর্নেল অলি হলেন বাংলাদেশের একজন বীর সন্তান। বাংলাডেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তার বীরত্বপূর্ন লড়াইয়ের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর বিক্রম উপাধিতে ভূষিত করে। টিনি এলডিপর সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। কর্নেল অলি তার বিভিন্ন কর্মকান্ডের জন্য প্রায় সময় তিনি উঠে এরসেছেন আলোচনার কেন্দ বিন্দুতে। সম্প্রতি জাতীয় প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত এক আলোচনা সভায় বলেছেন, তাঁর দলের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামী ও নাগরিক ঐক্য ‘আগামী সরকার পতনের আন্দোলনে’ বিএনপির সঙ্গে থাকবে।
লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ ‘কর্নেল অলি’ নামে পরিচিত; বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, আগামী সরকার পতনের আন্দোলনে তার দল জামায়াতে ইসলামী ও নাগরিক ঐক্য বিএনপির সঙ্গে থাকবে। তার এই ঘোষণা আবারও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও সংবাদমাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
কর্নেল অলি ২০১২ সাল থেকে বিএনপির মিত্র; জামায়াতও তাই। তবে জামায়াতের বর্তমান আমিরের বক্তব্য কয়েকদিন আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছিল, যেখানে তিনি বলেছিলেন যে তিনি আর বিএনপির সাথে জোটে না থাকলেও আন্দোলনে থাকবেন। বিএনপির উদ্যোগে ২০১৮ সালের নির্বাচনকে সামনে রেখে সাবেক ডাকসু ভিপি মাহমুদুর রহমান মান্নার নেতৃত্বে নাগরিক ‘ঐক্য ফ্রন্ট’-এর নেতৃত্বে গঠিত জোটের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন। সম্প্রতি বিএনপির সঙ্গে সংলাপ করেও সরকারবিরোধী আন্দোলনে থাকার ঘোষণা দিয়েছে দলটি। অর্থাৎ যেখানে তিন দলকে ইতিমধ্যেই বিএনপির আন্দোলনের মিত্র ঘোষণা করা হয়েছে, সেখানে অলির নতুন ঘোষণার মানে কী?
দেশের একটি জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যমে বলা হয়, বৃহস্পতিবার ঘোষণার সময় আলীর পাশে বসেছিলেন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল হালিম ও নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। একই অনুষ্ঠানে অলির ঘোষণা সম্পর্কে হালিম একটি অনুমোদনমূলক মন্তব্য করলেও মান্নার কণ্ঠ ছিল একটু ভিন্ন।
একই প্রতিবেদনে বলা হয়, পরদিন শুক্রবার মান্না বলেন, তার দল বরাবরই সরকার পতনের একই দাবি নিয়ে ভিন্ন মতাদর্শের দলগুলোর যুগপৎ আন্দোলনকে সমর্থন করেছে; তবে কোনো দলের কর্মসূচিকে সামনে রেখে তার দলসহ কয়েকটি দলের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের তথ্য সঠিক নয়। (দেশের একটি জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যম, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২)।
মান্নার বক্তব্য থেকে পরিষ্কার- অলি আসলে তার দল, জামায়াত ও নাগরিক ঐক্য আলাদা জোট গঠনের ঘোষণা দিয়ে বোঝাতে চেয়েছেন এবং এই জোটের সঙ্গে তারা বিএনপির ভবিষ্যৎ আন্দোলনে অংশ নেবেন। অর্থাৎ জোটের মধ্যেই জোট গঠনের চেষ্টার আভাস পাওয়ায় অলির ঘোষণা বিশ্লেষকদের দৃষ্টি কেড়েছে।
বিএনপির কয়েকজন সিনিয়র নেতার প্রতিক্রিয়ায় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান বলে আসছেন, সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিকল্পধারার সভাপতি বি চৌধুরীর সঙ্গে কর্নেল অলি নতুন বিএনপি তৈরি করছেন। এর প্রেক্ষিতে বিএনপির সঙ্গে ঐক্যের বিষয়ে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করতে বৃহস্পতিবার এ ঘোষণা দেন অলি। বাস্তব চিত্র এত সহজ বলে মনে হয় না। বিশেষ করে ২০১৯ সালে বিএনপির নেতৃত্বে ২০ দলীয় জোট হওয়ার সময় জামায়াতসহ কয়েকটি শরিক দলের সঙ্গে অলির জোটের মধ্যে জোট গঠনের চেষ্টার কথা যারা মনে রেখেছেন তারাই বিষয়টি বুঝতে পারবেন। সে সময় মায়ের চেয়ে বেশি স্নেহ দেখানো খালার মতো অলি ঘোষণা করেন, দুর্নীতির দায়ে ১০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মুক্ত করাই তার কর্মকাণ্ডের অন্যতম উদ্দেশ্য। কিন্তু বিএনপিতে অন্য কিছু টের পেয়ে অলির সেই উদ্যোগের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেন। তাই বেশিদূর এগোতে পারেনি।
অলির বারবার জোটের মধ্যে জোট গঠনের প্রচেষ্টাকে সহজেই সরকারবিরোধী রাজনীতির নেতৃত্ব নিজের হাতে তুলে নেওয়ার প্রচেষ্টা হিসাবে বর্ণনা করা যেতে পারে। ব্যাপারটা সেখানে থামবে বলে মনে হয় না। অলি কি বিএনপির বাড়া ভাতে ছাই দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন?
খালেদা জিয়া, তারেক রহমানসহ বিএনপির মূল নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতিসহ নানা অভিযোগ ওঠার পর ২০০৬ সালে দল ত্যাগ করে এলডিপি গঠন করেন অলি। যোগ দেন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটে। ২০০৭ সালে ১/১১ সরকারের সময়, তৎকালীন ছায়াময় সামরিক সরকারের সমর্থকরা মহাজোট থেকে বেরিয়ে আসে। বিএনপির সঙ্গে তাঁর টানাপোড়েনের কারণেই ২০১৯ সালে একবার এবং পরবর্তী সময়ে আরেকবার অলির দলটি ভাঙনের মুখে পড়ে। এই যে একবার এই ঘাট তো আরেকবার অন্য ঘাটের জল খেয়ে অলির রাজনীতিতে টিকে থাকার চেষ্টা, তা সহজে শেষ হবে বলে মনে হয় না।
অলি রাজনীতি শুরু করেছিলেন জেনারেল জিয়ার হাত ধরে সরাসরি সেনাবাহিনী থেকে পদত্যাগ করে। মাঝখানে এরশাদবিরোধী আন্দোলনে কিছু ভূমিকা রাখলেও পোড় খাওয়া রাজনীতিক বলতে যা বোঝায়, অলি মোটেই তা নন। অনেকটা বিনা ক্লেশে ক্ষমতার মধু ভোগ করেছেন। অলির এ দিকটি সম্পর্কে বিএনপির অজ্ঞাত থাকার কথা নয়। তবে বিএনপির রাজনীতিতে নানা কারণে এখনও অলির যে প্রভাব, তার কারণে বিএনপি না পারছে অলিকে ফেলতে, না পারছে গিলতে।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের বীর সন্তান মুক্তিযোদ্ধারা বীরত্বের সাথে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীদের সাথে লড়েছেন বলেই আজ বাংলাদেশ একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। কর্নেল অলি বাংলা মায়ের বীর সন্তান। বাংলার মাটিতে আরো অনেক তার মত এমন বীর সন্তান রয়েছে। যারা লড়াই করেছিলেন এদেশকে স্বাধীন করার জন্য।