গত শুক্রবার (৫ জানুয়ারি) ধানমন্ডির বাসা থেকে মডেল তাসনিয়া তানজিম ওরফে তাসনিয়া রহমানের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। তাসনিয়া আত্মহত্যা করেছে বলে পরিবার জানায়।
বেপরোয়া ও বিলাসবহুল জীবনযাপনে অভ্যস্ত তাসনিয়া রহমান কেন আত্মহত্যার পথ বেছে নিলেন তা নিয়ে শোবিজ অঙ্গনে নানা গুঞ্জন রয়েছে। জানা গেছে, ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই নানা বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন তাসনিয়া।
গত বছর পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে একটি প্রতারণা ও মিথ্যা মামলা দিয়ে আর্থিক সুবিধা নেওয়ার বিষয়টি সামনে এলে তাসনিয়া ফেসবুক লাইভ ও কয়েকটি অনলাইন চ্যানেলে তার ব্যক্তিগত জীবনের বিতর্কিত বিষয় নিয়ে কথা বলেন।
এই লাইভ শোগুলিতে, তাসনিয়া প্রকাশ করেছিলেন যে তিনি কার সাথে সম্পর্কে ছিলেন এবং কার কাছ থেকে তিনি আর্থিক সহায়তা পেয়েছিলেন।
তদন্তে জানা যায়, ২০২০ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি গুলশান থানায় তাসনিয়া এফবিসিসিআইয়ের সাবেক পরিচালক আমজাদ হোসেনের নামে ধর্ষণের মামলা করেন। পরে পিবিআই তদন্তে মামলাটি মিথ্যা প্রমাণিত হয় এবং জানা যায় যে তাদের মধ্যে বেশ কয়েক বছর ধরে সম্পর্ক ছিল।
এর ঠিক চার মাস পর একই বছরের ৭ সেপ্টেম্বর অশ্লীল ছবি ছড়ানোর অভিযোগে ইফতেখারুল আলম নামে এক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে সাইবার মামলা করেন তাসনিয়া। কিন্তু সিআইডির তদন্তে জানা যায়, ইফতেখারের সঙ্গে তাসনিয়ার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। তিনি বিদেশ ভ্রমণও করেছেন। বিভিন্ন সময়ে তার কাছ থেকে অন্তত বিশ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয় এবং ইফতেখারের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করা হয়।
সিআইডির তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তাসনিয়া পেশাদার ব্যাকমেইলিংয়ের সঙ্গে জড়িত। মূলত ধনী ব্যক্তিদের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করে লাখ লাখ টাকা ব্ল্যাকমেইল করতেন। একই চিত্র প্রকাশ করেছে আরেক তদন্ত সংস্থা পিবিআইও।
শোবিজ অঙ্গনের আরেক মডেল ইশরাত পায়েলের স্বামীর সঙ্গেও সম্পর্ক ছিল তাসনিয়ার। ইশরাত পায়েলের সঙ্গে তার কথোপকথনের কল রেকর্ড ফাঁস করেন তিনি। পায়েল দেশে ফিরলে তার দেখাশোনা করারও হুমকি দেন তিনি।
গত বছর গণমাধ্যমে এ তথ্য প্রকাশের পর তাসনিয়া রহমান প্রযোজক জসীম আহমেদের বিরুদ্ধে তা ছড়ানোর অভিযোগ তোলেন এবং ২০২০ সালে তাদের মধ্যে একটি পুরনো মামলা সামনে আনেন এবং অনলাইনে মানহানিকর বক্তব্য দিতে থাকেন। এদিকে সংবাদ সম্মেলন করেন জসিম আহমেদের আইনজীবী ড. সাইবার আইনের অধীনে মামলার আবেদন নির্দেশ করুন। আইনজীবী ব্যারিস্টার শাহেদুল আজম গণমাধ্যমকে বলেন, তাসনিয়া ধারাবাহিকভাবে ধনী ব্যক্তিদের টার্গেট করে তাদের ব্ল্যাকমেইল করে।
একের পর এক বিতর্কে জড়িয়ে তাসনিয়া রহমান তার ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম আইডি ডিঅ্যাক্টিভেট করে আত্মগোপনে চলে যান।
সম্প্রতি উলাবের এক ছাত্রীর সঙ্গে তার সম্পর্ক হয়। কিন্তু তাসনিয়ার অপরাধ গণমাধ্যমে প্রকাশ্যে এলে ওই ছাত্রী তাকে ছেড়ে চলে গেলে তাসনিয়া লাইভে আত্মহত্যার ঘোষণা দেন।
শোবিজে কাজ করার স্বপ্ন নিয়ে উচ্চাভিলাষী বেপরোয়া জীবন নিয়ন্ত্রণ করতে না পারার করুণ পরিণতি মেনে নিতে হয়েছে তাসনিয়া রহমানকে। শোবিজ অঙ্গনের লোকজন মনে করছেন, আর্থিক সংকট ও প্রেমিকের সঙ্গে বিচ্ছেদের কারণে আত্মহত্যা করেছেন তাসনিয়া।