Thursday , November 14 2024
Breaking News
Home / Countrywide / কম বয়সী ছাত্রকে বিয়ের পর কলেজ শিক্ষিকার আত্মহনন, ভিন্ন তথ্য এলো সামনে

কম বয়সী ছাত্রকে বিয়ের পর কলেজ শিক্ষিকার আত্মহনন, ভিন্ন তথ্য এলো সামনে

নাটোর জেলার এক কলেজছাত্রের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে আলোচনায় আসেন কলেজ শিক্ষিকা খায়রুন নাহার। তাদের সেই অসম বিয়ের বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয় এবং এরপর গনমাধ্যমে উঠে আসে। সারা দেশের তাদের ব্যাপক বয়সের ব্যবধানের বিষয়টি নিয়ে শুরু হয় আলোচনা। তবে তারা দুজন সেই আলোচনা উপেক্ষা করেও এক সাথে সুখে জীবন কাটানোর কথা বলেছিলেন। কিন্তু সেই কথা আর রাখা হলো না সেই শিক্ষিকার। তার প্রয়ানের খবর সামনে আসতেই ফের শুরু আলোচনা। তার নিথর হয়ে পড়ে থাকা দেহ উদ্ধারের পর বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে, তিনি ‘আত্মহনন’ ঘটিয়েছেন নাকি ‘হ/”ত্যা’র শিকার হয়েছেন। এমন প্রশ্নের কোনো সুনির্দিষ্ট উত্তর এখনও পাওয়া যায়নি। তবে ঘটনার পরপরই পুলিশ ওই শিক্ষকের নিথর দেহ উদ্ধারসহ কলেজছাত্র মামুনকে পুলিশ হেফাজতে নেয়।

নাটোরের পুলিশ সুপার (এসপি) লিটন কুমার সাহা বলেন, আমরা ইতিমধ্যে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। এই ভাইরাল ছাত্র-শিক্ষিকা বিবাহ এবং প্রেমের গল্প সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হলে, দম্পতি এটিকে ইতিবাচক হিসাবে নেন। পরবর্তীতে সামাজিক, পারিবারিক, কর্মস্থলসহ বিভিন্ন স্থানে দম্পতির মধ্যে মানসিক চাপ সৃষ্টি হয়। এছাড়াও শিক্ষিকার আগের পরিবারের সন্তানও চাপ সৃষ্টি করে। এসব চাপের কারণে এটি ‘আত্মহনন’ নাকি অন্য কোনো কারণ রয়েছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবেই মূল রহস্য উদঘাটন হবে। ঘটনাস্থল থেকে তার স্বামীকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। নিথর দেহের সুরতহাল তৈরি করা হচ্ছে। এ ঘটনায় মামলাও চলছে। প্রাথমিকভাবে ঘটনাটি ‘আত্মহনন’ বলে মনে হচ্ছে।যে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ওড়না দিয়ে তার দেহ ঝুলে ছিলো, সেটি আগু’ন দিয়ে গলিয়ে তার স্বামী নিথর দেহ নিচে নামিয়েছেন। আগু”নে সিলিং ফ্যানের প্লাস্টিকের কভার পুড়ে গেছে। এসব ঘটনাও আমরা তদন্তে অন্তর্ভুক্ত করছি।

পুলিশ জানিয়েছে, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কোনো বিষয় নিয়ে ঝগড়া হয়েছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। শনিবার দুপুর ২টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত স্বামী মামুন বাসায় ছিলেন এমন তথ্যের ভিত্তিতে এসপি লিটন বলেন, আমরা যে তথ্য পাচ্ছি তা খতিয়ে দেখছি।

প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলার পর ঘটনার সম্ভাব্য কারণ হিসেবে স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, শোনা গেছে ছাত্র ও শিক্ষকের অসম বিয়ে ছিল আইনি সম্পর্ক। বিবাহ বহির্ভূত বা অবৈধ সম্পর্ক নয়। তবে শিক্ষিকার সহকর্মীসহ কেউ তার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করেননি। নানাভাবে সমালোচিত হয়েছেন তিনি। এমন পরিস্থিতিতে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন তিনি। একই ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন ওই শিক্ষিকার ভাই ও ভগ্নিপতি। আত্মীয়-স্বজনরাও সম্পর্কটিকে ভালোভাবে নেননি বলে জানান তারা। সর্বত্র তাকে তি”রস্কার করা হয়।

কিভাবে প্রেম এবং বিবাহ:

একই উপজেলার কলেজ ছাত্র মামুন তালাকপ্রাপ্ত কলেজ শিক্ষিকা নাহারের সাথে ফে”সবুকে পরিচয় হয়। প্রথমে বিষয়টি গোপন রেখে এক বছর ধরে চলে এই অসম প্রেম। পরে দুজনেই নিজেদের মধ্যে দূরত্ব ভুলে বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন। তাদের দুজনের মতে, বিয়ের পরও তাদের সম্পর্ক গোপনেই ছিল। একপর্যায়ে ৬ মাস গোপন রেখেই নাটোর শহরে বসবাস করছিলেন ওই দম্পতি। এরপর বিষয়টি জানাজানি হলে আলোচনা-সমালোচনা রূপ নেয় ৪৭ বছর বয়সী কলেজ শিক্ষিকা নাহার ও ২২ বছর বয়সী কলেজ ছাত্র মামুনের বিয়ে ও প্রেমের গল্প। তবে মামুনের পরিবার বিয়ে মেনে নিলেও নাহারের পরিবার মেনে নেয়নি। তাই ওই দম্পতি এলাকা ছেড়ে শহরে বসতি স্থাপন করেন।

এই সম্পর্ক প্রকাশের পর থেকেই অনেকে নেতিবাচক হিসেবে দেখেছেন। এক সন্তানের জননী নাহারের আগের পরিবার নেতিবাচক গল্প টিকিয়ে রাখতে পারেনি। তবে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সাক্ষাৎকারে এই দম্পতি দাবি করেছেন, তারা সুখী। আমি আমার জীবন এভাবেই কাটাতে চাই।

জানা যায়, ২০২১ সালের ১২ ডিসেম্বর গোপনে কাজী অফিসে গিয়ে বিয়ে করেন তারা। বিয়ের ৬ মাস পর তারা নাটোর শহরের একই বাড়িতে থাকে, যা প্রথমে বন্ধুদের মধ্যে পরে গোটা এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। এদিকে কলেজ ছাত্র মামুনের পরিবার বিয়ে মেনে নিলেও শিক্ষিকা নাহারের পরিবার মেনে নেয়নি। শিক্ষিকা মোছা. খায়রুন নাহার গুরুদাসপুরের খুবজিপুর এম হক ডিগ্রি কলেজের দর্শন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এবং গুরুদাসপুরের খামার নাচকৈড় এলাকার বাসিন্দা। আর কলেজ ছাত্র মামুন হোসেন নাটোর নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা সরকারি কলেজের ডিগ্রি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। কলেজ শিক্ষিকা নাহারের প্রথম বিয়ে হয় রাজশাহী জেলার বাঘা উপজেলার এক ছেলের সঙ্গে। পারিবারিক কলহের কারণে সংসার বেশি দিন না চললেও স্বামীর ঘরে ২ সন্তান রয়েছে।

ঘটনার কথা জানার পর কলেজ ছাত্রীকে বিয়ে প্রসঙ্গে খায়রুন নাহার বলেন, “প্রথম স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদের পর মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলাম। ওই সময় ফে”সবুকে মামুনের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। এরপর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থেকে দুজনের প্রেম হয়। তারপর আমরা দুজনে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিই। সমাজে কে কি বলল সেটা বড় কথা নয়। দুজনেই ঠিক থাকলে সব ঠিক থাকবে। আমার পরিবার সম্পর্ক মেনে নেয়নি। মামুনের বাড়ি থেকে মেনে নিয়েছে। আমার শ্বশুরবাড়ির লোকজনও আমাকে ভালোবাসে। আমি খুব খুশি।

এ সময় স্বামী মামুন বলেন, ‘খায়রুনকে বিয়ে করে আমি খুশি, সেইও খুশি। সবার দোয়ায় সারাজীবন এভাবেই থাকতে চাই।

এ সময় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কলেজ শিক্ষিকা একটি গণমাধ্যমকে বলেন, “কর্মজীবী ​​স্বামী বাইরে থাকায় কিছুটা কিছুটা বেপরোয়া জীবনযাপনের কারণে স্বামীর সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হতে শুরু করে নাহারের। যার কারণে তাদের সংসারে ভাঙ্গন দেখা দেয়। এর মধ্যে মামুনের সাথে পরিচয় ও প্রেমে পড়লে, সম্পর্কটিকে চিরস্থায়ী করার জন্য তিনি বিয়ে করেন।বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফে”সবুকেও ভাইরাল হয়েছে। এতে কেউ কেউ দোয়া করেছেন আবার অনেকে সমালোচনাও করেছেন। তাদের সংসার কতদিন চলবে তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন অনেকে।

ঘটনাটি যে সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ গণমাধ্যমেও ভাইরাল হয়, এরপর আবু সাঈদ যিনি খুবজীপুর মোজাম্মেল হক ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন, তিনি বলেন, খায়রুন নাহার শিক্ষিকা হিসেবে ভালো। তিনি এই প্রতিষ্ঠানে দর্শন বিভাগের সহকারী অধ্যাপিকা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। আমি ঘটনাটি প্রথমে জানতাম না, ফে,,সবুকের মাধ্যমে প্রথমে আমি খবরটি জানতে পারি। বছর খানেক আগে ওই শিক্ষিকা তার বসবাসের বিষয় নিয়ে জানান, তিনি নাটোর শহরেই স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করবেন। আমি খুব বেশি না হলেও এটুকুই জানতাম।

About bisso Jit

Check Also

উপদেষ্টা পরিষদেই বৈষম্য

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে আঞ্চলিক বৈষম্যের অভিযোগ উঠেছে। ২৪ সদস্যের এই পরিষদে ১৩ জনই চট্টগ্রাম …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *