আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে না বলে জানিয়েছেন দলটির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা। তাদের দাবি নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ছাড়া কোনভাবে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। ক্ষমতাসীন এবং দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে অবশ্যই ভোট কারচুপি হবে, এমনটাই জানিয়েছেন তারা। নির্বাচন কমিশন থেকে সংলাপে আমন্ত্রন জানানো হলেও তাতে অংশ নেয়নি বিএনপি। এবার এ বিষয়ে কথা বলেছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের নির্বাচনে বিএনপি কোনো ফাঁদে পা দেবে না বলে জানিয়েছেন গয়েশ্বর রায়। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে আর কোনো নির্বাচন নয়; তালবাহানায় আর কোনো ফাঁদে পা দেব না। দেশের অন্য কোনো গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল কোনো প্রহসনের নির্বাচনে অংশ নেবে না।
বুধবার জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের (জেডআরএফ) উদ্যোগে নেত্রকোনার আটপাড়া উপজেলা সুখারী ইউনিয়নে বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণের আগে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
এসময় তার সাথে ছিলেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শাহ ওয়ারেস আলী মামুন, জেডআরএফ রিলিফ কমিটির আহবায়ক অধ্যাপক ডাঃ মোঃ মোরশেদ হাসান খান, সদস্য সচিব ইঞ্জিনিয়ার মাহবুব আলম, জেলা বিএনপির আহবায়ক অধ্যাপক মোঃ আনোয়ারুল হক প্রমুখ। এবং সদস্য সচিব। রফিকুল ইসলাম হিলালী, জেডআরএফ সদস্য প্রকৌশলী মেহেদী হাসান প্রমুখ।
উপস্থিত বানভাসিদের উদ্দেশে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আমরা আমাদের সামর্থ্য দিয়ে আপনাদের পাশে আছি। আপনাদের বুঝতে হবে যে, আমরা ১৩ বছরেরও বেশি সময় ধরে বিভিন্ন নি”র্যা/’তনের শিকার হয়েছি। আপনার এলাকার সন্তান সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর গত ১৪ বছর ধরে কারাগারে আছেন। আমাদের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে হাজার হাজার মামলা। সরকার আমাদের গরীব করে দিয়েছে। তারপরও দেশের জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল হিসেবে আমাদের নেতা তারেক রহমানের নির্দেশে আপনাদের পাশে দাঁড়িয়েছি।
তিনি আরও বলেন, আপনাদের প্রিয় নেত্রী সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া আজ কারাবন্দি বা গৃহবন্দী। আর আপনারা পানিবন্দি। তাই দেশের নেত্রী যখন গৃহবন্দী, তখন পানিবন্দি মানুষের অসহায়ত্ব দেখার কোনো নেতা নেই।
ভারতের ভূপেন হাজারিকার গাওয়া একটি গানের লাইন দিয়ে গয়েশ্বর বলেন, “মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য। আওয়ামী লীগ কিন্তু জনগণের জন্য নয়। আওয়ামী লীগ লু”টেরা, চোরাকা”রবারি, টাকা পাচা”রকারী, খু’/নি, নারীদের সাথে খারাপ কাজকারী, অর্থ ও নারী পা”চারকারীদের জন্য। আর বিএনপি জনগণের জন্য। তাই বিএনপি জনগণের পাশে আছে এবং থাকবে।
নেত্রকোনাবাসীর জন্য দোয়া করে বিএনপি নেতা বলেন, আপনারা আমাদের জন্য দোয়া করবেন। আমরা যেন আরও শক্তি নিয়ে আপনাদের পাশে থাকতে পারি। আর আপনাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই লু”টেরা সরকারকে বিদায় জানাতে পারি।
এই মুহূর্তে দেশের ২০ শতাংশ বন্যাকবলিত উল্লেখ করে গয়েশ্বর বলেন, সব মিলিয়ে ২০ শতাংশ মানুষ বন্যার কবলে পড়েছে। কিন্তু শেখ হাসিনা সরকারের কারণে দেশের ১৬ কোটি মানুষ দুর্ভোগে পড়েছে। এর থেকে পরিত্রাণ পেতে হবে, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি পাওয়াতে হবে, ভোটের অধিকার পেতে হবে। আপনি আপনার ভোট দেবেন, ভোটকেন্দ্রে যাবেন এবং যাকে চান নিরাপদে দেবেন। আমাদের আন্দোলন আপনাদের অধিকার ফিরিয়ে আনার জন্য। যেদিন আমরা আপনাদের নিরাপদ ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারব, সেদিন আমরা নির্বাচনে যাব।
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে বিএনপি নেতা বলেন, যে দেশে তেল-গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানির দাম বাড়বে, সেখানে সব জিনিসের দাম বাড়বে। কারণ, এতে উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়। এর থেকে পরিত্রাণের একটিই উপায় – আপনাদের ঐক্যবদ্ধ শক্তি। আপনাদের শক্তি আমাদের দলের শক্তি এবং দেশের শক্তি। আপনাদের শক্তি ঐক্যবদ্ধ করে এই সরকারকে হটিয়ে দেব। আর দেশ, দেশের জনগণ এবং দেশনেত্রীকে মুক্ত করবো।
উল্লেখ্য, বিএনপি রাজনৈতিক মাঠে অনেকটা সংকটময় পরিস্থিতি ভেতর দিয়ে সময় পার করছে। দলটি নির্বাচনে অংশ না নিয়ে সংসদে নিজেদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছে। বিএনপি আগামী নির্বাচনে অংশ নেবে কিনা সে বিষয়ে সন্দেহ রয়েছে। তবে নির্বাচন কমিশন দলটিকে নির্বাচনে আনার জন্য নানা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।