Saturday , November 23 2024
Breaking News
Home / Countrywide / কপাল পুড়তে যাচ্ছে বেশ কিছু মন্ত্রী ও এমপির

কপাল পুড়তে যাচ্ছে বেশ কিছু মন্ত্রী ও এমপির

আগামী বছরের শেষদিকে বা ২০১৪ সালের প্রথম দিকে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আর এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সাথে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে মাঠে থাকবে বিএনপি, এমন পূর্ব ধারণা নিয়েই ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ সমগ্র দেশে একটি পরিচ্ছন্ন জরিপ চালাচ্ছে। আ.লীগ সারাদেশে ৩০০ আসনে জরিপ পরিচালনা করছে। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জরিপটি পরিচালনা করছেন। দলের প্রধান নেত্রী শেখ হাসিনার এই জরিপের মাধ্যমে দুর্নীতির সাথে জড়িত বর্তমান সংসদ সদস্য এমনকি অনেক বড় নেতারাও বাদ পড়তে পারেন।

‘জনপ্রিয় ও ক্লিন ইমেজের’ প্রার্থীকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নীতিগত সিদ্ধান্ত বিগত যেকোনো নির্বাচনের চেয়ে বেশি। দায়িত্বশীল নেতা বিভিন্ন সংগঠনের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করছেন। ইতোমধ্যে বিতর্কিত, জনবিচ্ছিন্ন মন্ত্রী-এমপিদের আমলনামা শেখ হাসিনার টেবিলে। দল ও জনসভা সূত্রে জানা গেছে, যারা দল ও সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে তারা ‘শাস্তি’ হিসেবে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার টিকিট পাবে না।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কর্নেল (অব.) মুহম্মদ ফারুক খান একটি সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘শুধু জাতীয় সংসদ নির্বাচন নয়, স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও কোনো জনবিচ্ছিন্ন, দলের সঙ্গে সম্পর্কহীন, বিতর্কিত, এলাকায় বদনাম আছে এমন কাউকে অতীতেও দল মনোনয়ন দেয়নি, আগামীতেও দেওয়া হবে না।’ দলীয়, বিতর্কিত, অতীতেও এলাকায় যার বদনাম রয়েছে, ভবিষ্যতেও মনোনয়ন পাবেন। না।’ তিনি বলেন, ‘আসন্ন সংসদ নির্বাচনে আরও কঠোরভাবে মনোনয়ন দেওয়া হবে। কারণ, এবারের নির্বাচন হবে খুবই প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। জনপ্রিয় ও ক্লিন ইমেজের প্রার্থীকে নৌকা দেওয়া হবে। যারা দল ও সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে তাদের দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হবে না- এটাই দলীয় সভাপতির চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনের এখনো প্রায় দেড় বছর বাকি থাকলেও আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার হোমওয়ার্ক শুরু করেছেন। দলীয় এমপি-মন্ত্রীদের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে বিভিন্ন সংস্থা, নিজস্ব টিম, বর্তমান নেতাদের সর্বশেষ প্রতিবেদন তিনি নিয়েছেন। এর বাইরে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা এখন তিন মাস পর মাঠ জরিপের ফলাফল পর্যালোচনা করছেন।

গণভবনের একটি সূত্র জানায়, গোপন প্রতিবেদনে বেশ কয়েকজন এমপি-মন্ত্রীর নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের কথা উঠে এসেছে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। দলীয় নেতা-কর্মীদের মা”রধর, মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠানো, দলের মধ্যে গ্রুপিং সৃষ্টি, নিয়োগ বাণিজ্য, টিআর, কাবিখায় দুর্নীতি, নিষিদ্ধ দ্রব্যের ব্যবসায়ীদের আশ্রয় দেওয়া, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে মনোনয়ন বাণিজ্য, স্বজনপ্রীতি দিয়ে স্থানীয় রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ, এমপি লিগ তৈরি করা। ভাই লীগ ইত্যাদি নানা অভিযোগ।

সূত্র আরও জানায়, আগামী সেপ্টেম্বর থেকে তৃণমূলে কঠোর পরিশ্রমী ও পরীক্ষিত তৃণমূলে যারা মাঠে আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয় রয়েছেন তাদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানোর কৌশল নিতে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া রোগের প্রাদূর্ভাবের পরিস্থিতির কারণে সীমিত সভা-সমাবেশে নিষেধাজ্ঞা শিথিল করতে জেলা ও উপজেলা নেতাদের আহ্বান জানাবেন দলীয় প্রধান।

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দলকে আরও সুসংগঠিত করতে চান আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলে জানা গেছে। দলের অভ্যন্তরীণ কো’ন্দল, কো’ন্দল ও বিভেদ দূর করতে নির্দেশনা দেন তিনি। এ নির্দেশনার পর দলটির বিভাগীয় কর্মকর্তারা কাজ শুরু করেছেন। তারা তৃণমূলে মেয়াদোত্তীর্ণ ইউনিট সম্মেলনের মাধ্যমে বিতর্কিত ও অজনপ্রিয়দের বাদ দিয়ে দলের বিচার-পরীক্ষিত সদস্যদের দায়িত্বশীল পদে নিয়ে আসছেন। শক্তিশালী ও ঐক্যবদ্ধ সাংগঠনিক পরিস্থিতি তৈরি করে আবারও রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগের টার্গেট। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, “প্রতিটি আসনে বর্তমান দলীয় সংসদ সদস্য ও সম্ভাব্য প্রার্থীদের খোঁজখবর নেওয়াকে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। অনেক আসনে বিকল্প এক বা একাধিক প্রার্থীর কথাও ভাবা হচ্ছে। দলের সভাপতি শেখ হাসিনা। হাসিনা তাদের তদারকি করছেন।

সূত্র জানায়, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অন্তত ২১০টি আসন থাকবে। ২১০টি আসনকে লক্ষ্য করে নির্বাচনী মাঠ প্রস্তুত করবে দলটি। এ জন্য দেশের অর্ধশতাধিক এমপি-মন্ত্রীর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করছেন ক্ষমতাসীন দলের দায়িত্বশীল নেতারা। যেসব এমপি-মন্ত্রীর বিরুদ্ধে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে নৌকা বিরোধী তৎপরতা ও বিদ্রোহীদের ইন্ধন দেওয়া, মাঠকর্মীদের শক্তি প্রদর্শন, পরিবার-পরিজন নিয়ে স্থানীয় রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ, ত্যাগীদের অবমূল্যায়ন, দলকে শক্তিশালী করতে হাইব্রিড নেতাদের নিয়ে বিভেদ সৃষ্টি ও কমিটি গঠনের অভিযোগ রয়েছে, এসব অভিযোগ চুলচেরা বিশ্লেষণ করা হচ্ছে।

এ ছাড়া জেলা-উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের সঙ্গে এমপিদের দূরত্ব কোথায় বেড়েছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে এবং তা সমাধানে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। বিতর্কিতদের জায়গায় তরুণ, নিঃস্বার্থ ও সৎ নেতাদের খোঁজ করা হবে।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান বলেন, আগামী সংসদ নির্বাচনে দলীয় সভাপতি আ”সামিদের মনোনয়ন দেবেন না। কারণ, বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িত এমপিদের বাদ দিয়ে উজ্জ্বল ভাবমূর্তিসম্পন্ন প্রার্থীর হাতে নৌকা তুলে দিলে জয়ের অনেকটাই আত্মবিশ্বাস তৈরি হতে পারে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে কোনো ঝুঁকি নেবে না দলটি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলের ইমেজ কখনোই নষ্ট হতে দেন না, এ বিষয়ে তিনি যেকোনো ধরনের নেতাকে কখনো ছাড় দেন না। তবে তিনি সুযোগ দেন। নির্বাচনে কাদের প্রার্থী করবেন সে বিষয়ে ইতিমধ্যে পরিকল্পনা করতে শুরু করেছেন এবং তার নেওয়া সিদ্ধান্ত সকল নেতারাই সসম্মানে গ্রহণ করবে। তিনি দলীয় সিদ্ধান্তে কোনো ভুল করেন না, এমনটিই জানিয়েছেন দলটির প্রবীন কয়েকজন নেতা।

About bisso Jit

Check Also

সংস্কারের নামে ভয়াবহ দুর্নীতি-লুটপাট

সংস্কার ও উন্নয়নের নামে কয়েকগুণ বেশি ব্যয় দেখিয়ে হরিলুটের ব্যবস্থা করা হয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *