বসুন্ধরা গ্রুপ হলো বাংলাদেশের অন্যতম একটি সেরা প্রতিষ্ঠান। বসুন্ধরা গ্রুপের সুনাম ছড়িয়ে আছে বাংলাদেসহ বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে। বসুন্ধরা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হলো আহমেদ আকতার সোবহান। তিনি অক্লান্ত পরিশ্রম করে গড়ে তুলেছেন তার সাফল্যের সম্রাজ্য। সোবাহানের ছেলে সায়েম সোভান তানভীর বলেছেন অর্থনীতির চাকা ঘুড়িয়ে দিবে পদ্মা সেতু।
অনেকেই বললেন, সম্ভব নয়। কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এটা সম্ভব—এবং তিনি তা করেছেন। আজ এলো সেই সম্ভাবনার মাহেন্দ্রক্ষণ। যার জন্য পুরো জাতি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।
অনেক প্রতীক্ষা ও অনেক সাধনার পর জাতির এই মাহেন্দ্রক্ষণকে কোন বিশেষণে উপস্থাপন করা সম্ভব নয়, বুঝলাম না। একই সঙ্গে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর মতো বড় কাজ দেখানো আনন্দ, গৌরব ও যোগ্যতার প্রমাণ। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণা কি খুব সহজ ছিল? একেবারেই না. তবে মনের জোরে অনেক অসম্ভব কাজই সম্ভব হয়ে যায়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যখন নিজের টাকায় এই সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেন, তখন জাতির এই স্বপ্নের সেতুটি অনেক ‘ইফস’-কে ঘিরে ঘুরছিল। তবে বঙ্গবন্ধু কন্যার উদ্যমী প্রতিশ্রুতি জাতির জন্য এই অমূল্য উপহার এনে দিয়েছে। তাও খুব অল্প সময়ে। এমন এক সময়ে যখন ব্রিজ নির্মাণের কাজ দুরন্ত গতিতে এগিয়ে চলছিল, করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে পুরো বিশ্ব থমকে গেছে। কিন্তু এই কঠিন বাধাও পদ্মা সেতুর সামনে বাধা প্রাচীর হয়ে দাঁড়াতে পারেনি।
একেবারে তিল তিল করে গড়ে উঠেছে মাথা থেকে পা পর্যন্ত সেতু। পদ্মা সেতুতে ব্রাশের শেষ আঁচড় দেওয়ার পর গত সপ্তাহে দুই পাশের বাতি জ্বলে ওঠে। যেন প্রাণের স্পন্দন সঞ্চারিত হয়। এবার তিল দিয়ে তৈরি আশার প্রদীপ জ্বলতে শুরু করেছে। এক সময়ের অন্ধকার গ্রাম আজ পদ্মার আলোয় ঝলমল করছে। চারদিকে আলোকিত করা হয়েছে। ডানা মেলতে শুরু করেছে অদেখা উজ্জ্বল স্বপ্নগুলো। পদ্মা সেতুর ছবি দেখলে মনে হবে শিল্পীর হাতে একটু একটু করে তৈরি করা ক্যানভাস। এটি কেবল একটি সেতু নয়, এটি আমাদের সক্ষমতার স্মরণ করিয়ে দেবে। একই সাথে এটি বিশ্বকে বার্তা দিয়েছে যে বাঙালিরা বরাবরের মতোই অদম্য। আমরা যা চাই তা করতে পারি।
তবে জাতির পিতার যোগ্য উত্তরসূরি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বের সামনে এই অঙ্গীকার না করলে এই অসম্ভব কাজটি সম্ভব হতো না। কিভাবে অজেয়কে জয় করতে হয় তা তিনি প্রমাণ করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর এই প্রতিশ্রুতি বাঙালি জাতির জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।
সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো এই প্রথম সড়কে অনেক জেলার মানুষ পদ্মা পাড়ি দিয়ে রাজধানীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবে। প্রচণ্ড পদ্মার ঢেউয়ে জীবন-মৃত্যুর মাঝখানে দাঁড়ানোর পাশাপাশি অদূর ভবিষ্যতে নদী পারাপারেরও ব্যবস্থা থাকবে শরীয়তপুরের মানুষ নিশ্চয়ই কখনো ভাবেনি!
পদ্মা সেতু দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অর্থনীতির উল্লেখযোগ্য উন্নতি ঘটাবে, উত্তরবঙ্গে শিল্প বিপ্লব ঘেরা বঙ্গবন্ধু সেতু দ্বারা প্রমাণিত। এই সেতুর ফলে উত্তরবঙ্গের অর্থনীতিতে যে পরিবর্তন হয়েছে তা বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে প্রায় ২% অবদান রেখেছে।
পদ্মা সেতুর ক্ষেত্রেও এ ধরনের অবদান অনুমান করা হয়েছে। অনেক বিশেষজ্ঞের মতে, যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু সেতুর চেয়েও বেশি অবদান রাখবে পদ্মা সেতু। পদ্মা সেতুর ধারে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ম্যানুফ্যাকচারিং ব্যবসা, আরএমজি, অ্যাসেম্বলিং প্লান্ট ও স্টোরেজ সুবিধাসহ অনেক ছোট-বড় শিল্প গড়ে উঠবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এডিবির মতে, সেতুটিকে ঘিরে সরাসরি বিনিয়োগ আঞ্চলিক অর্থনীতিকে চাঙ্গা করবে। জাইকার মতে, ঢাকা থেকে ভ্রমণের সময় 10 শতাংশ হ্রাস জেলার অর্থনীতিকে 5.5 শতাংশে উন্নীত করবে, যা এই অঞ্চলের বার্ষিক জিডিপি প্রবৃদ্ধি 1.6 শতাংশ বৃদ্ধি করবে।
সড়কপথে ঢাকা ছোঁয়ার আনন্দ শুধু কিছু জেলার মানুষই পাবে না, এই সেতু জাতীয় অর্থনীতিকেও অনেকখানি চাঙ্গা করবে। এগুলো যশোরের গদখালীর ফুল, বিদেশেও রপ্তানি হয়; কিন্তু বাস্তবতার নিরিখে ঢাকায় পৌঁছানো ছিল খুবই ব্যয়বহুল। এখন যে ফুল ভোরে ফুটে তা সহজেই ঢাকায় পৌঁছাতে পারে। এতে কিছু খরচ হবে না। খুলনার মাছ বলুন আর বরিশালের ভাত-পান বলুন, কোনো ঝামেলা ছাড়াই রাজধানী ছুঁয়ে ফেলুন। লাখ লাখ মানুষ এসব পণ্য আনা-নেওয়ার বিশাল সমস্যা থেকে মুক্তি পাচ্ছে, এটা সরাসরি অর্থনীতির কোণে ঘুরে দাঁড়াবে। জিডিপি বাড়বে। আর সচল হবে অন্তত তিন কোটি মানুষের জীবিকা।
আজকের এই বিশেষ মুহূর্তে সমগ্র জাতির মতো আমরাও আনন্দিত ও আনন্দিত। আমাদের আনন্দটা একটু বেশিই। কারণ স্বপ্নের পদ্মা সেতুতে আমাদের উৎপাদিত দুটি গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ রয়েছে- সিমেন্ট ও বিটুমিন। সেতু নির্মাণে প্রয়োজনীয় সিমেন্টের ৮০ শতাংশের বেশি সরবরাহ করেছে বসুন্ধরা গ্রুপ। বসুন্ধরা গ্রুপের জাতির গর্বের সেতুর সাথে সম্পৃক্ত হতে পেরে অত্যন্ত আনন্দের বিষয়, যারা ‘দেশ ও জাতির কল্যাণে’ প্রতিপাদ্য নিয়ে দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলেছে।
সেতুটি মসৃণ করতে ভূমিকা রেখেছে বসুন্ধরা বিটুমিন। দেশে উৎপাদিত এই আধুনিক ও উন্নত গ্রেডের বিটুমিন পদ্মা সেতুর সংযোগ সড়কেও ব্যবহার করা হয়েছে। বসুন্ধরা বিটুমিন কারখানা স্থাপনের মূল উদ্দেশ্য ছিল দেশের সড়ক খাতে অভাবনীয় পরিবর্তন আনা। বিদেশ থেকে আমদানি করা নিম্নমানের বিটুমিন দিয়ে রাস্তা টেকসই হয় না। নতুন রাস্তাও ভাঙা। দুর্ভোগ বাড়ার পাশাপাশি সরকারকে গুনতে হচ্ছে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা। দেশে বসুন্ধরা বিটুমিন উৎপাদন বহুমুখী সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে। পদ্মা সেতুর মতো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে এই বিটুমিনের ব্যবহার এর গুণগত মান তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছে।
বাণিজ্য সহায়ক নেতা হিসেবে প্রধানমন্ত্রী দেশের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বাড়াতে বেশ কিছু উদ্যোগ নেন, যা ব্যবসায়ীরা অত্যন্ত ফলপ্রসূ বলে মনে করেন। এতে বাংলাদেশি উদ্যোক্তারা অন্যান্য দেশের সঙ্গে আমদানি বৈষম্য কমাতে নতুন উৎপাদনশীল ব্যবসার সন্ধান করছেন। দেশীয় উদ্যোক্তারা যাতে সহজেই আমদানি-বান্ধব শিল্প গড়ে তুলতে পারে সেজন্য প্রধানমন্ত্রীর আরও দোয়া চাই।
অন্যদিকে, বসুন্ধরাই একমাত্র বাংলাদেশি কোম্পানি যার মূল সেতুর পিলারে সিমেন্ট ব্যবহার করা হয়েছে। মূল স্তম্ভে অন্য কোনো দেশীয় ব্র্যান্ডের সিমেন্ট ব্যবহার করা হয়নি। এছাড়া এর আগে প্রকল্পের সংযোগ সড়কের কাজ শেষ হয়েছে। পুরো সংযোগ সড়কের কাজ একাই করেছে বসুন্ধরা সিমেন্ট। এছাড়া জাজিরা ও মাওয়ায় নদী ব্যবস্থাপনার জন্য আমাদের ১৪টি সিমেন্ট সাইলো রয়েছে। এটিও 100% বসুন্ধরা সিমেন্ট দিয়ে করা হচ্ছে। পদ্মা রেলওয়ে লিংক প্রকল্পে বসুন্ধরা সিমেন্ট ব্যবহার করা হবে, যার মাধ্যমে পদ্মা সেতু থেকে যশোর পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ করা হচ্ছে। এভাবে দেশের বৃহত্তম মেগা প্রকল্প পদ্মা সেতুতে চার লাখ টন সিমেন্ট সরবরাহ করে সক্ষমতা প্রমাণ করেছে বসুন্ধরা সিমেন্ট।
এত আনন্দের উল্টো পাতায় দুঃখের গল্পের কমতি নেই। সেই প্রাথমিক ষড়যন্ত্রটি শেষ কথা নয়, তবে এটি ছিল শুরু। তারপর সেতুর একটি স্তম্ভ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে, তার গুজব ছড়িয়েছে কল্পনার ডালপালা। কোটি কোটি মানুষের আস্থা ও আস্থার এই সেতু বন্ধ করতে শত কোটি মাস্টারপ্ল্যান ব্যর্থ হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধানে কোনো অশুভ শক্তি আসতে পারেনি। আমি মনে করি বঙ্গবন্ধু কন্যার আন্তরিকতার কারণেই এই সেতুটি নির্মিত হয়েছে। তবে প্রধানমন্ত্রী উদার মানসিকতার সঙ্গে বলেন, দেশের মানুষ চেয়েছিল বলেই শেষ পর্যন্ত পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর প্রতি জনগণের আস্থা ও ভালোবাসার প্রতীক হয়ে উঠুক এই সেতু।
প্রসঙ্গত, পদ্মা সেতু বাংলার মানুষের কাছে জীবনের সেরা উপহার হিসেবে অবতীর্ণ হয়েছে। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের অনুষ্ঠানে লাক্ষ লাক্ষ মানুষ উপস্থিত হয়েছে। এযেন তাদের জীবনের সবথেকে শ্রষ্ঠ আনন্দ। এই আনন্দের কথা মানুষ বলে বুঝাতে পারবেনা।