ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বিএনপির বর্তমান দুঃসময়ের অন্যতম একজন কাণ্ডারির নাম। শুরু থেকেই তিনি বিএনপির রাজনীতির সাথে যুক্ত রয়েছেন ওতপ্রোতভাবে। রুমিন ফারহানার বাবা অলি আহাদ ছিলেন এদেশের একজন ঐতিহ্যবাহী ও অনুকরণীয় রাজনীতিবিদ। বাবাকে হারিয়ে রাজনীতিতে আসেন রুমিন ফারহানা। অলি আহাদের অসুস্থতা ও মৃত্যুর পর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পাশে দাঁড়ানোর স্মৃতি কখনো ভুলতে পারেননি রুমিন ফারহানা। রুমিনের মতে, সেই ঋণ কিছুটা হলেও শোধ করতেই তিনি বিএনপির রাজনীতিতে এসেছেন।
সাংবাদিকের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় রুমিন ফারহানা জানালেন তার রাজনীতিতে আসার গল্প। তিনি বলেন, আমার বাবা অসুস্থ হলে জাতীয় নেত্রী খালেদা জিয়া আমাদের বাসায় এসে বাবাকে দেখেন। যেদিন আমার বাবা মারা যান ২০ অক্টোবর, তিনি চীন থেকে সকালের ফ্লাইটে আসেন। এটি একটি দীর্ঘ ফ্লাইট এবং বেশ কঠিন। তিনি বাড়িতে এসে বিশ্রাম নিতে পারতেন এবং পরে আমাদের বাড়িতে সমবেদনা জানাতে আসতে পারতেন; কিন্তু তিনি তা করেননি। তিনি বিমানবন্দর থেকে সরাসরি হাসপাতালে আসেন।
তিনি বলেন, আমি আমার বাবার একমাত্র সন্তান। যেদিন আমি আমার বাবাকে হারিয়েছিলাম সেদিন আমার মনে হয়েছিল আমি পৃথিবীর সবকিছু হারিয়েছি। এ সময় তিনি আমার মাথায় হাত রেখে আমাকে সান্ত্বনা দিলে আমি তার কাছে ঋণী হয়ে যাই। তারপর থেকে সেই ঋণ শোধ করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি।
রুমিন বলেন, ২০১৩-১৪ সালে যখন দেশ অশান্ত ছিল; কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না। এই কথাগুলো আগে কখনো বলিনি। তবে অনেকেই বলছেন রুমিন ফারহানার হঠাৎ আবির্ভাব।
তাদের জন্যই আজ বলছি- ২০১৩-১৪ সালে কাউকে দেখা যায়নি। সবাই গর্তের নিচে ছিল। সে সময় চ্যানেলগুলোতে প্রতিদিন রাতে দুই-তিনটি টকশো করতেন রুমিন। কারণ চ্যানেলগুলো কী করবে, কোনো পরিচিত মুখ নেই। চেনা মুখগুলো হারিয়ে গেছে। তখন এই অচেনাকে নিয়ে যেতে হয় রুমিনকে। সেই অজানা রুমিনই চ্যানেলে চ্যানেল ঘুরে বিএনপিকে নিয়ে কথা বলছেন।
২০১৩-১৫, আজকাল কিছুই মুছে যায় না; আর্কাইভ সবকিছু ধারণ করে. ওই সময় কে গিয়েছিলেন, কার মুখ দেখা গেছে, আর্কাইভ না থাকলেই দেখা যাবে। তাই সে সময় দেশনেত্রীর ঋণ কিছুটা হলেও শোধ করার চেষ্টা করেছি। আমি তার কাছে অনেক ঋণী।
তিনি বলেন, বাবার মৃত্যুর এক বছর পর আমাকে না জানিয়ে পররাষ্ট্র দপ্তরের সদস্য বানিয়েছিলেন। তখন ফরেন অ্যাফেয়ার্স টিমের মাত্র ১০ জন সদস্য ছিল। আমি ছাড়া বাকি ৯ জন আমার বাবাকে নিয়ে রাজনীতি করছেন। অর্থাৎ একজন প্রবীণ রাজনীতিবিদ।
আমি ২০১২-১৩ সালে খুব ছোট ছিলাম; কিন্তু তিনি আমাকে সেই দলের সদস্য বানিয়েছিলেন। যখন আমি সেই টিম মিটিংয়ের দরজা খুলেছিলাম, আমি ভেবেছিলাম আমি ভুল ঘরে চলে গিয়েছিলাম। কারণ সেখানে সবাই আমার বাবার বন্ধু। ওসমান ফারুক, শমসের মুবিন চৌধুরী, রিয়াজ রহমান, সাবিউদ্দিন আহমেদের মতো সিনিয়র সদস্য চারপাশে। আমি ভাবলাম আমি নিশ্চয়ই ভুল ঘরে এসেছি।পরে আমাকে বলা হলো, না আমাকে আসলে এই কমিটির সদস্য করা হয়েছে। তো এই ঋণগুলো উনার কাছে আমার আছে।
প্রসঙ্গত, দীর্ঘ দিন ধরেই রাজনীতির বাইরে রয়েছেন বিএনপির প্রধান বেগম খালেদা জিয়া। বর্তমানে অসুস্থ অবস্থায় রয়েছেন নিজ বাড়িতে। এ তার এই অনুপস্থিতিতে দল পরিচালনা করছেন রুমিন ফারহানা, মির্জা ফখরুলের মত ত্যাগী সব নেতারা।