সম্প্রতি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া অসুস্থ থাকার কারণে তাঁর বিদেশে চিকিৎসা নিয়ে আন্দোলনের জন্য বিএনপির পক্ষ থেকে বিভিন্ন জায়গায় সমাবেশ করা হচ্ছে, গড়ে তোলা হচ্ছে আন্দোলন। তবে এটাকে একটা ইস্যু টেনে জ্বালাও-পোড়াও কর্মসূচি বলে আখ্যা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। যার পরিপ্রেক্ষিতে সমাবেশ গুলোকে বন্ধের জন্য সক্রিয় রেখেছে নিজেদের নেতাকর্মীদের, সাথে পুলিশকেও। সম্প্রতি কক্সবাজারে বিএনপি’র সমাবেশ রুখে দিয়ে এমনটাই জানান দিলো আ.লীগ।
কক্সবাজারের চকরিয়ায় গণতন্ত্রের বিজয় দিবস সফল করতে মহাসড়ক এবং উপসড়কের অন্তত ১০টি পয়েন্টে কঠোর অবস্থানে ছিল আওয়ামী লীগ এবং অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। মহাসড়কের চকরিয়ার ৩৯ এবং আঞ্চলিক সড়কের ২৫ কিলোমিটারের মধ্যে হারবাং, বরইতলী, লক্ষ্যারচর, পৌরসভা, মৌলভীরকুম বাজার, ডুলাহাজারা, খুটাখালী, বদরখালীসহ ১০টি পয়েন্টে অবস্থান নেয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা।
কক্সবাজার-১ আসনের সংসদ সদস্য ও চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাফর আলমের নেতৃত্বে ও নির্দেশে দলের নেতাকর্মীরা সোমবার (৩ জানুয়ারি) ভোর সাড়ে পাঁচটা থেকে দিনভর এসব পয়েন্টে কঠোর অবস্থান করেন।
এই কারণে গণতন্ত্র হত্যা দিবস ও দলের প্রধান বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বিএনপির নেতাকর্মীরা কোথাও মাঠে নামতে পারেনি চকরিয়ায়। এমনকি পূর্ব ঘোষিত কক্সবাজার শহরে বিএনপির মহাসমাবেশে যোগ দেওয়ার জন্য অসংখ্য বিভিন্ন যানবাহন ভাড়া করলেও রবিবার মধ্যরাত থেকে ভোরপর্যন্ত সেসব যানবাহন আটকে দেওয়ায় ভেস্তে যায় বিএনপি নেতাকর্মীদের কক্সবাজারের মহাসমাবেশে যোগ দেওয়া।
আওয়ামী লীগ দলীয় সূত্র জানায়, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও স্থানীয় সাংসদ জাফর আলমের নেতৃত্বে রবিবার দিবাগত রাত থেকে ভোর সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়ার ৩৯ কিলোমিটার এবং চকরিয়া পৌরশহর থেকে বদরখালী পর্যন্ত প্রায় ২৫ কিলোমিটার সড়কে দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে মহড়া দেওয়া হয়। এ সময় বিএনপির নেতাকর্মী বোঝাই অর্ধশত যানবাহন আটকে দেওয়া হয়। এতে তারা বিএনপির পূর্বঘোষিত কক্সবাজারের মহাসমাবেশে যোগ দিতে পারেনি।
সরেজমিন দেখা গেছে, সোমবার ভোর সাড়ে পাঁচটা থেকে চকরিয়া পৌরসভা ও মৌলভীরকুম পয়েন্টে অবস্থান নেন পৌরসভা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহেদুল ইসলাম লিটু, সিনিয়র সহ-সভাপতি ওয়ালিদ মিল্টন, তপন কান্তি দাশ, পৌরসভার সাবেক প্যানেল মেয়র বশিরুল আইয়ুব, ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও যুবলীগ নেতা হেলাল উদ্দিন হেলালী, পৌরসভার প্রচার সম্পাদক আরিফ মঈনুদ্দীন রাসেল, ৮নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আহমদ রেজা, সাধারণ সম্পাদক রিয়াদ উদ্দিন, সুমন কান্তি দাশ, সাবেক কাউন্সিলর হুমায়ন কবির, বর্তমান কাউন্সিলর বেলাল উদ্দিন, জয়নাল হাজারীসহ অসংখ্য নেতাকর্মী।
হারবাংয়ে কঠোর অবস্থানে উপস্থিত ছিলেন হারবাং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মেহরাজ উদ্দিন মিরাজ, সহসভাপতি মুজিবুর রহমান বাদশাসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। বরইতলীতে ছিলেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আহবায়ক ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম, পহরচাঁদা সাংগঠনিক ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি নেয়াজুল ইসলাম বাদল, সাধারণ সম্পাদক আবদু শুক্কুর মেম্বারসহ বরইতলীর দুই ইউনিট আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মী এবং যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগ, শ্রমিকলীগসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
ডুলাহাজারায় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হাসানুল ইসলাম আদর, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ডা. আজিজুল মন্নান, সাধারণ সম্পাদক মনসুর আলমসহ দলীয় নেতাকর্মীরা। সীমান্ত ইউনিয়ন খুটাখালীতে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি জয়নাল আবেদীন মেম্বার এবং সাধারণ সম্পাদক বাহাদুর হকের নেতৃত্বে দলীয় নেতাকর্মী। উপকূলীয় বদরখালীতে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি নূরে হোছাইন আরিফ এবং সাধারণ সম্পাদক এ কে ভুট্টু সিকদারের নেতৃত্বে দলীয় নেতাকর্মীরা কঠোর অবস্থানে ছিলেন দিনভর।
অপরদিকে পেকুয়ার মগনামায় সাবেক চেয়ারম্যান শরাফত উল্লাহ ওয়াসিমের নেতৃত্বে কঠোর অবস্থান সৃষ্টি করা হয়। এ সময় উপজেলা যুবদল সভাপতি সাবেক চেয়ারম্যান শাফায়েত আজিজ রাজুসহ বিএনপি নেতাকর্মীদের ধাওয়া দিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয় বলে এমপির ব্যক্তিগত সহকারী জানিয়েছেন।
এমপি জাফর আলমের ব্যক্তিগত সহকারী আমিন চৌধুরী জানান, আন্দোলনের নামে বিএনপির জ্বালাও-পোড়াওয়ের কর্মসূচি রুখে দিতে এবং ৩ জানুয়ারি গণতন্ত্রের বিজয় দিবসের কর্মসূচি সফল করতে গত একসপ্তাহ ধরে মাঠে তৎপর ছিলেন এমপি মহোদয়। তিনি প্রতিদিন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সংগঠিত করতে এখানে-ওখানে ছুটে যান। এ কারণে কথিত গণতন্ত্র হত্যা দিবসে বিএনপির কোন নেতাকর্মী মাঠে নামতে পারেনি। এমনকি চকরিয়া থেকে অর্ধশত গাড়ি যোগে কক্সবাজারের মহাসমাবেশে যোগ দেওয়ার জন্য প্রাক্কালে চকরিয়ার বিভিন্নস্থানে তাদের আটকে দেওয়া হয়। এতে নেতৃত্ব দেন এমপি জাফর আলম।
চকরিয়া থানার ওসি মুহাম্মদ ওসমান গনি জানান, আগে থেকে বার্তা ছিল সোমবার বিএনপির নেতাকর্মীরা মাঠে নামবে। তাই এমপি মহোদয়ের নেতৃত্বে সরকার দলের নেতাকর্মীরা মাঠে তৎপর থাকার পাশাপাশি পুলিশও ব্যাপক সক্রিয় ছিল। এতে সারাদিন চকরিয়ার কোথাও বিএনপি নেতাকর্মীদের মাঠে নামতে দেখা যায়নি।
সমস্ত প্রশাসন সক্রিয় থাকায় সাথে আরও আওয়ামী লীগ কর্মীরা যুক্ত থাকায় সমাবেশে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারেনি বিএনপি। তবে এখন দেখার বিষয় এভাবে কতদিন আটকে রাখা যায় বিএনপিকে, আর শেষ পর্যন্ত সম্ভব হয় কিনা! তবে বিএনপি’র মতে এটা কোন জ্বালাও-পোড়াও কর্মসূচি না, এটা আন্দোলন শুধুমাত্র বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে। বিএনপির মতে সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে এগুলো করছে, সরকার চাইলেই খালেদা জিয়াকে বিদেশ চিকৎসার জন্য যেতে দিতে পারে।