সাম্প্রতিক সময়ে দেশের অন্যতম পর্যটন স্থান কক্সবাজারে এক নারীর সাথে গর্হিত কাজের ঘটনা ঘটার পর দেশজুড়ে বিষয়টি আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেয়। এই ঘটনার পর বিভিন্ন সময়ে নানা ধরনের তথ্য গণমাধ্যমে উঠে এসেছে। ঘটনার প্রেক্ষিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তদন্ত করার পর যেসব তথ্য জানানো হয়েছে তাতে তারা ঘটনার বিষয়ে রহস্যজনক তথ্য খুঁজে পেয়েছ। কারন হিসেবে জানিয়েছেন, ঐ নারী দীর্ঘদিন ধরে কক্সবাজারে অবস্থান করেছে এবং অভিযুক্তরা তার পূর্ব পরিচিত। এই বিষয়টি নিয়ে তদন্তে নানা বিষয় উঠে আসছে। তবে দেশের একটি জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যমে কথা বলতে গিয়ে গর্হিত কাজের শিকার হওয়া মামলার বাদী জানিয়েছেন, আমরা ঘটনার পর পরই জরুরী সেবা নম্বর ৯৯৯ এ কল করার পরেও কোন ধরনের সাহায্য পায়নি। এই ঘটনার পর মামলা করার জন্য থানায় গেলে সেখানে মামলা দিতেও অনেক টাকা খরচ করতে হয়েছে। পরবর্তীতে চা-পানি খাওয়ার জন্যও পুলিশকে টাকা দিতে হয়েছে, এমনটাই অভিযোগ করেন মামলার বাদী।
বাদী আজ বুধবার দেশের একটি জনপ্রিয় গনমাধ্যমকে জানান, ২২ ডিসেম্বর রাত দুইটা থেকে পরদিন রাত চারটা পর্যন্ত তাঁরা কক্সবাজার থানায় ছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমি যখন অভিযুগটা দিই, আমার থন ৫০০ টাকা চাইছে। পরে ১০০ টাকা ফেরত দিছে। এর আগেও নিছে।’ বাদী যখন সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন, তখন তাঁর স্ত্রী ও সন্তান পাশেই ছিল।
ওই ব্যক্তি জানান, ২২ ডিসেম্বর তাঁর স্ত্রীকে অপহরণের পর গর্হিত কাজের ঘটনা ঘটলে কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে তাঁরা থানায় যান। টানা প্রায় ৩০ ঘণ্টা তাঁদের নাওয়াখাওয়া হয়নি। ২৩ ডিসেম্বর বিকেল পাঁচটার দিকে তিনি একবার থানা চত্বরের কাছে একটি দোকান থেকে পানি কিনতে যান। এ সময় তাঁর হাতে অপরিচিত এক ব্যক্তি একটি চিঠি ধরিয়ে দেন। ওই দিন সন্ধ্যায় মামলা করার সময় তিনি চা খেতে বাইরে যেতে চান। দোকান থেকে এক কাপ রং চা খেয়ে ১০০ টাকার নোট বাড়িয়ে দিলে দোকানি তাঁকে ৩০ টাকা ফেরত দেন। বাকি টাকা চাইলে দোকানি বলেন, তাঁর সঙ্গে থাকা কনস্টেবল মিজান ও তাঁর সঙ্গীর চা–সিগারেটের খরচ রাখা হয়েছে। অজ্ঞাতনামা যে ব্যক্তি তাঁকে চিরকুট ধরিয়ে দিয়েছিলেন, তিনিই কনস্টেবল মিজানের সঙ্গে ছিলেন। আর এই কনস্টেবলই সার্বক্ষণিক তাঁদের পাহারা দিচ্ছিলেন।
এ বিষয়ে কক্সবাজার সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) জানিয়েছিলেন কি না, জানতে চাইলে বাদী বলেন, তিনি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিলেন এবং সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, পুলিশি হেফাজত থেকে বেরিয়ে সবকিছু বলবেন। তাঁর চাপেই স্ত্রী আদালতে মিথ্যা জবানবন্দি দিয়েছেন। সেখানে তিনি ভালো কাজে যুক্ত ছিলেন না বলে জানিয়েছেন। তবে জবানবন্দি দেওয়ার সময় তাঁর স্ত্রীর সামনে কোনো পুলিশ ছিল না। একজন পুলিশ সদস্যসহ তিনি বাইরে ছিলেন, স্ত্রী ভেতরে ছিলেন।
মামলা নিতে টাকা, চা–নাশতার খরচ নেওয়া, উড়ো চিঠি দেওয়া ব্যক্তির সঙ্গে পুলিশের সখ্য কেন—এসব বিষয় নিয়ে কক্সবাজার থানার ওসি শেখ মুনীরুল গিয়াস সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, এমন কোনো তথ্য তাঁর জানা নেই। এই দম্পতির দেখভালের দায়িত্ব একজন নারী কনস্টেবলের ওপর ছিল। তাঁরা বিভ্রান্তিকর তথ্য দিচ্ছেন।
৯৯৯–এ ফোনের কথা স্বীকার
স্ত্রী অপহরণের শিকার হওয়ার পর বাদী ৯৯৯–এ ফোন করলেও পুলিশের তরফ থেকে অস্বীকার করা হচ্ছিল। তবে আজ জাতীয় জরুরি সেবা হেল্পডেস্কের অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক মো. তবারকউল্লাহ সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ৮ ডিসেম্বর ভুক্তভোগী নারী ফোন করেছিলেন। আর ২২ ডিসেম্বর মামলার বাদী ফোন করেছিলেন। তিনি তিনটি ফোন ব্যবহার করেন। এর একটি থেকে ২২ ডিসেম্বর রাত ৮টা ৩২ মিনিটে একটি ফোন আসে। সেখানে তিনি জানান, তাঁর স্ত্রীকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ৯৯৯-এ ফোন ধরে তাঁকে থানায় গিয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি করতে বলা হয়েছিল।
এই পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, মামলার বাদী জানাননি যে তাঁর স্ত্রীকে কেউ অপহ’রণ করেছে। তা ছাড়া ৮ ডিসেম্বর ভুক্তভোগী নারী একবার ৯৯৯–এ ফোন করেন। তিনি ওই সময় তাঁর স্বামীর বিরুদ্ধে নির্যা’/তনের অভিযোগ করেছিলেন।
কক্সবাজারের জীবন ভালো লাগেনি ভুক্তভোগী নারীর
মামলার বাদীর সঙ্গে ভুক্তভোগী নারীর বিয়ে হয় বছর দুয়েক আগে। বাদী পেশায় রাজমিস্ত্রি। সে সময় তাঁরা ঢাকার কাছে একটি জেলায় থাকতেন। ভুক্তভোগী নারীর বয়স যখন দুই বছর, তখন তাঁর মা প্রয়াত হন। এর পর থেকে তিনি তাঁর বোনদের কাছে থাকতেন। বিয়ের পর পরিবার তাঁর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে। সে সময় তিনি জানতেন না, তাঁর স্বামীর আগে একজন স্ত্রী ও দুই সন্তান আছে।
৯৯৯–এ ফোন করে সাহায্য পাননি, মামলা করতে ‘দিতে হয়েছে টাকা’
মাস তিনেক আগে বাদী কক্সবাজারে ‘ভাগ্য ফেরাতে’ যান। প্রথম আলোকে মামলার বাদী একটি পরিচিতিমূলক কার্ড বের করে দেন। ওই কার্ডে তিনি নিজের নাম লিখেছেন মো. রবিন। নামের নিচে লেখা—ফেরাটন হোটেল, লাইট হাউস, কক্সবাজার।
বাদী জানান, আদতে ফেরাটন নামে কোনো হোটেল নেই। এই কার্ড দেখিয়ে তিনি পর্যটকদের বিভিন্ন হোটেলে থাকার ব্যবস্থা করতেন, এর বদলে হোটেলগুলো থেকে কিছু কমিশন পেতেন। স্ত্রী–সন্তানকে নিয়ে কিছুদিন পরপর নতুন নতুন হোটেলে গিয়ে উঠতেন। এমন একটি হোটেলে ঘটনার আগের দিন তাঁর অনুপস্থিতিতেংর্হিত কাজের মামলার ১ নম্বর আসামি আশিকুল ইসলাম (আশিক) ঢুকে পড়েন। এতে তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে আশিকুলের বাগ্বিতণ্ডা হয়। আশিকুল তাঁদের থেকে চাঁদা চান। এ সময় তাঁরা সন্তানের চিকিৎসাসংক্রান্ত কাগজপত্র দেখালে আশিকুল তাঁদের এক হাজার টাকাও দেন। পরদিন আশিকুল ও তাঁর বা’হিনী তাঁর স্ত্রীকে তুলে নিয়ে যায়।
এক প্রশ্নের জবাবে ভুক্তভোগী নারী সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, একেক দিন একেক হোটেলে থাকার বিষয়টি তাঁর ভালো লাগছিল না। স্বামীর এই পেশাও তাঁর পছন্দ হচ্ছিল না। স্বামী বলেছিলেন, যে কাজ তিনি করছেন, তা লাভজনক, টাকাপয়সা জমিয়ে তাঁরা ঢাকায় ফিরে যাবেন। স্বামী একপর্যায়ে কক্সবাজারে বাসা ভাড়া নেওয়ার কথা বলেন। কিন্তু তিনি তারপরও আর কক্সবাজারে থাকবেন না বলে জানিয়ে দেন।
ওই নারী আরো জানিয়েছেন, তাদের সন্তানের হার্টে একটি ছিদ্র ধরা পড়েছে। তার চিকিৎসার জন্য অনেক টাকা দরকার। কক্সবাজারে যাওয়ার পর তাদের সন্তানের রোগটি ধরা পড়ে। এরপর তারা ঢাকায় যান এবং জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে গিয়ে চিকিৎসকদের সাথে কথা বলে বিষয়টি জানান। চিকিৎসকরা তাদের সন্তানের জন্য ছয় মাসের ওষুধ লিখে দিয়ে একটি ব্যবস্থাপত্র দেন এবং খুব তাড়াতাড়ি অপারেশনের জন্য নির্দেশ দেন। এরপর আমরা পুনরায় কক্সবাজারে ফিরে আসি। প্রশ্ন করা হলে উত্তরে ওই নারী জানান, তিনি আগে একবার কক্সবাজার এসেছেন সেই সময় তার সাথে ছিলেন তার স্বামী এবং স্বামীর কয়েকজন বন্ধু ও তাদের স্ত্রী’রা। সেই সময় তাদের এইখানে এসে মামলায় পড়তে হয়। তিনি এবং তার স্বামীর বন্ধুদের স্ত্রী’দের বিরুদ্ধে এই মামলা করা হয়। কিন্তু পরের দিন জামিন নিয়ে তারা বের হতে সক্ষম হন।