Friday , September 20 2024
Breaking News
Home / Countrywide / ঔষধ প্রশাসনের মনিরুলের ঘুষ খাওয়ার অভিনব কৌশল, ঘুষ ছাড়া কোনো কাজ করেন না তিনি

ঔষধ প্রশাসনের মনিরুলের ঘুষ খাওয়ার অভিনব কৌশল, ঘুষ ছাড়া কোনো কাজ করেন না তিনি

ঘুষ নেওয়া ও দেওয়া দুইটাই সমান শাস্তিমূলক অপরাধ। বর্তমান সমাজে ঘুষ ছাড়া কাজ হয় না বললেই চলে। প্রত্যেকটি জায়গায় রয়েছে ঘুষের প্রকট উপস্থিতি। ঘুষের টাকা জোগার করতে গিয়ে অনেকে সম্মুখীন হন জীবন সংশয়ের মতো বড় ধরণের বিপদের। ঘুষ নিতে নিতে মানুষের লোভ হয়ে গেছে আকাশচুম্বী। সম্প্রতি জানা গেল ঘুষ ছাড়া কাজ করেন না এই ঔষধ প্রশাসনের মনিরুল ( Monirul ) নামের এই কর্মকর্তা।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরে ঘুষ ছাড়া কোনো ধরনের কাজ হয় না বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় ফার্মেসি মালিকরা।

ফার্মেসি মালিকদের অভিযোগ, লাইসেন্স নবায়ন, নতুন লাইসেন্স করা ও ফার্মেসি খোলার অনুমতিসহ সব কিছুতেই মোটা অংকের ঘুষ দাবি করেন ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের ব্রাহ্মণবাড়িয়া কার্যালয়ের উচ্চমান সহকারী মনিরুল হক। ঘুষের টাকা চাওয়া নিয়ে রবিবার (২৯ মে) দুপুরে স্থানীয় ওষুধ ব্যবসায়ীদের তোপের মুখে পড়েন মনিরুল। বিকালে ব্যবসায়ীরা অবিলম্বে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে মনিরুলের প্রত্যাহার দাবি করেন।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মনিরুল। ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের কর্মকর্তারা বলছেন, ব্যবসায়ীদের লিখিত অভিযোগ পেলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

স্থানীয় ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা মনিরুল হক ওষুধপত্র নবায়ন ও ড্রাগ লাইসেন্স নবায়ন করতে ঘুষ নেন। তার ঘুষ বাণিজ্যে অতিষ্ঠ ব্যবসায়ীরা।

ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ‌ফার্মেসির জন্য ড্রাগ লাইসেন্স করতে পৌরসভার ভেতরে ব্যাংক ড্রাফসহ ফি নির্ধারণ করা হয়েছে দুই হাজার ৮৭৫ টাকা। পৌরসভার বাইরে এক হাজার ৭২৫ টাকা। একইভাবে দুই বছরের জন্য ড্রাগ লাইসেন্স নবায়নের ক্ষেত্রে পৌরসভার ভেতরে এক হাজার ৮৭৫ টাকা এবং পৌরসভার বাইরে নির্ধারণ করা হয়েছে ৮২৫ টাকা। কিন্তু লাইসেন্স করতে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ৬০-৭০ হাজার টাকা নেন মনিরুল হক। একইভাবে লাইসেন্স নবায়ন করতে দুই থেকে তিন হাজার টাকা নেন।

নগরীর আজাদ ফার্মেসির মালিক শরিফুল ইসলাম বলেন, “আমার ফার্মেসির ১৯৮৬ সালের লাইসেন্স ছিল। গত বছর আমি লাইসেন্স নবায়নের জন্য আবেদন করেছিলাম। তখন মেডিসিন অধিদফতরের কর্মকর্তারা বলেন, আমার লাইসেন্সের কাগজপত্র সঠিক নয়। কিন্তু আমার কাছে আছে। ৩২ বছর ধরে এই লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসা করছেন।কিন্তু এখন কাগজে কলমে সমস্যার কথা বলছেন।তাই লাইসেন্স দিচ্ছেন না।আজ-কাল বলে ঘুরে বেড়াচ্ছেন পরে বলা হলো, ৫০ হাজার টাকা লাগবে।’

ঊষা ড্রাগ হাউসের মালিক সজল সরকার বলেন, “গত ১৫ বছরে কোনো সমস্যা হয়নি। কিন্তু মনিরুল আসার পর থেকে ফার্মেসির মালিকরা ওষুধ অধিদপ্তরের অফিসে যেতে ভয় পাচ্ছেন। টাকা নেন মনিরুল। কাগজপত্রে সমস্যা থাকায় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নানাভাবে। দেড় বছর পর আমাকে লাইসেন্স দেন। এ জন্য কয়েক ধাপে ঘুষ নিয়েছেন। আমরা মনিরুলকে প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি।’

নবীনগরের আরেক ফার্মেসি ব্যবসায়ী গোপাল সাহা বলেন, আমি দোকান বন্ধ করে লাইসেন্স নবায়ন করতে উপজেলা থেকে জেলা শহরে আসি। আসার পর মনিরুল হক বলেন, আজ স্যার নেই। আগামী কাল এসো. এভাবেই আমাদের হয়রানি করা হচ্ছে। কাগজপত্র ঠিক না থাকায় আমার কাছ থেকে ফি থেকে দুই হাজার টাকা নেন। ‘

রোববার দুপুরে মনিরুল হকের সামনে বসে জেলা কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কার্যালয়ের সহকারী পরিচালকের কাছে অভিযোগ করেন। আবু কাওসার। তিনি সহকারী পরিচালকের কাছে অভিযোগ করে বলেন, “এর আগে ওষুধ প্রশাসনের ক্ষেত্রে আমরা এত ঝামেলায় পড়িনি। মনিরুল আসার পর থেকে আমাদের ফার্মেসির মালিকরা অসহনীয় দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। মনিরুল অতিরিক্ত টাকা নিয়ে আমাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছেন। ঘুষ ছাড়া কিছুই করেন না। অবিলম্বে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন।’

জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক আবু কাউসার বলেন, “আমার ভাই লাইসেন্স নিতে এসেছেন। লাইসেন্স দিতে মনিরুল মোটা অঙ্কের টাকা নেন। পরিচয় জানার পর কিছু টাকা ফেরত দেন।’

তিনি বলেন, ‘পৌরসভার ভেতরে ব্যাংক ড্রাফসহ লাইসেন্স ফি নির্ধারণ করা হয়েছে দুই হাজার ৮৭৫ টাকা। পৌরসভার বাইরে এক হাজার ৭২৫ টাকা। কিন্তু আমার কাছে প্রমাণ আছে, ৬০-৭০ হাজার টাকা নিয়েছেন মনিরুল।’

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের সিনিয়র সহকারী মনিরুল হক বলেন, “মানুষ কিছু টাকা দিলে খুশি হয়। কিন্তু আমি জোর করে কারো কাছ থেকে টাকা নিই না।’

ওষুধ প্রশাসনের ব্রাহ্মণবাড়িয়া কার্যালয়ের ইনচার্জ সহকারী পরিচালক হোসেন মোহাম্মদ ইমরান বলেন, “এ বিষয়ে মনিরুল হককে একাধিকবার সতর্ক করা হয়েছে। এবারও লিখিত অভিযোগ পেলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

জেলা কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় ১২ হাজার ফার্মেসি রয়েছে। অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনের জন্য কুমিল্লা থেকে সপ্তাহে একবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া আসেন সহকারী পরিচালক হোসেন মোহাম্মদ ইমরান। এ সুযোগে লাইসেন্স নবায়ন করতে ফার্মেসি মালিকদের কাছ থেকে মোটা ঘুষ নেন মনিরুল।

উল্লেখ্য, মানুষের কোনো না কোনো স্বভাব থাকতেই পারে। কিন্তু খারাপ স্বভাব মানুষকে ঠেলে দেয় অনিশ্চিত বিপদের দিকে। ঘুষ নেওয়াও একটি জঘন্য খারাপ স্বভাব। এই খারাপ স্বভাবে কলুষিত হচ্ছে সম্পূর্ণ সমাজ। এর থেকে মানুষ বের হতে না পারলে আসন্ন ভবিষ্যতে সমাজে মানুষ নামের প্রাণীটিকে খুঁজে পাওয়া খুবই দুষ্কর হয়ে উঠবে।

About Shafique Hasan

Check Also

আ.লীগ ও তৃণমূল থেকে বিএনপিতে যোগদানের হিড়িক

নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগ ও তৃণমূল বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে বিএনপিতে যোগদানের প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফ্যাসিবাদী আওয়ামী …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *