ওসি প্রদীপ বাংলাদেশের আলোচিত এবং সমালোচিত একটি নাম। বিশেষ করে কক্সবাজারের মেরিন ড্রাইভে সেনা সদস্যকে নিহত করার ঘটনায় তিনি প্রথম আলোচনায় আসেন পুরো দেশের। আর সেই থেকেই তার নামে নানা ধরনের সব মামলা চলতে থাকে।এবার দুর্নীতির সেই মামলায় তাকে এবং তার স্ত্রীকে সাজা শুনিয়েছে আদালত।
অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদকের দায়ের করা মামলায় প্রদীপ কুমার দাসকে ২০ বছর ও তার স্ত্রী চুমকি প্রকাকে ২১ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তাদের সব সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিশেষ জজ মুন্সী আব্দুল মজিদ এ রায় ঘোষণা করেন। দুদকের আইনজীবী মাহমুদুল হক মাহমুদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, প্রদীপ কুমার দাস ও তার স্ত্রী চুমকি পারোর বিরুদ্ধে করা সব অভিযোগ আমরা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। মামলার রায়ে প্রদীপ কুমার দাসকে ২০ বছর ও চুমকি প্রসাদকে ২১ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি তাদের সব সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
গত ১৮ জুলাই চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিশেষ জজ মুন্সী আবদুল মজিদের আদালতে এ মামলায় দুদক ও আসামিদের যুক্তিতর্ক শেষ হয়। এরপর ২৭ জুলাই রায়ের দিন ধার্য করেন আদালত।
২০২০ সালের ২৩ আগস্ট মামলাটি দায়ের করেন দুদক কর্মকর্তা রিয়াজ উদ্দিন। পরে গত বছরের ২৬ জুলাই আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন তিনি। তাদের বিরুদ্ধে ৩ কোটি ৯৫ লাখ ৫ হাজার ৬৩৫ টাকার জ্ঞাত আয়ের বাইরে সম্পদ অর্জন, সম্পদের তথ্য গোপন ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ রয়েছে।
একই বছরের ১ সেপ্টেম্বর চার্জশিটের ওপর শুনানি হয়। গত ২০ সেপ্টেম্বর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রিয়াজ উদ্দিনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত মামলার জবানবন্দিতে উল্লেখিত সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দেন। এই মামলায় গত ১৫ ডিসেম্বর তাদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করা হয়।
এর আগে, জ্ঞাত আয়ের বাইরে সম্পদ অর্জনের অভিযোগে প্রদীপের বিরুদ্ধে ২০১৮ সালের জুন মাসে তদন্ত শুরু করে দুদক। প্রাথমিক অনুসন্ধানে প্রদীপ ও চুমকির নামে অস্বাভাবিক সম্পদের তথ্যও পেয়েছেন দুদক কর্মকর্তারা। এরপর তাদের সম্পদ বিবরণী দাখিল করতে বলা হলে একই বছরের মে মাসে তারা দুদকে বিবরণী জমা দেন।
দুদকের দায়ের করা অভিযোগে বলা হয়, নগরীর পাথরঘাটায় একটি ছয়তলা বাড়ি, পাঁচলাইশের একটি বাড়ি, ৪৫ ভরি স্বর্ণ, একটি প্রাইভেটকার, একটি মাইক্রোবাস, ব্যাংক হিসাব ও কক্সবাজারে একটি ফ্ল্যাট রয়েছে। চুমকি। তার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের বিপরীতে ৪ কোটি ৮০ লাখ ৬৪ হাজার ৬৫১ টাকার বৈধ ও গ্রহণযোগ্য আয় ২ কোটি ৪৪ লাখ ৬৬ হাজার ২৩৪ টাকা। এ মামলায় দুই কোটি ৩৫ লাখ ৯৮ হাজার ৪১৭ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের প্রমাণ পায় দুদক। এছাড়া চুমকি নিজেকে মাছ ব্যবসায়ী বলে দাবি করলেও এই ব্যবসার কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।
প্রসঙ্গত, মেজর সিনহা মামলায় ইতিমধ্যে ওসি প্রদীপকে শোনানো হয়েছে মৃত্যুদন্ডের সাজা। এরপরও তার নামে চলছিল দুদকের মামলা। আর সেই মামলার রায় অনুযায়ী তাকে এবার খাটতে হবে অনেক বছরের জেল।