Wednesday , November 20 2024
Breaking News
Home / Countrywide / ওসির ফোন: মামলা থেকে একেবারেই আউট করে দেবো লাগবে ৫০ হাজার

ওসির ফোন: মামলা থেকে একেবারেই আউট করে দেবো লাগবে ৫০ হাজার

আমি মামলা থেকে আপনার নাম সম্পূর্ণ মুছে ফেলব। এর জন্য ৫০ হাজার টাকা লাগবে। এখন আপনি কত দিতে পারবেন বলুন? আপনি যা দেবেন তা ১০ মিনিটের মধ্যে বিকাশে পাঠাতে হবে। সন্ধ্যার আগে থানায় এসে আমার সাথে দেখা করো।’ চট্টগ্রামের রাউজান থানার ওসি পরিচয়ে কদলপুর ইউনিয়নের সাবেক এক ইউপি সদস্যকে ফোন করে মামলা থেকে মুক্তি দিতে টাকা দাবি করেন।

টাকার দাবির দুটি ফোন রেকর্ড, একটি পাঁচ মিনিট ২০ সেকেন্ডের এবং অন্যটি এক মিনিট ২৭ সেকেন্ডের অডিও রেকর্ডিং বাংলা ট্রিবিউনের প্রতিবেদকের কাছে এসেছে।

গত ২৮ আগস্ট কদলপুর ইউনিয়নের পাঁচপাড়া গ্রামের মুরগির খামার থেকে শিবলী সাদিক হৃদয় (১৯) নামে এক কলেজছাত্রকে অপহরণ করা হয়। ঘটনার ১৩ দিন পর ১১ সেপ্টেম্বর সকালে কদলপুর ইউনিয়নের সীমান্তের রাঙ্গিনছড়া পাহাড় থেকে শিবলীর খণ্ডিত লাশ উদ্ধার করা হয়। ঘটনার সঙ্গে জড়িত অপহরণকারী উমংছিং মারমা (২৬) নামের একজনের আলামত অনুযায়ী তার লাশ উদ্ধার করা হয়

এদিকে শিবলী সাদিকের টুকরো টুকরো লাশ নিয়ে ফেরার পথে পুলিশের কাছ থেকে আসামি উমংছিং মারমাকে অপহরণ করে দুর্বৃত্তরা। পরে বিক্ষুব্ধ গ্রামবাসীরা তাকে পিটিয়ে হত্যা করে। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে দুটি মামলা করেছে। তাদের মধ্যে একজন পুলিশকে লাঞ্ছিত, গাড়ি ভাংচুর ও দায়িত্ব পালনে বাধা । অপরটি অভিযুক্তদের অপহরণ ও হত্যার অভিযোগ। অজ্ঞাতনামা গ্রামবাসীদের বিরুদ্ধে দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

মামলা দায়েরের পর গ্রেফতার আতঙ্কে গ্রামবাসীরা। গ্রেফতার এড়াতে গ্রাম হয়ে উঠেছে পুরুষহীন। এমন পরিস্থিতিতে আতঙ্কিত গ্রামবাসীর কাছ থেকে চাঁদা আদায়ের জন্য পুলিশের নামে ডাকাডাকি করে একটি চক্র।

এমনই একটি কল আসে কদলপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য নাছির উদ্দিনের মোবাইল নম্বরে। রাউজান থানার ওসি ফোনের অপর প্রান্ত থেকে তার পরিচয় দেন, ‘এখন থেকে দশ মিনিটের মধ্যে টাকা পাঠাতে হবে। এখন বল কত দিতে পারবে? ৫০ হাজার দেন। মামলা থেকে আপনার নাম সম্পূর্ণভাবে বাদ দিয়ে দিবো। টাকা না দিলে গোমারা খাবে। আমি তোমাকে সব বুঝিয়ে দিচ্ছি মিয়া, তারপরও তুমি এসব করছ। তুমি বেশি বোঝো। মামলা থেকে তোমার নাম বাদ পড়ার বিষয়ে কারো সাথে কোন কথা বলবে না, বুঝেছো। এখন কত দিতে হবে বলুন। সন্ধ্যার আগে থানায় আসেন এবং ব্যক্তিগতভাবে আমার সাথে দেখা করুন। এখন বিকাশ নম্বর ০১৮৭৬১৩৫৮৯ এ ১০ হাজার টাকা পাঠান।’

ইউপি সদস্য নাছির উদ্দিন বলেন, থানার ওসি ০১৭৯৪৭৩০৩৫০ নম্বর থেকে ফোন করে মামলা থেকে বাদ দেওয়ার জন্য টাকা দাবি করছেন। একই সঙ্গে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা হয়। টাকা না দিয়ে প্রকাশ্যে মারধরের মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দিচ্ছে।

এ বিষয়ে রাউজান থানার ওসি আবদুল্লাহ আল হারুন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, মব লিঞ্চিংয়ের ঘটনায় তদন্ত চলছে। কোনো গ্রামবাসীকে পুলিশ গ্রেপ্তার বা হয়রানি করছে না। গ্রামবাসীদের আতঙ্কিত না হওয়ার আশ্বাস দিয়েছি।

ওসি আরও বলেন, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আমাকে বলেছেন, কিছু লোক ফোন করে আমার নাম পরিবর্তন করে টাকা দাবি করছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

এদিকে কদলপুর ইউনিয়নের পাঁচপাড়া গ্রামের আব্দুস সালাম, আলী আকবরসহ একাধিক গ্রামবাসী জানান, থানার ওসি পরিচয়ে তাদেরও ফোন করে টাকা দাবি করা হয়। তারা সরাসরি এসে টাকা নিতে বলেন। পরে কেউ টাকা নিতে আসেনি।

শিবলী হত্যার সঙ্গে আটজন জড়িত বলে জানিয়েছে পুলিশ। গ্রেফতার করা হয়েছে ছয়জনকে। এর মধ্যে প্রধান উমংচিং মারমাকে পিটিয়ে হত্যা করে। বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) শিবলী সাদিক হত্যা মামলার দায় স্বীকার করে অ্যাং ফ্রাই সিং মারমা (৪৬) নামে এক আসামিকে গ্রেপ্তার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেওয়া হয়। ওই দিন সকালে নগরীর চান্দগাঁও থানাধীন সানোয়ারা আবাসিক এলাকায় এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। পরে চট্টগ্রামের সিনিয়র সহকারী ম্যাজিস্ট্রেট জোনায়েদ আহমেদ এ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। অং ফ্রাই সিং মারমা রাঙ্গামাটি জেলার কাউখালীর মধ্য পাড়া গ্রামের অং মারমার ছেলে।

পুলিশ জানায়, গ্রেফতারকৃত অং ফ্রাই সিং মারমা আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে বলেন, উমং চিং মারমা (হত্যাকাণ্ডে নিহত) পরিকল্পনায় তার সঙ্গে ৭-৮ জন মিলে শিবলীকে ২৮ আগস্ট মুরগির খামার থেকে অপহরণ করে। শিবলী ওই খামারে তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে কাজ করতেন। পরের দিন, তাকে পাহাড়ে নিয়ে গিয়ে তার দেহ টুকরো টুকরো করা হয়। তার আগে তার সঙ্গে পরিবারকে ফোন করুন। মুক্তিপণ দিতে রাজি হলে অং ফ্রাই সিং মারমা বান্দরবানে চলে যান। পরে শিবলীর বাবা বান্দরবানে গিয়ে মুক্তিপণ হিসেবে দুই লাখ টাকা তুলে দেন।

ওসি জানান, গ্রেফতারকৃত আসামিদের মধ্যে আরও দুজন আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। তারা হলেন রাঙামাটি জেলার কাপ্তাই উপজেলার বড়ইছড়ি এলাকার সুইচিংমং মারমা (২৪) ও একই এলাকার আংথিমং মারমা (২৫)। তারা হত্যার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দিও দিয়েছে।

তারা জানান, খামারের তত্ত্বাবধায়ক শিবলীর সঙ্গে অন্য কর্মচারীদের কথা কাটাকাটি হয়। এরপর থেকে খামারে কর্মরত আদিবাসী যুবকরা তার ওপর ক্ষিপ্ত হয়।

About Nasimul Islam

Check Also

হাসনাতের পর এবার শিবির সেক্রেটারির কড়া বার্তা

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি জেনারেল জাহিদুল ইসলাম মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একটি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *