প্রতিনিয়ত ঢাকায় অবস্থিত যেসকল নদনদী রয়েছে সবই বর্জ্য আবর্জনা পড়ে দূষিত হচ্ছে। শুধু যে ময়লা আবর্জনা দূষণ হচ্ছে এমনটাও নয় ঢাকায় অবস্থিত যে সকল কল কারখানা রয়েছে সে সকল কল-কারখানার যত খারাপ বর্জ্য সেগুলো দিতে গিয়ে মেশে এবং নদীকে দূষিত করে। যার জন্য ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা এমডি ও উত্তর সিটি কর্পোরেশন মেয়র কে দায়ী করছেন নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মনজুর আহমেদ চৌধুরী।
যার জন্য, নদী দূষণের দায়ে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়রকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠাতে চান তিনি। তিনি বলেন, আমরা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র ওয়াসার এমডির বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত দাঁড় করাবো, তাদের ছয় মাসের কারাদণ্ড ও চার লাখ টাকা জরিমানা চাই। রোববার (২৫ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে বিশ্ব নদী দিবস উপলক্ষে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন আয়োজিত আলোচনা সভায় ঢাকার চারপাশের নদীগুলোর দূষণের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি এসব কথা বলেন।
অধ্যাপক মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, ঢাকা শহরের মানুষ প্রতিদিন ৫০ লাখ কেজি মল ও ১৫০ কোটি লিটার প্রস্রাব তৈরি করে। তাদের চিকিৎসার দায়িত্ব ছিল ঢাকা ওয়াসার, কিন্তু তারা সিটি করপোরেশনের ড্রেনের মাধ্যমে নদী-নালায় গিয়ে শেষ হয়েছে। পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থাপনায় ঢাকা ওয়াসার এই ব্যর্থতার কারণে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খানের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে চান তিনি।
অন্যদিকে, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আওতাধীন এলাকায় খাল পরিদর্শনের উদাহরণ তুলে ধরে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, খালের মুখে নেট দিতে বলা হয়েছিল যাতে খালের আবর্জনা পড়ে। নদীতে পড়ে না। উত্তর সিটি করপোরেশন এখনো তা করেনি।
এ জন্য ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলামের বিরুদ্ধেও একই ধরনের শাস্তির কথা বলেন তিনি। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র ওয়াসের এমডির বিরুদ্ধে আমরা ভ্রাম্যমাণ আদালতের মুখোমুখি হব এবং তাদের ছয় মাসের কারাদণ্ড ও চার লাখ টাকা জরিমানা করতে বলব। তিনি আরও বলেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতাধীন এলাকার খালগুলোর অবস্থা এখন ভালো নয়।
তবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান তাপসের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করেননি। বরং তিনি দক্ষিণের মেয়রকে ধন্যবাদ জানান। মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, খালের দূষিত পানি যাতে নদীতে না পড়ে সেজন্য দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র খালের মুখে বর্জ্য শোধনাগার নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছেন।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। বিশ্ব নদী দিবস উপলক্ষে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন আলোচনা সভার আয়োজন করে। বৈঠকে নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, নদী ও পরিবেশ নিয়ে কিছু রাজনীতি আছে। নদী ও পরিবেশ নিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা চলছে।
ঢাকার আশপাশের নদী-নালা রক্ষায় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় যথাযথ প্রচেষ্টা চালিয়েছে উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ঢাকার চারপাশের নদী-নালাগুলোর ৯০ শতাংশের বেশি অবৈধ দখলমুক্ত করা হয়েছে। বিআইডব্লিউটিএ কাজটি ভালোভাবে করেছে। ঢাকার চারপাশের নদীগুলোকে ঘিরে যে চ্যালেঞ্জ তা কাটিয়ে উঠতে হবে।
সভায় অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত, জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি গুয়েন লুইস প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। আলোচনা সঞ্চালনা করেন সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান।
দেশের নদ-নদী দূষণের কারণে অনেক পানিবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়ছে। তাই নদীগুলো রক্ষা করার জন্য বাংলাদেশের সকল মানুষকেই দায়িত্বশীল হতে হবে বলে জানিয়েছেন মঞ্জুর। তিনি আরো জানান, বিভিন্ন কলকারখানার বর্জ্য পানি নিষ্কাশনের জন্য অনেকেই নদ-নদীকে বেছে নেন যার জন্য এসকল নদীর পানি দূষিত হচ্ছে, যেটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ । তাই আমাদের সবারই এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।