কিছু ক্ষমতাসীন লোকেদের কারণে জীবন জরজীরন হয়ে যায় সাধারণ মানুষের। সমাজে কিছু এমন ক্ষমতাসীন ব্যক্তি রয়েছে যারা তাদের ক্ষমতা দেখানোর জন্য সাধারণ মানুষের প্রতি অন্যায় আচরণ করে থাকে। এমন এক ব্যাক্তির অনৈতিক কার্যকালাপের শিকার হয়েছেন এক যুবক।
কাঁদতে কাঁদতে ঘটনার বিবরণে তিনি বলেন, সেদিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডিউটি শেষে রুমে আসি। খাওয়া-দাওয়া করে বিশ্রাম নেই। সন্ধ্যা ৭টায় কলেজের পড়ার ঘরে গেলাম। সেখানে রাত ৯টা পর্যন্ত বই পড়ি। সারাদিনের ক্লান্তি কাটাতে মনে হলো একটু বাইরে যাই। হাসপাতালের বাইরের গেট থেকে বের হয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের বেদির পাশে বসুন। কিছুক্ষণ পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগো সম্বলিত টি-শার্ট পরা দু-তিনজন ছাত্র এসে জিজ্ঞেস করল কী করছি? তাদের মেডিকেল স্টুডেন্ট হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিন। এরপর নানা প্রশ্নে জর্জরিত তারা। পরিচয়পত্র দেখাতে বলে।
তাদের আইডি কার্ডটি ব্যাগে করে পড়ার ঘরে রেখে যেতে বলুন। তখন তাদের একজন চিৎকার করে বললেন, আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি; তোমার কাছে আমার আইডি কার্ড নেই কেন? আমি বলি আইডি কার্ড কি সব সময় ঘুরতে থাকে? এ কথা বলার পর আমাকে কিল-ঘুষি দিতে দুই সেকেন্ড সময় দেওয়া হয়নি। সঙ্গে সঙ্গে আরও সাত-আটজন লোক এসে লাথি-থাপ্পড় মারতে থাকে। নাকে-মুখে লাথি মেরে আমার নাক দিয়ে রক্ত পড়তে শুরু করে। এরপর তারা আমাকে মারধর করে রিকশায় তুলে দেয়। সেদিনের ভয়াবহ ঘটনার কারণে আমি এখনো ঠিকমতো ঘুমাতে পারি না। সবসময় ভয়ে। ঢাকা মেডিকেলের শিক্ষানবিশ চিকিৎসক একেএম সাজ্জাদ হোসেন গত সোমবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে মারধরের ঘটনার বর্ণনা দিচ্ছিলেন।
তিনি মঙ্গলবার রাতে শাহবাগ থানায় এবং বুধবার সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হকের কাছে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযুক্তদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার আশ্বাস দিয়েছে। ভুক্তভোগী ওই চিকিৎসককে জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখবে। এদিকে, হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক কাউন্সিল দোষীদের চিহ্নিত করতে ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়েছে। ৪৮ ঘণ্টা পার হলেও প্রশাসন দোষীদের চিহ্নিত করতে না পারায় বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা থেকে ধর্মঘটের ঘোষণা দেয় সংগঠনটি। এটি এখনও চলছে। সংগঠনের সভাপতি ডা. মহিউদ্দিন জিলানী বলেন, ঘটনার ৪৮ ঘণ্টা পর আরও কিছু সময় দিয়েছি। কিন্তু প্রশাসন এখনো কাউকে শনাক্ত করতে পারেনি।
এ কারণে আমরা বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা থেকে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের ঘোষণা দিয়েছি। দোষীদের চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা না নেওয়া পর্যন্ত আমাদের ধর্মঘট চলবে। ভুক্তভোগী চিকিৎসক সাজ্জাদ হোসেন মানবজমিনকে বলেন, আমাকে মারধর করে ফুটপাতে নিয়ে যাওয়া হয়। একের পর এক খুন চালিয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ কে যেন আমার কানের নিচে জোরে থাপ্পড় মারলো। তারপর আমি অবিলম্বে মাথা ঘোরা অনুভব. তখন আরেকজন আমার কাছে এসে বললো তুমি এখনো বসে আছো কেন? এই বলে সে জুতা দিয়ে আমার কপালে ও মুখে লাথি মারল। লাথি দিয়ে যা পনেরো-বিশের মতো মারতে পেরেছিল, ঘুষি মেরেছিল। মৃত্যুর সময় আমি বুঝতে পারিনি যে আমার চোখে কিছু হয়েছে। লাথি মারার পর আমার নাক দিয়ে র/ক্ত পড়তে শুরু করে। আমি আমার ডান কানে কম শুনতে পাচ্ছি। এরপর তারা আমাকে মারধর করে রিকশায় তুলে দেয়। তিনি রিকশাচালককে ধমক দিয়ে বললেন, আমি যেখানে বলেছি সেখানে নিয়ে যেতে। তারপর বকশীবাজার সিগন্যালে এসে আমার রুমমেটকে ডাকলাম। ওকে বল আমার অবস্থা খারাপ আমাকে নিতে। তারপর তারা আমাকে রুমে নিয়ে আসে। সেখানে এসে দেখি আমার নাক দিয়ে র/ক্ত পড়ছে। তখন আমাকে মেডিকেলের জরুরি বিভাগে নিয়ে যাওয়া হয়।
ডাক্তার তখন আমাকে ইএনটি রেফার করেন। সেখানে গিয়ে কান-কান পরীক্ষা করিয়েছি। দুই নাকের মাঝখানে ফেটে র/ক্তপাত হয়। কানে র/ক্ত জমাট বাঁধা। পরদিন সকালে আমার চোখ দিয়ে র/ক্ত ঝরতে থাকে। চোখের নিচে অন্ধকার। বহির্বিভাগে যাওয়ার পর চিকিৎসক জানান, চোখ দিয়ে র/ক্ত পড়ছে। আর চোখের নিচে র/ক্ত জমাট বাঁধে। এরপর আবার নাক, কান ও গলা বিভাগে যাই এবং সেখানকার চিকিৎসক জানালেন কানে ছিদ্র রয়েছে। এখন আমার চোখ খুব ব্যাথা করছে। ঘুমের সমস্যা হচ্ছে। আমি এখনও আমার ডান কানে কম শুনতে পাচ্ছি। তিনি বলেন, সেদিন আমার সঙ্গে ঘটে যাওয়া ভয়ঙ্কর ঘটনার কারণে আমি ঠিকমতো ঘুমাতে পারছি না। ঘুমের মধ্যেও মার খাওয়ার স্বপ্ন দেখি। সবসময় ভয়ে। আমি ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফজলে রাব্বি হলের ১৭ নম্বর কক্ষে থাকি। K-73 ব্যাচের শিক্ষার্থীরা। গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায়। বাবা ও মা দুজনেই শিক্ষক।
দুই ভাইবোনের মধ্যে আমি বড়। এ ঘটনায় আমাদের পরিচালক স্যারের কাছে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। তিনি ঢাবি ভিসি স্যারের সঙ্গে কথা বলেছেন। ভিসি স্যারও আমাদের ডাকলেন। আমরা সরাসরি ভিসি স্যারের সাথে কথা বলে লিখিত অভিযোগ দেই। তারা সবাই আমাদের আশ্বস্ত করেছেন। হামলাকারীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগো সম্বলিত টি-শার্ট পরা ছিল এবং নিজেদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বলে পরিচয় দেয়। আমি তাদের কাউকে চিনতে পারিনি। এটা শুধু আমার সাথে ঘটেছে এমন নয়। লজ্জায় কেউ এ কথা বলতে পারে না। আমি এটা আবার ঘটতে চাই না. ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক জানান, অপরাধীদের গ্রেপ্তার না হওয়ায় বৃহস্পতিবার থেকে কর্মবিরতি ঘোষণা করেছেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় অপরাধীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর একেএম গোলাম রব্বানী বলেন, তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন।
এ ঘটনায় এখনো কারো বিরুদ্ধে মামলা করা হয়নি। সাধারণ ডায়েরি বিবরণী অনুযায়ী ঘটনার তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছেন পুলিশ। অপরাধীদের অপরাধ প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানান তারা।