ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রচার-প্রচারণা নিয়ে রীতিমতো বেশ ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে প্রার্থীরা। এমনকি নির্বাচনে জনপ্রিয়তা পেতে আগাম দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতিও। আর এরই ধারাবাহিকতায় কর্মীদের উদ্দেশ্যে বিশেষ প্রতিশ্রুতি দিয়ে রীতিমতো আলোচনায় এসেছেন এক চেয়ারম্যান। এমনকি এ ঘটনায় তাকে নিয়ে হচ্ছে নানা ট্রলও।
তার এমন প্রতিশ্রুতি যেন নির্বাচনী ইন্সুরেন্স। কেউ মারা গেলে বা আহত হলে তাদের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে এ ইন্সুরেন্স। তবে এ ইন্সুরেন্স এলাকার আইন শৃঙ্খলা অবনতির কারণ হতে পারে বলে মনে করছে সচেতনরা।
বর্তমান ইউপি নির্বচনকে কেন্দ্র করে এক চেয়ারম্যান প্রর্থী তার কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমার নির্বাচন করতে গিয়ে যদি কোনো কর্মী মারা যায়, তবে তার পরিবারকে ১০ লাখ টাকা দেয়া হবে। আর যদি মারামারি-বাইরাবাইরি করে হাসপাতালে ভর্তি থাকেন, তাহলে আমি তার সম্পূর্ণ খরচ বহন করব। এমনকি তার সংসারের খরচও আমি চালাব। আমি মাইট্টা ডোরা সাপ। চুপ করে শুয়ে থাকি, আর যখন কামড় মারি, তখন মাংসসহ ছিঁড়ে ফেলি।’
চতুর্থ ধাপের ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গত ২৫ ও ২৬ আক্টোবর নিজ বাড়িতে কর্মী সভায় এমন বক্তব্য দেন মুন্সীগঞ্জের সিরাজ দিখান উপজেলার বাসাইল ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী ও বর্তমান চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম যুবরাজ। সম্প্রতি তার এই বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
ইউপি নির্বাচনকে সামনে রেখে ইউপি চেয়ারম্যান এমন বক্তব্যে নির্বাচনী সহিংসতার ইঙ্গিত বহন করছে বলে দাবি স্থানীয়দের।
উপজেলায় আগামী ২৩ ডিসেম্বর ১৪টি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চতুর্থ ধাপের নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর। মনোনয়নপত্র বাছাই ২৯ নভেম্বর ও প্রত্যাহারের শেষ সময় ৬ ডিসেম্বর। প্রতীক বরাদ্দ ৭ ডিসেম্বর।
এ বিষয়ে সাইফুল ইসলাম যুবরাজ মোবাইল ফোনে বলেন, ১৯৮৬ সালে নির্বাচনে একটি কেন্দ্রে সহিংসতায় তিনজন লোক মারা গিয়েছিল। নিহতদের পরিবারকে কেউ সহযোগিতা করেনি। এতে করে তারা নিঃস্ব হয়ে গেছে। এই কথার উদাহরণ দিয়ে আমি বলেছি যে, নির্বাচনে আসতে আপনারা ভয় করবেন না। আল্লাহ এমন দিন না আনুক যে কেউ মারা গেলে সহযোগিতা পাবেন না। আমার নির্বাচন করতে গিয়ে যদি কেউ মারা যান তবে আমি তার পরিবারকে ১০ লাখ টাকা দেব।
১৯৯৬ সালে তিনজন মারা গেছে। কেউ পরিবারকে সহযোগিতা করে নাই। এতে করে তারা ফকির হয়ে গেছে। এজন্যই আমি এই কথা বলেছি। এতে কি হয়েছে।
বাসাইল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী নজরুল ইসলাম টিটু বলেন, সাইফুল ইসলাম যুবরাজ যে বক্তব্য দিয়েছে ফেসবুকে এটা ভাইরাল হলে অন্যান্য মানুষের মত আমারও নজরে আসে। তিনি যে বক্তব্য দিয়েছেন তা উস্কানিমূলক, এবং এটা সহিংসতার পূর্বাভাস বলে মনে করি। তিনি নৌকা প্রতীক নিয়ে গতবার চেয়ারম্যান নির্বাচন করেছেন। এবারও তিনি মনোনয়ন চেয়েছেন আমিও চেয়েছি। কিন্তু ভয়ভীতি দেখানোর জন্য এ রকম বক্তব্য মোটেও কাম্য নয়। এতে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়।
এরই মধ্যে চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম যুবরাজের এমন বক্তব্যকে কেন্দ্র করে এলাকায় বেশ শোরগোল লক্ষ্য করা যাচ্ছে। অনেকেই মনে করছেন, তার এমন বক্তব্য এলাকায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে।
তবে এ বিষয়ে সিরাজদিখান থানার ওসি মোহাম্মদ বোরহান উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সংবাদ মাধ্যমকে জানান, কোনো সহিংস ঘটনা ঘটানোর চেষ্টা তার বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।