দক্ষিণ-বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স (এসবিএসি) ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান এস এম আমজাদ হোসেনের নামে বিদেশে থাকা সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে চিঠি দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) সম্প্রতি সংশ্লিষ্ট দেশগুলোকে চিঠি পাঠিয়ে দুর্নীতি প্রতিরোধে কাজ করা রাষ্ট্রীয় এই সংস্থাটি।
আমজাদ হোসেনের বিরুদ্ধে ব্যাংক কর্মচারীদের নাম জাল করে ৩০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। এ অভিযোগে ২০২১ সালে দুদক তার বিরুদ্ধে দুটি মামলা করে। এসব মামলায় সম্প্রতি চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে।
আমজাদ হোসেন ঋণ জালিয়াতিসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে আমেরিকা, কানাডা, দুবাই ও ভারতে বেশ কিছু বাড়িঘর ও বিপুল সম্পদ গড়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ভারতের কলকাতায় তিনি একটি শিল্প প্রতিষ্ঠান নিয়ে কয়েকশ বিঘা জমিতে চিংড়ি চাষ করেন। সেই চিংড়ি আমেরিকায় রপ্তানি করে তিনি আয় করেন।
দুদক জানায়, আমজাদ হোসেন অবৈধভাবে অর্জিত বিপুল পরিমাণ সম্পদ উল্লেখিত দেশে পাচার করেছেন। তিনি এসব অবৈধ উপার্জন নিজের নামে এবং তার স্ত্রী সুফিয়া আমজাদ ও কন্যা (দত্তক) তাজরির নামে পাচার করেন। তাদের নামেও রয়েছে বিভিন্ন কোম্পানি। এসব কোম্পানির নামে বিদেশে বেশ কিছু বাড়ি, জমি, ব্যাংক হিসাব, কোম্পানির হিসাব রয়েছে।
দুদকের দেওয়া এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এস এম আমজাদ হোসেন সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার ব্যাংকের চেয়ারম্যান থাকাকালে অধীনস্থদের নামে জালিয়াতির মাধ্যমে ২২ কোটি টাকা ঋণ পান। বাণিজ্যিক আইন অনুযায়ী ব্যাংকের কোনো শাখা অফিস SOD বা সুরক্ষিত ওভারড্রাফ্ট সুবিধা নেই। SOD হল একটি ঋণ যা সঞ্চয়পত্র বা ব্যাঙ্ক আমানতের মাধ্যমে দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি চেয়ারম্যান থাকাকালে শাখা ব্যবস্থাপক ও দ্বিতীয় কর্মকর্তার মাধ্যমে ঋণ মঞ্জুর করা হয়, যা ফৌজদারি।
এ ছাড়া ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান এসএম আমজাদ হোসেন একটি ভুয়া প্রতিষ্ঠানের নামে জাল দলিল দিয়ে আরও আট কোটি টাকা ঋণ মঞ্জুর করে ওই টাকা আত্মসাৎ করেন। এসব অভিযোগে ব্যাংকের আরও ৯ কর্মকর্তাসহ মোট ১০ জনের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করে দুদক। এদিকে এসব মামলায় আদালতে চার্জশিট দাখিল করেছেন দুদকের উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার।
অবৈধ সম্পদ অর্জন ও পাচারের অভিযোগে এসএম আমজাদ হোসেন, তার স্ত্রী সুফিয়া আমজাদ, মেয়ে তাজরী ও তাদের কোম্পানি লকপুর গ্রুপের নামে দেশের সাতটি ব্যাংকের এক হাজারের বেশি অ্যাকাউন্ট জব্দ করা হয়েছে।
রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক, বেসরকারি খাতের ডাচ-বাংলা, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল, প্রিমিয়ার, দি সিটি, স্ট্যান্ডার্ড ও সাউথইস্ট ব্যাংকে এসব অ্যাকাউন্ট ছিল। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসব ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছেন বলে নিশ্চিত হয়েছে ঢাকা টাইমস।
এসব ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে এস এম আমজাদ আমেরিকা, কানাডা, দুবাই ও ভারতসহ বিভিন্ন দেশে অর্থ পাচার করে সম্পদ গড়েছেন।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য সাউথইস্ট ব্যাংক ও সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে ফোন করা হয়। কিন্তু তাদের কেউই ফোন ধরেননি। তবে সাউথইস্ট ব্যাংকের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর মাসুম উদ্দিন খান ঢাকাটাইমসকে বলেন, আমি কখনোই এ বিষয়ে ডিল করিনি, তাই এখন বলতেও পারছি না।
ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হিসেবে ব্যাংক হিসাব জব্দের তথ্য পেয়েছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, অফিসে প্রতিদিন কত চিঠি আসে। এত চিঠিতে কারো নাম বিশেষভাবে মনে নেই। এখন এসব কথা মনেও নেই।
একই বিষয়ে ডাচ-বাংলা ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক ও স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে ফোন করা হলেও সে রিসিভ করেননি।