এই বছর অর্থাৎ ২০২১ সালের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) এবং উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) পরীক্ষা সামনে কিছুদিন পরেই অনুষ্ঠিত হবে। এই দুই পরীক্ষার সময়সূচী আগেই প্রকাশিত হয়েছে। এসএসসি পরীক্ষা আরম্ভ হবে আগামি মাসের ১৪ তারিখ অর্থাৎ ১৪ নভেম্বর এবং এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হবে ২ ডিসেম্বর। এবার ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বোর্ড জানিয়ে দিয়েছে কীভাবে বন্টিত হবে এসএসসি ও এইচএসসির নম্বর। শিক্ষা বোর্ড কতগুলো বিষয়ে কত নম্বরের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে, পরীক্ষায় রচনামূলক ও নৈর্ব্যক্তিক অংশে কত নম্বর করে মান বন্টিত হবে এবং কিভাবে নম্বরগুলো বন্টিত করা হবে সেটা প্রকাশ করেছে পরীক্ষার্থীদের জ্ঞাতার্থে।
বিশ্বজুড়ে চলমান পরিস্থিতির কারণে, এবারের এসএসসি-এইচএসসি এবং সমমানের পরীক্ষা সব বিষয়ে নেওয়া হবে না। শুধুমাত্র তিনটি গ্রুপভিত্তিক নৈর্বাচনিক বিষয়ে নেওয়া হবে। তিন ঘণ্টা পরীক্ষা হওয়ার জায়গায় হবে দেড় ঘণ্টার মধ্যে।
গত ১৫ জুলাই এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার বিষয়ে বলেন, এসএসসি এবং এইচএসসির প্রতিটি বিষয়ে মোট পরীক্ষার সংখ্যাও কমবে। একই সঙ্গে, শিক্ষার্থীরা প্রশ্নপত্র থেকে উত্তর দেওয়ার জন্য প্রশ্ন বেছে নেওয়ার বেশি সুযোগ পাবে।
প্রশ্নের ধরন ও পরীক্ষার সময় নিয়ে দীপু মনি বলেন, অর্ধেক সময়ে পরীক্ষা নেওয়া হবে, অর্থাৎ তিন ঘণ্টার পরীক্ষা হবে দেড় ঘণ্টায়। আর প্রশ্নপত্র এখন যেভাবে বহুনির্বাচনী ও রচনামূলক হয়, সেভাবেই হবে। তবে এ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা প্রশ্ন বাছাই করার বেশি সুযোগ পাবে। যেমন: আগে যেখানে ১০টি প্রশ্ন থেকে ৮টির উত্তর দিতে হতো, সেখানে এখন হয়তো সেই ১০টি প্রশ্নই থাকবে। তবে তার মধ্যে ৩ বা ৪টির উত্তর দিতে বলা হতে পারে। অর্থাৎ শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন বেছে নেওয়ার সুযোগ বেশি থাকবে।
কত নম্বরে পরীক্ষা
এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার নম্বর বিভাজন প্রকাশ করেছে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড। এসএসসি ও এইচএসসির বিজ্ঞান বিভাগের পরীক্ষার্থীরা প্রতি বিষয়ে ৩২ নম্বরের পরীক্ষায় অংশ নেবে। এর মধ্যে রচনামূলক ২০ নম্বর ও এমসিকিউতে (নৈর্ব্যক্তিকে) থাকবে ১২ নম্বর। মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের বিষয়গুলোয় শিক্ষার্থীরা ৪৫ নম্বরের পরীক্ষা দেবে। এর মধ্যে ৩০ নম্বর রচনামূলক ও ১৫ নম্বরের নৈর্ব্যক্তিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। রচনামূলক ও নৈর্ব্যক্তিকের নম্বরকে ১০০ নম্বরে রূপান্তর করে প্রাপ্ত নম্বর নির্ধারণ করা হবে।
এসএসসির বিজ্ঞানে নম্বর বিভাজন
ঢাকা বোর্ড প্রকাশিত এসএসসি পরীক্ষার নম্বর বিভাজনে বলা হয়েছে, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, উচ্চতর গণিত ও জীববিজ্ঞান বিষয়ে পরীক্ষার রচনামূলক অংশে শিক্ষার্থীদের ৩২ নম্বরের পরীক্ষা দিতে হবে। এর মধ্যে রচনামূলক ২০ আর নৈর্ব্যক্তিক অংশে ১২ নম্বরের পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে পরীক্ষার্থীদের।
বিজ্ঞান বিভাগের রচনামূলক অংশে ৮টি প্রশ্ন থাকলেও যেকোনো ২টির উত্তর দিতে হবে শিক্ষার্থীদের। ১০ করে ২০ নম্বর। নৈর্ব্যক্তিক অংশে ২৫টি প্রশ্নের মধ্যে ১২টির উত্তর দিতে হবে। এখানে নম্বর ১২। মোট ৩২ নম্বরের পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে এসএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের।
শিক্ষা বোর্ড বলছে, বিজ্ঞানে শিক্ষার্থীদের ২০ নম্বরকে ৫০ ও নৈর্ব্যক্তিকের ১২ নম্বরকে ২৫ নম্বরে রূপান্তর করে মোট প্রাপ্ত নম্বর নির্ধারণ করা হবে।
এসএসসির মানবিক ও ব্যবসায় নম্বর বিভাজন
এসএসসির মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের শিক্ষার্থীদের ৪৫ নম্বরের পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে। রচনামূলকে ৩০ নম্বর ও নৈর্ব্যক্তিকে ১৫ নম্বরের পরীক্ষা হবে। এর মধ্যে রচনামূলক অংশে ১১টি প্রশ্ন থাকলেও উত্তর দিতে হবে যেকোনো ৩টির। প্রতিটির মান ১০। নৈর্ব্যক্তিকে ৩০টি প্রশ্ন থাকলেও উত্তর দিতে হবে ১৫টির। প্রতিটি প্রশ্নের জন্য ১ নম্বর করে মোট ১৫।
মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের শিক্ষার্থীদের ৩০ নম্বরকে ৭০ ও নৈর্ব্যক্তিকের ১৫ নম্বরকে ৩০ নম্বরে রূপান্তর করে শিক্ষার্থীদের মোট নম্বর নির্ধারণ করবে বোর্ড।
প্রতিটি বিষয়ের পরীক্ষা ১ ঘণ্টা ৩০ মিনিটে হবে। রচনামূলক ১ ঘণ্টা ১৫ মিনিট ও নৈর্ব্যক্তিকে সময় ১৫ মিনিট।
এইচএসসির বিজ্ঞানের নম্বর বিভাজন
এইচএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগের পরীক্ষা হবে ৩২ নম্বরে। রচনামূলকে ২০ ও নৈর্ব্যক্তিকে ১২ নম্বর। রচনামূলক অংশে প্রতিটি পত্রে ৮টি প্রশ্নের মধ্যে উত্তর দিতে হবে ২টির। এ ক্ষেত্রে প্রতিটির মান ১০ নম্বর। নৈর্ব্যক্তিক অংশে ২৫টি প্রশ্ন থাকবে। উত্তর দিতে হবে ১২টির। প্রতিটির মান ১ নম্বর। বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার ২০ নম্বরকে ৫০ ও নৈর্ব্যক্তিকের ১২ নম্বরকে ২৫ নম্বরে রূপান্তর করে শিক্ষার্থীদের মোট প্রাপ্ত নম্বর নির্ধারণ করা হবে। বাকি ২৫ নম্বর ব্যবহারিক হবে।
এইচএসসির মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষার শিক্ষার্থীদের প্রতিটি বিষয়ে পরীক্ষা হবে ৪৫ নম্বরে। এর মধ্যে রচনামূলকে থাকবে ৩০ আর নৈর্ব্যক্তিকে ১৫ নম্বর। রচনামূলক অংশে ১১টি প্রশ্নের মধ্যে উত্তর দিতে হবে ৩টির। প্রতিটির নম্বর ১০। আর নৈর্ব্যক্তিকে ৩০টি প্রশ্নের মধ্যে উত্তর দিতে হবে ১৫টির। প্রতিটির মান ১ নম্বর।
পরীক্ষার্থীদের ৩০ নম্বরকে ৭০ নম্বরে ও নৈর্ব্যক্তিকের ১৫ নম্বরকে ৩০ নম্বরে রূপান্তর করে মোট প্রাপ্ত নম্বর নির্ধারণ করা হবে।
এদিকে, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এই বছর জেএসসি এবং জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষা নেওয়ার ব্যাপারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিল এবং নভেম্বরে পরীক্ষা নেওয়ার পরিকল্পনা করছিল। কিন্তু, পরীক্ষা আয়োজনের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে বিলম্বের কারণে মন্ত্রণালয় পিছিয়ে পড়েছে। মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছিলেন, মন্ত্রণালয় শিক্ষা বোর্ডগুলোকে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার অগ্রাধিকার দিতে বলেছে। যদি জেএসসি এবং জেডিসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত না হয়, তাহলে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পরবর্তী ক্লাসে উন্নীত হওয়ার জন্য সংক্ষিপ্ত পাঠ্যসূচিতে বার্ষিক পরীক্ষা দিতে হবে। অন্যান্য শ্রেণীর শিক্ষার্থীদেরও একইভাবে উন্নীত করা হবে। শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, এ বছরের জেডিসি এবং সমমানের পরীক্ষা আর হবে না।