ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলের পদ থেকে অব্যাহতি পাওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে এমরান আহমেদ ভূঁইয়া সপরিবারে ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসে অবস্থান নে/ন। মার্কিন দূতাবাসের সামনে যেখানে জনসাধারনের চলাচল নিয়ন্ত্রিত থাকে, সেখানে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে কীভাবে সপরিবারে ঢুকলেন এমরান? তাহলে কি নাটকের প্লট আগে থেকেই সাজানো ছিল?
নাটকের প্লট আগে থেকেই সাজানো ছিল। শুক্রবার (৮ সেপ্টেম্বর) ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলের পদ থেকে এমরানের বরখাস্তের প্রজ্ঞাপন জারি হওয়ার পরপরই নাটকটির মঞ্চায়ন শুরু হয়। শুক্রবার সকালে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, জনস্বার্থে তাকে অ/ব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
আইনমন্ত্রী বলেন, তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। নিয়ম হলো সরকারি চাকরিতে থাকলে প্রতিষ্ঠান প্রধানের অনুমতি নিয়ে প্রেসের সঙ্গে কথা বলতে হ/য়। তিনি সেই শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন। তিনি তার সরকারী পদে বহল থেকে সরকার সম্পর্কে মিথ্যা কথাও বলেছেন।
এরপর সামনে আ/সে নাটকের ক্লাইম্যাক্স। ঢাকার বারিধারায় মার্কিন দূতাবাসের চারপাশে সব সময় কড়া নিরাপত্তা থাকে। এমনকি সাধারণ মানুষের চলাচলও সেখানে নিয়ন্ত্রিত থাকে। তবে এমরান তার পরিবার ও তল্পিতল্পাসহ নিয়ে দূতাবাসে প্রবেশ করেছেন বলে একাধিক গণমাধ্যম জানিয়েছে। তিনি নিজেই সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে দূতাবাসে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন। কিন্তু অনেক বুদ্ধিজীবী, পেশাজীবী ও সাধারণ মানুষ যারা সরাসরি অবস্থান নিয়েছেন বা ড. ইউনূসের পক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন তারা কোনো ভয় বা শঙ্কা ছাড়াই দেশে অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
এ প্রসঙ্গে সিনিয়র সাংবাদিক অজয়দাশ গুপ্ত বলেন, ঘটনার পর পাঁচ-ছয় দিন অতিবাহিত হলেও তার জীবনের হু/মকির মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি। সরকার বিরোধী কথা বলে অনেকেই বাংলাদেশে বসবাস করছেন, তারা মার্কিন দূতাবাসে গিয়ে আশ্রয় নিচ্ছেন না। বিশেষ ব্যারিকেড মার্কিন দূতাবাসের বাইরে ফুটপাত দখল করে আছে। সেখানে অনেক ধরনের নজরদারি রয়েছে। তাহলে কি তিনি যেটি করলেন সেটি কী সাজানো নাটক? এমন প্রশ্ন উঠবে।
গত ৪ সেপ্টেম্বর তৎকালীন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এমরান আহমেদ ভূঁইয়া অধ্যাপক ড. ইউনূসের কর্মীদের প্রতারণার মামলা নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, আমি মনে করি ডক্টর ইউনূস একজন সম্মানিত মানুষ। তার মানহানি হচ্ছে এবং এটা বিচারিক হ/য়রানি।
রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন না নিয়েই গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন এমরান। হাইকোর্ট ছুটিতে থাকায় ওই দিন আদালতে তার কোনো কাজ ছিল না। শুরু থেকেই প্রশ্ন ছিল, কিন্তু এমরান কি সেদিন মিডিয়ার সামনে এসেছিলেন শুধুমাত্র বিতর্ক সৃষ্টির জন্য নাকি কোনো দলের স্বার্থ বাঁচাতে নাটক করেছেন?
৫ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল এম এ আমিন উদ্দিন গণমাধ্যমকে বলেন, ইমরান গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার আগে কোনো অনুমতি নিয়েছেন। ইউনূসের পক্ষে বিবৃতি দেওয়ার জন্যও তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়নি। অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে খুশি করতে ইমরান এ বক্তব্য দিয়েছেন।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, মুক্তির কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তার পরিবার মার্কিন দূতাবাসে অবস্থান করে এবং গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলে প্রমাণ করে যে, এমরান কারো স্বার্থ উদ্ধারের নাটকের চরিত্র হিসেবেই কাজ করে যাচ্ছেন।
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সাবেক সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ বলেন, এমরান আহমেদের এই কর্মকাণ্ডে বিশেষ মহল জড়িত থাকতে পারে। তারা প্রায়ই এই কাজগুলো করে। এটি একটি ব্লুপ্রিন্টের অংশ। অ্যাটর্নি জেনারেল হলেও এমরান ঢুকতেন পারতেন না, যদি এটা নীলনকশার অংশ না হতো। তাকে ভেতরে ঢুকতে দে/ওয়া হতো না।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গুলশান বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, চার ঘণ্টার নাটকীয়তার পর রাতে মার্কিন দূতাবাস থেকে বেরিয়ে এমরান তার লালমাটিয়ার বাসায় যান।