এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় ওএমআর শিট ছিঁড়ে ফেলার কোনো ঘটনা ঘটেনি। অভিযোগ দায়েরকারী ছাত্রী হুমাইরা ইসলাম ছোঁয়া ডাক্তার হওয়ার জন্য তার পরিবারের অতিরিক্ত চাপের কারণে পর্যবেক্ষক কর্তৃক ওএমআর শিট ছিঁড়ে ফেলার গল্প তৈরি করেছে। স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতরের তদন্ত কমিটি তদন্তে এমন তথ্য পাওয়ার দাবি করেছে।
সোমবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে তদন্ত প্রতিবেদন তুলে ধরেন স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. টিটু মিয়া সংবাদ সম্মেলনে তদন্ত কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের কাছে সব তথ্য তুলে ধরা হয়।
তদন্ত কমিটি জানায়, অভিযোগকারী হুমাইরা ইসলাম ছোয়া ও তার বাবা-মায়ের দেওয়া জবানবন্দি পর্যালোচনায় এটা পরিষ্কার যে, শুরু থেকেই তার ওপর পরিবার ও সমাজ থেকে ডাক্তার হওয়ার চাপ ছিল। এমনকি আগের বছরও এই শিক্ষার্থী পরীক্ষায় পাস করেনি। এ বছরও তিনি পাস করেননি।
অভিযোগ প্রসঙ্গে অধ্যাপক ডা. টিটু মিয়া বলেন, সব সাক্ষ্য পর্যালোচনা ও প্রাপ্ত তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে তদন্ত কমিটি নিশ্চিত হয় যে, অভিযোগকারীর সব অভিযোগ মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়েও (টেস্ট স্কোর ২৭.২৫) বাবাকে মায়ের পরামর্শে মিথ্যা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে আরও ভালো রেজাল্ট/স্কোর করে সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির মিথ্যা প্রত্যয় ব্যক্ত করেন হুমাইরা। কিন্তু বাস্তবে পরীক্ষায় ৫৭টি প্রশ্নের উত্তর দিয়ে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পাওয়া যাবে না নিশ্চিত জেনে তার ব্যর্থতার দায় হল পরিদর্শকের উপর চাপিয়ে দেন। একই সঙ্গে ভর্তির সুযোগ লাভের আশায় এই মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক গল্প সাজান তিনি।
স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক আরও বলেন, বর্তমান সরকার ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা মন্ত্রীর সঠিক নির্দেশনায় তৃতীয় কোনো পক্ষের ষড়যন্ত্র হয়েছে কি না, তা উদঘাটনের সুপারিশ করা হচ্ছে। বিগত বছরগুলোতে সকলের আন্তরিকতা ও অক্লান্ত পরিশ্রমে স্বচ্ছ ও সুন্দর পরীক্ষা পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারেনি কেউ।
পরিবারের উদ্দেশে তিনি বলেন, অভিভাবকদের উচিত সন্তানদের ওপর এ ধরনের চাপ না দেওয়া।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন ১১ ফেব্রুয়ারি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পুরানো ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ২০২৩-২০২৪ শিক্ষাবর্ষের এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা করেন। সংবাদ সম্মেলন শেষে চলে যাওয়ার সময় একজন পরীক্ষার্থী এবং তার পরিবারের সদস্যরা সামন্ত লাল সেনের পথ আগলে ধরেন। তাদের অভিযোগ, ৯ ফেব্রুয়ারি ভর্তি পরীক্ষার সময় পরীক্ষা কেন্দ্রের একজন পরিদর্শক পরীক্ষার্থীর ওএমআর শিট ছিঁড়ে ফেলেন।
নারী শিক্ষার্থীদের কেন্দ্র ছিল রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্র (শেখ কামাল ভবন, অষ্টম তলা)। হুমাইরা বলেন, পরীক্ষায় নকল করা সন্দেহে একজন পরিদর্শক শিক্ষার্থীসহ তিন শিক্ষার্থীর ওএমআর শিট ছিঁড়ে ফেলেন। পরীক্ষার্থী আরও দাবি করেন যে, পরিদর্শক তার ভুল বুঝতে পেরে পরে তাকে আরো একটি নতুন ওএমআর শীট দেন। তিনি দাবি করেন, তখন পরীক্ষা শেষ হতে আর মাত্র পাঁচ মিনিট বাকি ছিল। অনুরোধ সত্ত্বেও পরিদর্শক তাদের পরীক্ষার সময় বাড়াননি।