গতকাল সংসদে বিদ্যুৎ নিয়ে হয়ে গেছে তুমুল আলোচনা সমলোচনা আর উত্তেজনা। বিশেষ করে বিএনপির এমপি হারুন এবং বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জড়িয়ে পড়েন বাকবিতন্ডতায়। গতকাল সংসদে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, বিদ্যুৎ খাতে তারেক রহমানের লুটপাটের হিসাব আমাদের কাছে আছে। নির্বাচন আসছে, প্রস্তুত থাকুন, আমি সব দেখাব।
তিনি বলেন, আমি জানি না কোন মুখে আপনারা কথা বলার সাহস করেন। হয়তো লজ্জা-শরম নেই আপনাদের।
মঙ্গলবার (১ নভেম্বর) জাতীয় সংসদে বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদের এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে মঙ্গলবার সংসদ অধিবেশনের শুরুতে প্রশ্নোত্তর পর্ব পর্ব অনুষ্ঠিত হয়।
বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, প্রতিমন্ত্রী অন্তত ৫০ বার বিএনপি-জামায়াত সরকারের কথা বলেছেন। যা প্রাসঙ্গিক নয়। বিএনপি সরকারের আমলে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম কত ছিল? দায়মুক্তি কেন? কেন আপনি এটি ১৫ বছর ধরে বজায় রেখেছেন? আমরা যারা বিএনপির এমপি, তারা বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে যে ভয়াবহ অব্যবস্থাপনা চলছে তা নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা করব। তুমি ভূতের মুখে রাম নামের গল্প বলো না।
তিনি বলেন, আমি আপনার কাছে পরিষ্কারভাবে জানতে চাই, বিএনপি সরকারের করা গ্যাস চুক্তি আছে কি না? সংসদে পেশ করা হবে। বিএনপি আমলে নিত্যপণ্যের দামের জবাব দাও। শুধু বিএনপি জোট সরকারের আমলেই এই ঘটনা ঘটছে, তার গল্প বলবেন না।
হারুন স্পীকারকে সংসদে জ্বালানি নিয়ে আলোচনার প্রস্তাব দেন। তিনি বলেন, বিদ্যুৎ খাতে তিনি যা করেছেন। মানুষ বিদ্যুতের জন্য হাহাকার করছে। জ্বালানি উপদেষ্টা দিনের বেলা বন্ধ এবং রাতে বিদ্যুৎ দেওয়ার কথা বলেছেন।
তিনি বলেন, এটা প্রশ্নোত্তর অধিবেশন, ৩০০ বিধির কোনো বক্তব্য নয়। এ সময় হারুনুর রশীদকে প্রশ্ন করার অনুরোধ করেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। হারুন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর কাছে জানতে চান, বিএনপি সরকারের আমলে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও নিত্যপণ্যের দাম কত ছিল?
হারুনের প্রশ্নের জবাবে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, সংসদ সদস্য (হারুন) খুবই উত্তেজিত হয়ে পড়েছেন। অনেক সত্য সহজে নিতে পারি না। সংসদেও সময় দিতে চাই। আমি সেখানে জ্বালানির কথা বলব।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমাদের কাছে নাইকো মামলার পরিমাণ প্রমাণ রয়েছে। তাদের নেতা তারেক জিয়ার বন্ধু খোলামেলা সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। আমরা তাদের দেখাব। সে সময় আমি তার (হারুনের) বক্তব্য শুনতে চাই, দেখতে চাই তিনি কী বলেন। সিদ্দিরগঞ্জ পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে চুরির পরিমাণের প্রমাণ আমাদের কাছে আছে। নথিসহ সংসদের ভিডিও স্ক্রিনে সেগুলো দেখাবো।
“তারিক রহমান খাম্বা কোম্পানির সাথে যে পরিমাণ লুটপাট করেছেন তার হিসাব আমাদের কাছে আছে। আমরা সেই তথ্য সংগ্রহ করেছি। সময় এলে সব বের করব। নির্বাচন আসছে, প্রস্তুত থাকুন। সব দেখাব। বিএনপি ছিল অন্ধকারে। জোট সরকারের আমলে ১৭ ঘণ্টা। বিদ্যুতের দামের কথা বলেন আরে, অন্ধকারে থাকার খরচের কথা বলেন,’ বলেন নসরুল হামিদ।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ক্রিকেটে বাংলাদেশ এখন চ্যাম্পিয়ন। সাফ চ্যাম্পিয়ন হয়ে বাংলাদেশ বিশ্বের কাছে উদাহরণ। আর ওনারা করেছেন দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা শেষ হয়ে যাবে যদি বক্তব্য দিতে হয় তাদের বিষয়ে। চাল, ডাল, গমের দাম কি ছিল দরকার নেই। আরে ভাই, খাবার দিতে পারলেন না। গুলি করে মানুষ হ’ত্যা’ করেছেন। আবার দাম জিজ্ঞেস করেন। ১৮ ঘণ্টা বিদ্যুৎ দিতে পারেননি। আমার এখনো খেয়াল আছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া টঙ্গিতে বিদ্যুৎ কেন্দ্র উদ্বোধন করেছেন। তিনি ঢাকায় পৌঁছাতে পারেননি, সেটা বন্ধ হয়ে গেছে।
এ দিকে তাদের দুজনের বাকবিতন্ডতার এক পর্যায়ে সরকারের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু এমপি হারুনকে বলেন তিনি যেন আর বিদ্যুৎ নিয়ে কোনো ধরণের কথা না বলেন। তিনি আরো বলেন আমি জানি না কোন মুখে কথা বলার সাহস হয় আপনার। হয়তো আপনার লজ্জা নেই।